গলাকাটা ফি আদায়ের অভিযোগ উদয়ন স্কুলের বিরুদ্ধে


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2018-01-08 04:46:55 BdST | Updated: 2025-03-16 20:03:24 BdST

‘আগে ১২ হাজার টাকা জমা দিয়ে রসিদ দেখান, তারপর স্কুল বদলির সার্টিফিকেট (টিসি) পাবেন।’

রাজধানীর উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রশাসনিক শাখার কর্মকর্তার মুখে এমন কথা শুনে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক স্কুলছাত্রীর বাবা।

বিজ্ঞাপন

কী বলবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না। শুধু অস্ফূট স্বরে বলে উঠলেন, ‘গতকাল যে ১২শ’ টাকা জমা দিলেই টিসি ইস্যু করা হবে বলে জানিয়েছিলেন?’

এবার ওই কর্মকর্তা স্কুলের অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি একই কথা (টিসি নিতে হলে নতুন বছরের ভর্তি ফি ও এক মাসের বেতন পরিশোধ করতে হবে) জানান বলে অভিযোগ করেন ওই ছাত্রীর বাবা।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর বাবা আজ (রোববার) জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, তার মেয়ে গত বছর সপ্তম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। সম্প্রতি ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে রাজধানীর অন্যতম সেরা স্কুল ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ভর্তির সুযোগ পায়। মেয়ে ভালো স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় তারা ভীষণ আনন্দিত হলেও এখন টিসি নিতে ১২ হাজার টাকা লাগবে শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয় তার। দুই স্কুলে ভর্তির টাকা তার মতো ছাপোষা চাকরিজীবীর পক্ষে দেয়া সম্ভব না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উদয়ন স্কুলের যেসব শিক্ষার্থী রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলসহ বিভিন্ন স্কুলে পরীক্ষা দিয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে এমন অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক টিসি নিতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন। শ্রেণিভেদে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পরিশোধ না করা হলে টিসি দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় উদয়ন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, স্কুল বদলিতে কোনো আইন না থাকায় ইচ্ছেমতো অর্থ আদায় করছে রাজধানীর নামি-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। তাই অভিভাবকদের বাধ্য হয়েই গলাকাটা অর্থ পরিশোধ করে টিসি (ছাড়পত্র) নিতে হচ্ছে। দ্বিগুণ অর্থ পরিশোধের কারণে ভালো স্কুলে সন্তান ভর্তির সুযোগ পাওয়ার আনন্দ মলিন হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।

এ বিষয়ে উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ উম্মে সালমার কাছে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, একজন শিক্ষার্থী দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার জন্য স্কুলে ভর্তি হয়। কেউ যদি তার আগে চলে যায় সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ কারণে যারা টিসি নিতে চায় তাদের নতুন ক্লাসে ভর্তি, এক মাসের বেতন ও ফি দিয়ে টিসি নিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, শুধু উদয়ন স্কুলে নয়, এ নিয়ম পার্শ্ববর্তী সব স্কুলে। এসব স্কুলের সঙ্গে সমন্বয় করে টিসি সংক্রান্ত বিষয়ে এমন নিয়ম করা হয়েছে। তবে জিম্মি করে অর্থ আদায় করা অনৈতিক কাজ।

এদিকে এটি এক ধরনের ব্যবসা বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক (বিদ্যালয়) অধ্যাপক এটিএম মইনুল হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, স্কুলে টিসি সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো আইন না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করছে।

তিনি বলেন, অষ্টম, নবম ও দ্শম শ্রেণিতে বদলির জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এছাড়া নিম্নস্তরে বদলি-সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়ে থাকে। এ কারণে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে অভিভাবকরা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ জানালে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও তিনি জানান।

 

বিডিবিএস