হাইকোর্টের রায়ে সপদে ফিরলেন কেবি কলেজের অধ্যক্ষ


এম এ লতিফ | Published: 2024-09-07 17:30:11 BdST | Updated: 2024-09-17 00:55:19 BdST

বাকৃবি প্রতিনিধি: দীর্ঘ আট বছরের আইনী লড়াই শেষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে অবস্থিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (কেবি) কলেজের অধ্যক্ষ পদ ফিরে পেয়েছেন ড. মো. আতাউর রহমান। গত ২৯ আগস্ট উচ্চ আদালত আতাউর রহমানকে অধ্যক্ষ পদ ফিরিয়ে দিতে আদেশ প্রদান করে রায় দেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত সোমবার (৩সেপ্টেম্বর) তিনি পুনরায় কেবি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।

জানা যায়, আতাউর রহমান কেবি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে ২০০৬ সালে যোগদান করেন। এরপর থেকে শিক্ষার মানোন্নয়নসহ সার্বিক অগ্রগতিতে বিশেষ দায়িত্বশীলতার পরিচয়ও দিয়ে আসছিলেন তিনি। এ দিকে ২০১৫ সালে কলেজটির গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হোসেন। চেয়ারম্যান নিযুক্ত হওয়ার পর থেকেই তিনি কলেজের অধ্যক্ষের কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ করতে থাকেন বলে অভিযোগ উঠে। একই সাথে কলেজের অবকাঠামো নির্মাণকাজে দুর্নীতির বিরোধিতা করায় অধ্যক্ষের সাথে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আস্তে আস্তে দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৬ সালে শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই আতাউর রহমানকে বরখাস্ত করেন ড. সাখাওয়াত। এরপর থেকে বন্ধ হয়ে যায় তার বেতন ভাতাও।

২০১৬ সালে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় ওই অধ্যক্ষকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ময়মনসিংহ জজ কোর্টে মামলা করলে ২০১৮ সালে আদালত বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় কোর্ট। এর কিছুদিন পর প্রত্যাহারের আদেশের বিপক্ষে আপিল করে তাকে বরখাস্ত (পূর্ণাঙ্গ) করা হয়। পরে ওই অধ্যক্ষ হাইকোর্টে রিট করে দীর্ঘ ছয় বছর আইনী লড়াইয়ের পর গত ২৯ আগস্ট উচ্চ আদালত আতাউর রহমানকে অধ্যক্ষ পদ ফিরিয়ে দিতে আদেশ প্রদান করে রায় দেন। ফলে দীর্ঘ আট বছর পর আবারও অধ্যক্ষ হিসেবে কেবি কলেজে যোগদান করেন তিনি।

এবিষয়ে অধ্যক্ষ ড. মো. আতাউর রহমান বলেন, কোন প্রকার লবিং ছাড়াই আমি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অধ্যক্ষের চাকুরি পেয়েছিলাম। অনেক সংগ্রাম ও কষ্টের পর কলেজটিকেে একটি সুন্দর ও শিক্ষার উপযোগী পরিবেশে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলাম। তৎকালীন ঢাকা বোর্ডের অধীনে সেরা দশের মধ্যেও নিয়ে এসেছিলাম। বুয়েট, মেডিকেলসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও সাফল্য অর্জিত হয়। কিন্তু ড. সাখাওয়াত গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হওয়ার পর কলেজের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থকে তিনি প্রাধান্য দিতে থাকেন। স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা যে ছিলো ঠিকাদারের। তার সাথে আঁতাত করে কলেজের অবকাঠামো কাজের দুর্নীতি, জোরপূর্বক অর্থ আত্মসাৎ করেন। গভর্নিং মিটিংয়ের সম্মানী ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করেন। প্রতি মাসে নাস্তা বাবদ ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা বিল করে কলেজ থেকে টাকা নিতেন। এমনকি কলেজের টাকায় জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী উদযাপন করতেন। এজন্য কলেজের মাসিক বেতন দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়। পাশাপাশি ভর্তি ফি ও সেশন চার্জও অস্বাভাবিকহারে বাড়াতে একক সিদ্ধান্ত নিতেন ড. সাখাওয়াত।

ড. সাখাওয়াতের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় তিনি চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে প্রশ্ন মডারেশন বাবদ অর্থ আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। অথচ যে গভর্নিং মিটিংয়ে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়, সেই মিটিং ডাকার এখতিয়ার গভর্নিং চেয়ারম্যানের নয় বরং অধ্যক্ষের বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, তাঁর মামলাটি উচ্চ আদালতে দীর্ঘ সময় নিষ্পত্তি না হওয়ার জন্য সাবেক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের সাবেক কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ আছে। একই সাথে তাঁর স্ত্রীকেও (কেবি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক) মিথ্যা অভিযোগ সাময়িক বরখাস্ত ও বেতন বন্ধ করা হয়েছিল। একপর্যায়ে ২০১৯ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত স্ত্রীকে অর্থাভাবে সঠিক চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয় বলেও জানান তিনি।

অধ্যক্ষের পদ ফিরে পাওয়ার পর ড. আতাউর রহমান বলেন, সত্যের জয় হয়েছে, সারাজীবন সততার সাথে কাজ করেছি। আমি আইনের প্রতি আস্থাশীল ছিলাম, তাই কোথাও তদবির না করে আইনের মাধ্যমে অধ্যক্ষের পদ ফিরে পেয়েছি। আমি চেষ্টা করবো যতদিন আছি কলেজকে আগের পর্যায়ে নিয়ে যেতে।

গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান পদত্যাগ করার কারণে জরুরি প্রয়োজন সাপেক্ষে গভর্নিং বডির সিনিয়র সদস্য হিসেবে গভার্নিং বডির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ। তিনি জানান, আমার একাধিক মিটিং করেছি। তার রায়ের বিপক্ষে দুজনের আপিল করার সুযোগ ছিলো। কিন্তু তারা আপিল করতে রাজী হননি। পরে নিয়ম অনুযায়ী তিনি কলেজের গভর্নিং বডির মাধ্যমে কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।