'গেট টুগেদারে' গিয়ে লাশ হলেন স্কলাসটিকার ছাত্র অভি


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2019-01-14 10:51:34 BdST | Updated: 2025-03-16 20:23:28 BdST

বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান মিশাল হোসেন অভি (২০)। ইংরেজিমাধ্যম স্কুল স্কলাসটিকা থেকে সদ্য ‘এ লেভেল’ সম্পন্ন করেছেন। প্রায়ই বন্ধুরা মিলে বিভিন্ন স্থানে মিলিত হয়ে হই-হুল্লোড়ে মেতে থাকতেন। এবারো মোহাম্মদপুর এলাকার এক বান্ধবীর বাড়ির ছাদে এসেছিলেন তেমনই একটি গেট টুগেদার আয়োজনে।

হই-হুল্লোড়ের মধ্যেই ৯তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে যান অভি। তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, অভির আগে থেকেই উচ্চতা ভীতি ছিল। প্রাথমিক তদন্তে এটি দুর্ঘটনা মনে হলেও রহস্য উদঘাটনে অন্য বন্ধুদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

রোববার (১৩ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ২২/সি ময়ূরভিলা নামক নয়তলা বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে যান অভি। দ্রুতই তাকে স্থানীয় সিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর পুলিশ মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

অভি বাবা-মায়ের সঙ্গে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় বসবাস করতেন। তার বাবা সাইফুর রহমান একজন ব্যবসায়ী, মায়ের নাম মোনা রহমান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী ময়ূরভিলার নিচের এক দোকান মালিক জানান, হঠাৎ শব্দ শুনে মনে হলো উপর থেকে বস্তা পড়েছে। কিন্তু দোকান থেকে বের হয়ে দেখি একটা ছেলে পড়ে আছে। এতো উপর থেকে পড়লেও তার শরীরের উপরের অংশে কোন আঘাত দেখা যায়নি। পায়ের হাড় ভেঙে তালু দিয়ে বের হয়ে গেছে। তবে তেমন কোন রক্তপাত হতে দেখিনি।

বিজ্ঞাপন

ঘটনার তদন্ত সংশ্লিষ্ট মোহাম্মদপুর থানার এক কর্মকর্তা বলেন, ওই বাসার একটি ফ্ল্যাটে তাদের বান্ধবী সারার বাসা। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিসহ ৫ জন সারার বাসায় আসে। এরপর তারা ছাদে সাউন্ড সিস্টেম বাজিয়ে হই-হুল্লোড় করছিল। এর মধ্যেই ছাদ থেকে পড়ে যায় অভি।

ছাদে উপস্থিত ৬ জনের মধ্যে সারাসহ দুইজন মেয়ে। অভি ও সারা বাদে বাকি ৪ জন ‘ক্লাউড এক্সেস’ নামে আমেরিকান একটি কল সেন্টার কোম্পানিতে চাকরি করতো। ওই চারজনের রাতে ডিউটি ছিল, তারা ডিউটি শেষ করে অভিসহ এক হয়ে সারার বাসায় আসে।

ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনার ভিত্তিতে ঘটনার ওই কর্মকর্তা বলেন, সকালে ৫ বন্ধু আসার পর সারা বাসার নিচে গেইটে গিয়ে তাদের সবাইকে রিসিভ করে। এরপর তাদেরকে উপরে নিয়ে আসতে দেখা গেছে।

পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ওই ভবনের ছাদের রেলিং খুবই নিচু। তাদের মধ্যে প্রেমজনিত কোন দ্বন্দ্ব ছিল কি-না, নিজের সাহস দেখাতে সে রেলিংয়ে হাঁটছিল কি-না সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই। অর্থাৎ এটা দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকাণ্ড সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গের সামনে অভির মামা রোহান বলেন, সকাল ৮টার দিকে অভি বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এরপর থানা থেকে দুর্ঘটনার খবর দিলে আমরা হাসপাতালে আসি। এর বাইরে কোন কারণ আমাদের জানা নেই। অভির খানিকটা উচ্চতা ভীতি ছিল, তবে ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার কারণের বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই।

অভি মাদকাসক্ত ছিলেন না, জানামতে তার বন্ধুদের মধ্যে বা পারিবারিক অন্যকোন সমস্যা ছিল না বলেও জানান রোহান।

মরদেহের সুরতহাল করা মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুকুল দে জানান, উপর থেকে পড়ে যাওয়ায় তার ভেতরে ব্লিডিং হয়েছে। কোমর থেকে নিচের অংশের হাড় ভেঙে গেছে বলে মনে হয়েছে। শরীরের উপরের অংশে কোন আঘাত দেখা যায়নি। সে মাদকাসক্ত ছিল কি-না বা কোথায় কোথায় আঘাত পেয়েছে, ময়নাতদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এ বিষয়ে এখনো মামলা দায়ের করা হয়নি, তবে প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মৃত্যুঞ্জয় দে সজল বলেন, ঘটনার সময় উপস্থিত বাকি পাঁচ বন্ধুকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং তদন্তের ভিত্তিতে অভির ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।