পাবিপ্রবিতে ঘুষ বাণিজ্য: উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বাসভবন ঘেরাও


টাইমস ডেস্ক | Published: 2019-11-03 06:24:00 BdST | Updated: 2024-05-18 03:30:27 BdST

ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম রোস্তম আলীসহ প্রশাসনের সকল কর্মকর্তার পদত্যাগ দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (০২ নভেম্বর) সকাল থেকে এই দাবিতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন। বিকেল ৪টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাসভবনে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন উপাচার্য। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করতে ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য, সকল অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে উপাচার্য বৈঠকে বসেছেন বলে জানা গেছে।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, সম্প্রতি ফাঁস হওয়া পাবিপ্রবি উপাচার্য ড. এম রোস্তম আলীর কাছে চাকরি প্রার্থীর ঘুষ ফেরতের অডিও তদন্তসহ ১২ দফা দাবি পূরণে গত পাঁচ দিন ধরে আন্দোলন করছেন তারা। দাবি পূরণে বেঁধে দেয়া সময়সীমা পার হলেও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় উপাচার্যসহ প্রশাসনের পদত্যাগের দাবিতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেছেন তারা। দাবি পূরণ না হওয়া আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন তারা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সদস্য মাহমুদ কামাল তুহিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেবল দুর্নীতিগ্রস্তই নয়, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে একাধিক বার আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। শনিবার সকাল থেকে আমরা সকল ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে উপাচার্যসহ প্রশাসনের সকল কর্মকর্তার পদত্যাগ দাবি করছি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ধারাবাহিক কর্মসূচি চলবে।

শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, ঝিনাইদহে সরকারি উন্নয়নকাজে রডের বদলে বাঁশ দিয়ে অবকাঠামো নির্মাণকারী বিতর্কিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম লিমিটেডকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ হওয়া ৪৮০ কোটি টাকা খরচের পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উন্নয়ন নয় বাজেটের টাকা লুটপাট করতেই তাদের নিয়োগ দিয়েছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু ভিসি স্যারই নন, দায়িত্বপ্রাপ্তরা যে যার মতো করে অপকর্ম করে যাচ্ছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। মাত্র ২৮ জোড়া বেঞ্চ ক্রয়ে খরচ দেখানো হয়েছে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা, গাড়ি ক্রয়ের পূর্বেই ২৬ লক্ষ টাকার অগ্রিম জ্বালানি ক্রয় করা হয়েছে। যার রসিদ বিল ভাউচার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফেসবুক পেজে রয়েছে। আমরা সমস্যায় পড়লে ভিসি স্যারকে ক্যাম্পাসে পাওয়া যায় না। বিভিন্ন সময়ে প্রক্টর বা ছাত্র উপদেষ্টা স্যারদের কাছে গিয়েও কোন প্রকার সুরাহা পাওয়া যায় না। আমরা বাধ্য হয়েই এই দুর্নীতিবাজ ভিসিসহ কর্মকর্তাদের পদত্যাগ দাবি করছি।

এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ভিসির বাসভবন ঘেরাওয়ের ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পরেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, কয়েকটি বিভাগের চেয়ারম্যান ও ভিসি অনুসারী শিক্ষকরা।

গণমাধ্যমকর্মীরা ভিসির বাসভবনে আটকে পড়া উপাচার্য, ডিন শিক্ষকদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বারবার চেষ্টা করেও পারেনি।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ অক্টোবর পাবিপ্রবির ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ না হয়ে উপাচার্যের নিকট ঘুষ হিসেবে দেওয়া টাকা ফেরত চাওয়ার একটি অডিও বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে ওই অডিওতে মন্তব্য করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন শিক্ষককে শোকজ নোটিশ দেয়। এরপর গত ২৮ অক্টোবর থেকে শিক্ষার্থীরা ১২ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করলেও তাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্ণপাত না করায় শনিবার থেকে তারা উপাচার্য ও কর্মকর্তাদের পদত্যাগের আন্দোলন শুরু করেছে।

এসএম/ ০২ নভেম্বর ২০১৯