১৭ টি চমৎকার কাজ যা তোমাকে করে তুলবে ব্যতিক্রম!


Dhaka | Published: 2020-02-24 08:58:02 BdST | Updated: 2024-05-20 09:44:07 BdST

ভালো মানুষ কিংবা মানুষের মতো মানুষ হওয়ার প্রত্যাশা নিয়েই আমরা বেড়ে উঠি। কিন্তু, দিনশেষে প্রকৃত ভালো মানুষ হয়ে ওঠা কি হয় শেষ পর্যন্ত? আজ তোমাদের সাথে শেয়ার করবো এমন কিছু পরামর্শ যা তোমাকে ভালো মানুষ হয়ে ওঠার পথে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

ফিডব্যাক দেওয়া হোক বার্গারে - আমরা বাঙ্গালীরা এখনও সমালোচনা করতে ঠিকভাবে শিখে উঠতে পারিনি। আমাদের কাছে সমালোচনা মানেই নেতিবাচকতা আর গালিগালাজ। কাউকে যখন কোনো কাজের ফিডব্যাক দিতে বলা হয় তখনও আমরা এই নেতিবাচক স্বভাব থেকে বেরিয়ে আসতে পারি না। গালি দেওয়া, নেতিবাচক মন্তব্য করা পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজগুলোর একটি। মিনিটের মধ্যে ১০-২০ টা গালি শিখে ফেলা যায়। মনে রেখো, গালি দেওয়া কিংবা খারাপ কথা বলায় কোনো বীরত্ব নেই। গঠনমূলক সমালোচনা করতে শেখো। ফিডব্যাক দেওয়ার সময় প্রথমে ভালো কথা বলো, উৎসাহ দাও, প্রশংসা করো। এরপর ফিডব্যাক আর সাজেশন দাও। তারপর আবারো ভালো কথা বলো! ফিডব্যাক দেওয়ার এই পদ্ধতির নামই হলো, “ফিডব্যাক বার্গার”!

বাবা-মায়ের কথা শোনো মনোযোগ দিয়ে - অতিব্যস্ত যুগের মহাব্যস্ত প্রজন্ম আমরা। সারাক্ষণ মুঠোফোনের মুঠোয় কিংবা ডেস্কটপের চৌকো মনিটরে আটকে আছে আমাদের জগত। পড়াশোনা হোক কিংবা কাজকর্ম সবই ওই ফোন আর ল্যাপটপেই। আমরা যখন কাজ করি আর তখন যদি আমাদের বাবা কিংবা মা আমাদের কোনো কাজে ডাকে তখন আমরা সাধারণত ফোন বা ডেস্কটপের দিক থেকে চোখ না সড়িয়েই উত্তর দিই। এটা করা যাবে না। তাঁদের ডাকে সাড়াই হোক কিংবা তাঁদের প্রশ্নের উত্তরই হোক সেটা যেন দেওয়া হয় তাঁদের দিকে তাকিয়েই!

পড়ে ফেলা বইগুলো পড়তে দাও - একটা বই তুমি সর্বোচ্চ কতবার পড়ো? পড়া হয়ে গেছে এমন বইগুলো অন্যদের পড়তে দাও। খামাখা শেলফে ফেলে রেখে সেগুলোতে ধূলা জমানোর তো দরকার নেই। হতেও তো পারে যে বইটা পড়ে তোমার জীবন বদলে গেছে সেটা অন্য আরও শখানেক মানুষের জীবনও বদলে দিতে পারে! আর যারা আমার লেখা কোনো বই কিনে পড়েছো, তাঁদের প্রতি আমার অনুরোধ পড়া হয়ে গেলে বইগুলোকে শেলফে রেখে ধুলোয় আবৃত করো না। অন্যদের পড়তে দাও।

বন্ধুদের বিপদের কথা শোনো -

“আমি জানতাম এটা হবে।”, “বলেছিলাম না।”, “তখন তো শুনিস নাই আমার কথা।”

^ যখন আমাদের কোনো বন্ধু বিপদে পড়ে তখন আমরা তাকে সবার আগে এই কথাগুলোই বলি। এই কথাগুলো আর কখনও বলবে না। যখন তোমার কোনো বন্ধু বিপদে পড়ে কিংবা খারাপ সময়ের মুখোমুখি হয় তখন সে চায় বন্ধু হিসেবে তুমি তার পাশে থাকো, তার কষ্টের কথাগুলো শোনো। আর যদি তুমি সেটা করো তাহলে অনেকটা হালকা বোধ করবে।

দেয়ালে দেয়ালে মানবতা -

“আপনার অপ্রয়োজনীয় জিনিস এখানে রেখে যান” “আপনার প্রয়োজনীয় জিনিস এখান থেকে নিয়ে যান”

^ আমাদের দেশের কয়েকটি পরিচিত দেয়ালে এই বার্তা লেখা। “মানবতার দেয়াল” নামের এই কনসেপ্টটার প্রচলন কয়েক বছর আগেও ছিলো না আমাদের দেশে। অথচ এখন এই দেয়াল আমাদের অনেকের কাছেই বেশ পরিচিত। এখানে মানুষ নিজেদের অপ্রয়োজনীয় কাপড়গুলো রেখে যায়। আর যাদের প্রয়োজন তারা এই কাপড়গুলো নিয়ে যায়।

পশুপাখির ওপর মানবিক হও -

আমরা অনেক সময় রাস্তাঘাটের কুকুর-বিড়ালদের ওপর অমানবিক আচরণ করি। তাদেরকে ঢিল মারি, গরম পানি ছুঁড়ে মারি, কান-লেজ কেটে দেওয়ার মতো অমানবিক কাজগুলোও করি। এক শ্রেণির মানুষ এসব করে পৈশাচিক আনন্দ পায়। এই কুকুর-বিড়ালগুলো তো আমাদের কোনো ক্ষতি করে না। তাহলে কেন এই নির্মমতা? আমরা ওদের উপকার না করতে পারি অন্তত কষ্ট না দিই।

তোমার অধীনস্তদের প্রতি অমায়িক হও -

একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব নিয়ে ধারণা পেতে হলে সেই মানুষটা তাঁর অধীনস্তদের সাথে কীভাবে ব্যবহার করেন সেটা জানা উচিৎ সবার আগে। এমন কথা প্রচলিত আছে। তাই সবসময় চেষ্টা করবে তোমার চেয়ে যারা বয়সে ছোট, পদমর্যাদায় ছোট তাদের সাথে সর্বোত্তম ব্যবহার করতে। কারণ, তাঁদের সাথে তুমি যেমন ব্যবহার করো তুমি মানুষটা ভেতর থেকে প্রকৃতপক্ষে তেমন।

প্রশংসা করতে কিপ্টেমি করো না -

আমাদের অধিকাংশেরই প্রশংসা করায় ঘোর আপত্তি। কেউ যখন কোনো কাজে ভালো করে তখন তাকে “Good Job!”, “Well Done.” এই কথাগুলো সচরাচর আমরা বলি না। সবসময় সব ভালো কিছুর প্রশংসা করবে। তোমার আশেপাশের সবাইকে তাদের ভালো কাজ, ভালো অভ্যাস, ভালো দিকের জন্যে প্রশংসা করবে, উৎসাহিত করবে। এতে করে দেখবে তারা যেমন অনুপ্রাণিত হবে তেমনি তোমার ভালো কাজের জন্যেও তোমাকে উৎসাহিত করবে।

তাই, প্রশংসা করার ব্যাপারে আজ থেকে কোনো কিপ্টেমি নয়!

যারা শহরে নতুন তাদের সাহায্য করো -

গ্রাম বা মফস্বল থেকে যাদুর শহরে যারা প্রথমবারের মতো আসে তারা অনেক বেশি অসহায় বোধ করে। এই শহরে পা ফেলার পর থেকেই তাঁদের অস্বস্তির শুরু। বাস-স্টেশন, রেলস্টেশন কিংবা লঞ্চঘাটে এরকম কোনো পরিবার দেখলে তাদেরকে তাদের গন্তব্যে পৌছতে সাহায্য করো। প্রয়োজনে একটা সিএনজি করে দিও। দেখবে তারা তোমার এই উপকার মনে রেখেছে।

বন্ধুকে পড়াশোনাতে সাহায্য করো -

ক্লাসে যদি কোনো বন্ধুকে পড়া বোঝা নিয়ে সমস্যায় পড়তে দেখো তাহলে তাকে পড়া বুঝতে সাহায্য করো। এতে করে তোমার নিজের পড়াটাও ঝালাই হবে আর সেই সাথে তোমার বন্ধু পরীক্ষায় পাস করে উতরে যাবে তখন ও তোমার কথা মনে রাখবে। আর তোমার নিজেরও ভালো লাগবে।

Coffee on the wall -

আমাদের করা কিছু ছোট্ট ভালো কাজের সুবাদে হাসি ফুটবে কোনো মানুষের মুখে এই স্বপ্নটা আমাদের অনেকেরই। "Coffee on the wall'' এর ধারণাটা অনেকটা সেরকমই। নামটার মতো বিষয়টাও বেশ চমৎকার। ধারণাটা অনেকটা এরকম, রেস্টুরেন্টে নিজের খাবারের বিলের পাশাপাশি অন্য আরেকজনের বিলটাও পরিশোধ করে দিয়ে যাওয়া। যাতে করে কোনো সুবিধাবঞ্চিত মানুষ রেস্টুরেন্ট থেকে ফ্রিতে খাবার পেতে পারে। আমাদের দেশে প্রচলন না থাকলেও বাইরের দেশগুলোতে এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এই ব্যাপারটা। প্রচলন না থাকুক, একটা কাজ তো করাই যায়। একজন পথশিশুকে নিয়ে একদিন রেস্টুরেন্টে গিয়ে তাকে খাওয়াও না। দেখবে ওর হাসিমুখটা তোমার দিনটাকে সুন্দর করে দিয়েছে। কিংবা আরেকটা কাজ করতে পারো। খাওয়া শেষে একটা এক্সট্রা ডেজার্ট আইটেম আলাদা করে অর্ডার করে সেটা তোমার ওয়েটারকে দিতে পারো। দেখবে বিনিময়ে পাওয়া হাসিটুকু তোমাকে একটা অনাবিল প্রশান্তি দেবে।

নতুন কাউকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দাও -

অফিসে কিংবা ক্লাসে যখন নতুন কেউ আসে তখন সেই মানুষটা বেশ অস্বস্তিতে পড়ে। কারণ আশেপাশের পরিবেশ, আশেপাশের মানুষ সবটাই নতুন আর অচেনা। এই ধরণের মানুষকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দাও। দেখবে মানুষটা স্বস্তি বোধ করবে। আর আজীবন তোমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।

সময়কে গুরুত্ব দাও -

মনে করো তুমি কোনো কাজের জন্যে লাইনে দাঁড়িয়ে আছো। তোমার পেছনের কারও হয়তো খুব ছোট্ট একটা কাজ যেটাতে খুব একটা সময় লাগবে না তাকে এগিয়ে যেতে দাও। দেখবে এই মানুষটার আর অপেক্ষা করতে হলো না বলে তিনি তোমার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন।

নিজের কোনো শিক্ষককে ফোন করো, ধন্যবাদ দাও -

আমাদের সবার জীবনেই মা-বাবার পর শিক্ষকের ভূমিকা অনেক বেশি। তোমার জীবনের যে কোনো ধাপের হতে পারে স্কুল বা কলেজ কিংবা ইউনিভার্সিটির এমন কোনো একজন শিক্ষক যার কোনো একটা উপদেশ তোমার জীবনে অনেক কাজে এসেছে তাঁকে ফোন করে কৃতজ্ঞতা জানাও! দেখবে, তাঁরা তোমাকে কখনও ভুলবেন না। তোমার প্রতি অনেক খুশি হবেন।

মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াও -

যদি তোমার আশেপাশের কাউকে পড়াশোনা বা অন্য কোনো কাজ নিয়ে সমস্যায় পড়তে দেখো তাহলে তার পাশে দাঁড়াও। তাকে সাহায্য করো। আর হ্যাঁ, কাউকে কোনো সাজেশন, পরামর্শ দেওয়ার পর সেই কাজটা শেষ করে উঠতে না পারলে কিছুদিন পরে হলেও ওই মানুষটাকে একটা ফোন দিও। জিজ্ঞেস করো, যে সে সেই সমস্যাটা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিল কি না। দেখবে এজন্যে এই মানুষটা তোমাকে অনেকদিন মনে রাখবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সামাজিক হও -

নামটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হলেও আমরা বড্ড বেশিই অসামাজিক এই জগতটায়। আজকাল বড় বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছি কেউ কেউ। বাজে কথা, গুজব, গালিগালাজ এর মতো যাচ্ছেতাই জিনিসপত্র দিয়ে নোংরা করে ফেলছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সমাজটাকে। কাউকে বাজে কথা, গালি দেবার আগে আমরা একটা বারের জন্যেও ভাবছি না যে মানুষটা এগুলো পড়বে তাঁর কেমন লাগবে।

গালি দেওয়াতে কোনো বীরত্ব নেই। একটা মনিটরের পেছনে বসে গালি দেওয়ায় নিজের কোনো সাহসিকতা প্রকাশ পায় না। এটা ভুলে গেলে চলবে না। তাই, এই অভ্যাসগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

ধন্যবাদ দিতে কার্পণ্য নয় -

আমাদের আশেপাশের অনেক পরিচিতজনেরা, সিনিয়রেরা প্রায়ই আমাদের অনেক উপদেশ, পরামর্শ দিয়ে থাকে। আর সেগুলো কখনও কখনও আমাদের বেশ কাজেও লাগে। বিশ্বাস করো কারও পরামর্শ যখন কোনো মানুষের জীবনে অর্থবহ ভূমিকা রাখে তখন সেই মানুষটার একটা অন্যরকম অনুভূতি হয়! এরকম ক্ষেত্রে যার পরামর্শ বা উপদেশ কাজে লেগেছে সেই মানুষটাকে একটা ফোন করো। কিংবা দেখা করো তাঁর সাথে। তাঁকে ধন্যবাদ দাও, কৃতজ্ঞতা জানাও।

মানুষকে খুশি করা মোটেও খুব কঠিন কোনো কাজ নয়। মানুষের প্রিয় হয়ে উঠতেও অনেক কাঠ-খড় পোড়ানোর দরকার হয় না। ছোট্ট একটু হাসিমাখা ধন্যবাদ কিংবা বিপদের দিনটায় কাঁধে হাত রেখে পাশে থাকা মুহূর্তগুলোই মানুষকে খুশি করার জন্যে যথেষ্ট।

লেখাটি নেভার স্টপ লার্নিং | (বেস্ট সেলার | বইমেলা ২০১৮) - আয়মান সাদিক থেকে নেয়া