স্কুলে ভর্তি হলেন গলি বয় রানা


Dhaka | Published: 2020-01-11 21:16:28 BdST | Updated: 2024-05-07 01:51:03 BdST

জনপ্রিয় ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদির জন্মদিনে গলি বয় রানাকে স্কুলে ভর্তি করলেন তাবিব মাহমুদ ও তৌহিদ আফ্রিদি।

৭ জানুয়ারি ঢাকার একটি প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুপম ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে তাকে ভর্তি করা হয়।

গলি বয় রানার শিক্ষার সকল খরচ বহনের ঘোষণা দিয়েছেন ইউটিউবের তৌহিদ আফ্রিদি।

গানে গানে স্কুলে যাওয়ার আকুতি জানানোর পর নতুন বছরে স্কুলে ভর্তি হচ্ছেন ফুল বিক্রেতা থেকে সংগীতশিল্পী হয়ে উঠা ‘গলি বয়’ রানা মৃধা।

চলতি বছরের মাঝামাঝির দিকে ‘ঢাকাইয়া গলিবয়’ শিরোনামে র‌্যাপ ঘরানার একটি গানে কণ্ঠ দিয়ে রাতারাতি তারকা বনে যান রাজধানীর কামরাঙ্গীচর এলাকার ৮ নম্বর গলির বাসিন্দা রানা।

প্রথম গানেই ছন্দে ছন্দে জানিয়েছিলেন নিজের স্বপ্নের কথা, ‘আমার অনেক ইচ্ছা ছিল ইশকুলে যামু।’

জানুয়ারিতে রানাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসান; তার হাত ধরেই সংগীতে উত্থান ঘটেছে রানার।

মাহমুদ হাসান বলেন, “আমরা কয়েকটি স্কুলে কথা বলছি। সেখান থেকেই একটি স্কুলে জানুয়ারি মাসে ভর্তি করানো হয় রানাকে। রানা এখন পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে চায়।”

মাহমুদের ভাষ্যমতে, কামরাঙ্গীচরের একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর আর আর্থিক সংকটের কারণে পড়াশোনা চালানো সম্ভব হয়নি। এবার বেশ কয়েকজন রানার পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন; তাদের সঙ্গেও শিগগিরই বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন।

স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখেন রানা।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরফ থেকে তাদের ক্যামেরা উপহার দেওয়া হয়েছে।

‘ঢাকাইয়া গলিবয়’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ভাইরাল’ হওয়ার পর তার পরিচিতিও বেড়েছে; বেড়েছে কাজের ব্যস্ততা। বিভিন্ন কনসার্টে দেখা যায় রানাকে। ২৫ ডিসেম্বর তাদের নতুন গান ‘হিপহপ পুলিশ টু’ প্রকাশ হয়।

.

আড়ালের কারিগর

দিনের প্রায় পুরোটা সময়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কাটে রানার। বেশ চটপটে, বুদ্ধিদীপ্ত এবং সপ্রতিভ। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মুহূর্তেই ভাব জমিয়ে ফেলতে পারে। এমনই একদিন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনে একজনকে বাইক স্টার্ট দিতে দেখে এগিয়ে আসে। আবদার করে বসে বাইকে ওঠার। সপ্রতিভ রানাকে ভালো লাগে বাইকের মালিক মাহমুদ হাসানের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদ। নিয়মিত চর্চা করেন র‌্যাপ সংগীতের। বেশ কিছুদিন ধরেই খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন এমন কোনো পথশিশু, যাকে দিয়ে পথশিশুদের জীবনসংগ্রামের গল্প তুলে ধরবেন গানে গানে। সহজাত কৌতূহলে রানাকে তুলে নিলেন বাইকে। মাহমুদ হাসান তাকে গান গাইতে বলার সঙ্গে সঙ্গেই চলন্ত বাইকের পেছনে বসেই গান ধরল রানা। ভরাট গলা, তাল-লয়-সুরের টনটনে বোধ।

মাহমুদ হাসান বলেন, ‘ওর গানটা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম, আমি এত দিন যাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম পেয়ে গেছি তাকে। তারপর ওর জীবনের গল্প শুনে অল্প সময়ের মধ্যেই লিখে ফেললাম এই গান। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে গানটা কণ্ঠে তুলে আমাকে আরও একবার চমকে দিল রানা। এরপর রেকর্ডিং, সংগীতায়োজন, ভিডিও নির্মাণ সব মিলিয়ে সময় লাগল সাকল্যে সাত দিন। যদিও এর আগেই রানাকে দিয়ে গানটি খালি গলায় গাইয়ে একজন ভিডিও করে ফেসবুকে প্রকাশ করলে হুলুস্থুল পড়ে যায় তখনই। এরপর আসে আমাদের গানটি।’

শুধু পেছনের একজন কারিগর হিসেবেই নয়, একজন দায়িত্বশীল অভিভাবকের মতো রানাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন মাহমুদ হাসান। ভাইরাল–যুগের স্বল্প স্থায়িত্বের তারকাখ্যাতি নয়, তিনি বিশ্বাস করেন, রানা বাংলা গানের শ্রোতাদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন দখল করবে কোনো একদিন।