ঢাবিতে সেকেন্ড টাইম চালুর দাবিতে ভিসি ও ডিনদের স্মারকলিপি


DU Correspondent | Published: 2023-12-03 16:59:18 BdST | Updated: 2024-05-03 01:03:04 BdST

পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার (সেকেন্ড টাইম) ভর্তি পরীক্ষা চালুর দাবিতে উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন এবং সিন্ডিকেট মেম্বারদের স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

আজ রবিবার (৩ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষার্থী ব্যানারে ঢাবিতে সেকেন্ড টাইম ভর্তিচ্ছু একদল শিক্ষার্থী স্মারকলিপি প্রদান করে।

জানতে চাইলে স্মারকলিপি প্রদানকারীদের একজন পারভেজ মোশাররফ বলেন, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা কয়েকবার দেওয়া যায়। কিন্তু দুঃখজনক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একবার সুযোগ দেয়। এতে আমরা মনে করি অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বাদ পড়ে যায়। দেশের স্বার্থে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা চালু করা উচিত।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিভিন্ন অনুষদের ডিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বারদের স্মারকলিপি দিয়েছি। সবাই অনেক আগ্রহ নিয়ে আমাদের কথা শুনেছে। এতে সমর্থন রয়েছে বলে তারা জানিয়েছে। এখন ভিসি স্যার যদি রাজি হন তাহলে কোনো জটিলতা দেখছি না। আমরা আশা রাখি ঢাবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ আছে, বাংলাদেশ খুব দ্রুতই উন্নত বিশ্বের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখনো তাদের প্রতিষ্ঠানে উপর সীমাবদ্ধতার তালা ঝুলিয়ে রেখেছে। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে যেখানে উচ্চশিক্ষাকে সহজকরণ ও মেধাবীদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন প্রয়োজন, সেখানে ঢাবির মতো স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ শিক্ষায় মেধাবীদের অংশগ্রহণকে শুধু কঠিনই নয়; অসম্ভব করে তুলছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা কেন চালু করা উচিত বিষয়ে স্মারকলিপিতে উল্লেখ আছে, একজন মেধাবী শিক্ষার্থী যদি অসুস্থতার কারণে বা পারিবারিক কিংবা পরিবেশগত কোনো সমস্যার কারণে প্রথমবার পরীক্ষা দিয়ে চান্স না পায়, তাহলে তার মানে এটা দাঁড়ায় না যে, সে মেধাহীন হয়ে গেলা। অবশ্যই সে মেধাবী। পাশাপাশি সে রাষ্ট্রের মূল্যবান সম্পদ। সেকেন্ড টাইম না রাখলে এ সকল মেধাবীরা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ পাবে না এবং রাষ্ট্রের উন্নয়নেও হয়ত বা ভূমিকা রাখতে পারবে না।

এছাড়াও একবার না পারিলে দেখো শতবার বহুল প্রচলিত এই প্রবাদটিই প্রমাণ করে যে, একবার সুযোগ নিয়ে কোনো মেধাবীকে যাচাই করা যায় না। স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম রাখা যদি খারাপ হয়, তাহলে সেই খারাপ কাজের সুযোগ নিয়ে ভারত সহ বিশ্বের অনেক দেশ আজ উন্নতির চরম শিখরে। আর আমরা ভালো কাজের দোহাই দিয়ে (সেকেন্ড টাইম বন্ধ রেখে) এখনো তাদের পিছনেই পড়ে রইলাম। ব্যাপারটা দুঃখজনক।

সেকেন্ড টাইম চালু করলে আরো শত শত মেধাবী শিক্ষার্থী ঢাবিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে উল্লেখ করে বলা হয়, এতে দেশে ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, গবেষক সংখ্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পাবে। আর এই মেধাবীরাই আমাদের উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিবে।

এছাড়াও মেডিকেল সহ দেশের সকল স্বায়ত্তশাসিত ও অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম চালু আছে। তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন থাকবে না। এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও সেকেন্ড টাইম রাখা উচিত।

উল্লেখ্য ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সাধারণ সভা শেষে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছিলেন, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় শুধু ওই বছর এইচএসসিতে উত্তীর্ণরা অংশ নিতে পারবে। পুরাতনরা পারবে না।

এ সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি আরও বলেছিলেন, দুইবার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিলে অসম প্রতিযোগিতা হয়। কারণ দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিলে দেখা যায়, একজন শিক্ষার্থী এক বছর ধরে ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়ে আর অন্যজন উচ্চ মাধ্যমিকে পাস করেই ভর্তি পরীক্ষায় বসে।

অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন আরও বলেছিলেন, আবার অনেক শিক্ষার্থী প্রথমবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে পুনরায় ভর্তি বাতিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। ফলে যেখানে প্রথমবার ভর্তি হয়েছে, সেখানকার আসন ফাঁকা হয়ে যায়।

জানা যায়, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার (সেকেন্ড টাইম) ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ বন্ধ রয়েছে। এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিচ্ছুরা তখনও আন্দোলন করেছিল। এছাড়া এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ২৬ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর অভিভাবক আদালতে রিটও করেছিলেন। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্তে অনঢ় রয়েছে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভর্তি প্রক্রিয়ায় প্রতিবারই এ বিষয়টি বেশ আলোচিত হয়ে থাকে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনেও নামেন। তারই ধারাবাহিতকায় এবারও ভর্তিচ্ছুরা সেকেন্ড টাইম এর সুযোগ দাবি করছেন।