টিফিনের টাকায় বড়াইগ্রামের শিক্ষার্থীদের ২৫ হাজার গাছ রোপণ


বড়াইগ্রাম | Published: 2019-10-04 08:05:33 BdST | Updated: 2024-05-06 22:21:34 BdST

নিজস্ব প্রতিবেদক: জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার প্রত্যেয়ে প্রতিবছরের মতো এবারো অংশ নিয়েছে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার শিক্ষার্থীরা। এরই অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা নিজেদের এক দিনের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে ২৫ হাজার গাছের চারা রোপণ করেছে।

এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার বনপাড়া সেন্ট যোসেফস স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে চারা বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর উপজেলার সবকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে চারা সংগ্রহ করে নিজেদের বাড়িতে রোপণ করে। এ নিয়ে গত তিন বছরে বড়াইগ্রামের শিক্ষার্থীরা দেড় লাখ গাছের চারা রোপণ করল। এরমধ্যে ২০১৭ সালে ৮০ হাজার এবং গত বছর ৪৫ হাজার গাছের চারা রোপণ করেছে এই উপজেলার শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে শুধু মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছে। পূজার ছুটির কারণে এদিন অংশ নিতে পারেনি উপজেলার প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। ছুটি শেষ হলে তারা অংশ নিবে।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার পারভেজ বলেন, দুই বছর আগে এখানকার শিক্ষার্থীরা অক্সিজেন উৎপাদনের এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। যা এবারো অব্যাহত রেখেছে তারা। টিফিনে না খেয়ে এখানকার শিক্ষার্থীরা গাছের চারা কিনে বিরল দৃষ্টান্ত রেখে চলেছে। আজ তাদের ছোট্ট মনে দেশপ্রেমের বীজ বোপন হলো।

এ সময় সেন্ট যোসেফস স্কুল এ- কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার শংকর ডমিনিক বলেন, শিক্ষার্থীদের মনে আজ যে উচ্ছাস দেখলাম তাতে আমি অভিভূত। আগামী বছরও এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখারও অঙ্গীকার করেন তিনি।

.

২০১৫ সাল থেকে রাজশাহীর বাঘার উদ্যমী তরুণ জুবায়ের আল মাহ্মুদ ‘এক দিনের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে গাছ রোপণ’ আন্দোলন শুরু করেন। গত ১২ জানুয়ারি প্রথম আলোর ছুটির দিনে ক্রোড়পত্রে ‘এক জুবায়ের লাখো গাছ’ শিরোনামে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে গত ৫ বছরে এই আন্দোলনে সারা দেশের ৭৫০টি স্কুলের লাখো শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর বাঘা-চারঘাট, পাবনার ঈশ্বরদী, নাটোরের বড়াইগ্রাম, সিলেটের বিয়ানীবাজার এবং খুলনার দিঘলীয়া উপজেলার শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০১ এই পাঁচ বছরে প্রায় পৌনে চার লাখ গাছ রোপণ করা হলো।

এই সবুজায়ন আন্দোলন সম্পর্কে মুঠোফোনে জুবায়ের আল মাহ্মুদ জানান, ‘প্রতি বছর স্কুলগুলোয় বিছিন্নভাবে বৃক্ষরোপণ উৎসব হতো। কিন্তু এবছর থেকে আমরা চেষ্টা করছি গুচ্ছ পদ্ধতিতে বৃক্ষরোপণের। এতে প্রতিটি স্কুলে এক ধরণের উৎসবের আমেজ তৈরি হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বড়াইগ্রামের শিক্ষার্থীদের মতো বাংলাদেশের সব শিক্ষার্থীকে নিয়ে যদি বছরের নির্দিষ্ট একটি দিনে বৃক্ষরোপণ করা যায়, তাহলে খুব সহজে বাংলাদেশ সবুজে পরিণত হবে। আর এই আন্দোলন যদি জাতিসংঘের উদ্যোগে সারা পৃথিবীর শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে খুব সহজে সারা পৃথিবী বিশাল এক অরণ্যে পরিণত হবে।’ জাতীয়ভাবে বৃক্ষরোপণের জন্য ‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ দিবস’ ঘোষণারও দাবী জানান তিনি।

এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট উপজেলার শিক্ষার্থীরা নিজেদের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে ১ লাখ ৫ হাজার গাছের চারা রোপণ করে।