গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি: সামিয়া-মারজানের সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেটে


ঢাবি টাইমস | Published: 2019-11-27 19:15:29 BdST | Updated: 2024-05-19 14:29:20 BdST

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সামিয়া রহমান ও অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের বিরুদ্ধে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির একজন সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বুধবার বিশ^বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী তাদের শাস্তি হতে পারে বলে সিন্ডিকেট সূত্র জানিয়েছে।

২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের (ঢাবি) সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটে দু’টি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এর মধ্যে প্রথমটি সামিয়া রহমান ও সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের বিরুদ্ধে এবং অপরটি গঠিত হয় ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন, একই বিভাগের দুই অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও দম্পতি রুহুল আমিন ও নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে।

এদের মধ্যে সামিয়া রহমান ও সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য ও তদন্তের সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা। অন্যদিকে, বদরুজ্জামান ভূঁইয়াসহ অন্য দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাদের মধ্যে বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চনকে এবারের সিন্ডিকেটে প্রফেসর হিসেবে মনোনীত করা হবে বলে জানা গেছে।

এর আগে গত সপ্তাহে সিলেকশন কমিটি তাকে প্রফেসর করার সুপারিশ করে। কাঞ্চনের বিভাগের অন্য দুই শিক্ষক এখন পিএইচডি করার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।

সিন্ডিকেট সূত্র জানায়, বিদেশি একটি জার্নালের পক্ষ থেকে তাদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির ওই অভিযোগ আসে। শিকাগো জার্নালের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ওই অভিযোগ পাঠানো হয়।

জার্নালটির অভিযোগে বলা হয়Ñ পৃথিবী বিখ্যাত দার্শনিক মিশেল ফুকোর লেখা ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ শীর্ষক আর্টিকেলটি ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস (১৯৮২) প্রকাশ করে। সেই প্রবন্ধের পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা নকল করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই শিক্ষকের গবেষণা প্রবন্ধে। ঢাবির তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের উপস্থিতিতে ওই গবেষণা গ্রন্থ দু’টির প্রকাশনা উৎসব হয়।

এ দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য প্রফেসর সাদেকা হালিম বলেন, ‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গবেষণা জালিয়াতির বিষয়ে আনীত অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। কী ধরনের শাস্তি হতে পারে সেটা সিন্ডিকেট সদস্যরাই ভালো বলতে পারবেন।’

সামিয়া রহমান ও সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের বিরুদ্ধে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘এগুলো সিন্ডিকেটের গোপন বিষয়। সিন্ডিকেটে ওঠার আগে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে না।’ অপরাধ প্রমাণিত হলে কী ধরনের শাস্তি হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তির বিষয়ে সিন্ডিকেট বিবেচনা করবে।’

সিন্ডিকেট সূত্র আরও জানায়, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক রুহুল আমিন ও নুসরাত জাহান এবং বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ এনে সিনিয়র একজন শিক্ষক ভিসিকে চিঠি দেন। অন্যদিকে বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন, রুহুল আমিন ও নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ উঠলেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মতো সত্যতা মেলেনি।’

চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে এর আগে ঢাবিতে বহিষ্কারসহ পদাবনতি হওয়ার নজির রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানের সাথে থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিন্ডিকেট বৈঠকের আগে মন্তব্য করেননি।