কেউ যেন শিবির না করে, বোঝাও: ছাত্রলীগকে হানিফ


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2018-01-05 05:18:25 BdST | Updated: 2024-05-19 03:48:54 BdST

শিক্ষার্থীরা কেউ যেন ইসলামী ছাত্রশিবির না করে, তা বোঝাতে ছাত্রলীগকে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।

বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রামে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের আয়োজনে মুসলিম ইন্সটিটিউট হলের প্রাঙ্গণে এই সমাবেশ হয়।

হানিফ বলেন, “যারা ছাত্রশিবির করে, তারা কী কারণে ছাত্রশিবির করে? যুদ্ধাপরাধের কারণে জামায়াতে ইসলামীর বহু নেতার বিচার ও ফাঁসি হয়েছে।

“১৯৭১ এ তারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে হত্যা, নির্যাতন করেছিল, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিল। স্বাধীনতার পর এই বাংলাদেশে বসবাস করে, রাজনীতি করে- এখনও তারা পাকিস্তানের সৈনিক। জামায়াতে ইসলামী পরিচালিত হয় পাকিস্তান ও আইএস এর নির্দেশে। সেই দলের নেতৃত্বে কোনো ছাত্র সমাজ রাজনীতি করতে পারে না।

“এই কথা যারা ছাত্রশিবির করে, তাদের কাছে তোমরা তুলে ধর। কোন কারণে তারা ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করে।”

জামায়াতের নবীনদের দলটি ছাড়ার পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “জামায়াতের যাদের বয়স ৫০ এর নিচে, এরা কেন দায়ভার (যুদ্ধাপরাধ) কাঁধে নেবে। তাদের অনুরোধ পদত্যাগ করে চলে আসুন। প্রগতিশীল দলে যোগ দিন, দেশের কাজ করুন। জামায়াতের রাজনীতি দেশের জনগণ দেখতে চায় না।”

বক্তব্য দেওয়ার সময় উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের স্লোগানের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে হানিফ বলেন, “এখানে কারা স্লোগান দিচ্ছে। আমি কী বলছি, তা শুনবে, না কি স্লোগান শুনতে আসছি।”

উপস্থিত ছাত্রলীগকর্মীদের মধ্যে শৃঙ্খলার অভাব দেখে হতাশা প্রকাশ করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।

সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও শৃঙ্খলার উপরে জোর দেন।
তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের যদি ছাত্রত্ব না থাকে, শিক্ষা-দীক্ষা-জ্ঞান অর্জনের পাশে না থাকে, শৃঙ্খলাবোধে না থাকে, তাহলে ছাত্রলীগ টিকবে না। এটা স্মরণে রাখতে হবে।

“ছাত্রলীগ যেনতেন সংগঠন নয়। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের নিজের হাতে গড়া সংগঠন। সেই আদর্শকে মাথায় রেখে এগুতে হবে। শৃঙ্খলা ও পরিমিতিবোধ আনতে হবে।”

নিজের সদ্যপ্রয়াত বাবার স্মৃতিচারণ করে নওফেল বলেন, “আমার বাবা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী আমাকে বলেছিলেন- ‘আমরা এই রাষ্ট্রের পাইলিং শ্রমিক ছিলাম, অত্যন্ত কঠিন এবং ময়লা কাজ। মাঠে নেমে তা আমরা করেছি, ত্রিশ লক্ষ মানুষের রক্তে ভিত্তিটা করে দিয়েছি। আমাদের শিক্ষা-দীক্ষা যতটুকু ছিল তা দিয়ে একটা পাসপোর্ট দিয়ে গেছি, তোমাদের কাজ হচ্ছে বিল্ডিং বানিয়ে তার ভেতর পরিচর্যা করা’।”

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী সভায় বলেন, “ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের সংগঠন ছাত্রলীগ। আপনাদের ত্যাগের উপর আওয়ামী লীগ নির্ভর করে। এমন কোনো কাজ করবনে না, যাতে সংবাদপত্রে খারাপ শিরোনাম হয়।”

সভায় আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বক্তব্য রাখেন।

নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের এই সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখার কথা থাকলেও তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দেননি।

সুদীপ্ত, দিয়াজ, নাসিম হত্যার বিচার দাবি

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে খুন হওয়া তিন নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস, দিয়াজ ইরফান চৌধুরী ও নাসিম আহমেদ সোহেলের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান নগর ছাত্রলীগ নেতারা।

নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, “আজ কেন আমাদের ভাইদের হত্যা করা হচ্ছে? হত্যাকারী কারা? আমরা তাদের গ্রেপ্তার দেখতে চাই। দিয়াজ, সুদীপ্ত ও সোহেল হত্যার বিচার দাবি করছি।”


সভাপতির বক্তব্যে নগর কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু বলেন, সুদীপ্তর খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আজও তারা গ্রেপ্তার হয়নি।

“কার ক্ষমতা বলে তারা গ্রেপ্তার হল না? আমরা জানতে চাই, দলের ভেতরে জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ঘাঁপটি মেরে থাকা সেই হায়েনা কারা?”

ইমু বলেন, গত বছর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীকে প্রহসনের মধ্য দিয়ে হত্যা করা হয়। এখনও তার বিচার হয়নি।

“আজকে তাই প্রশ্ন জাগে, আমরা ছাত্রলীগ জননেত্রী শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হয়ে কাজ করছি। আমাদেরকে কারা সরাতে চায়? প্রশ্ন জাগে ছাত্রলীগকে কারা হত্যার পাঁয়তারা করছে?”

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সংসদ সদস্যের দিকে ইঙ্গিত করে ইমু বলেন, “আমাদের মনে আছে সেদিনের কোন হায়েনারা ছাত্রলীগের উপর গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিল। আজকে তারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে সাংসদের দায়িত্ব পালন করছে।

“যারা জাতির জনকের শরীর থেকে মাথা আলাদা করে বিভিন্ন জায়গায় কার্টুন বানিয়েছে তাদের মনোনয়নের যে ইচ্ছা, সে ইচ্ছাকে নসাৎ করতে হবে।”

বিডিনিউজ২৪

বিডিবিএস