৪৯ বছরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ৫ সমাবর্তন!


JU | Published: 2019-12-15 22:37:48 BdST | Updated: 2024-05-18 17:58:25 BdST

কালো গাউনের অধরা স্বপ্ন বুকে নিয়েই বিদায় নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে দেশের একমাত্র আবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৪৯ বছরে সমাবর্তন হয়েছে মাত্র পাঁচবার। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে রয়েছে হতাশা। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই শিক্ষাজীবনে এই আনুষ্ঠানিকতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তথ্য বলছে, প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সমাবর্তন হয় ১৯৯৭ সালে। এরপর ২০০১ সালে দ্বিতীয়, ২০০৬ সালে তৃতীয় ও ২০১০ সালে চতুর্থ সমাবর্তন হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম সমাবর্তন।

২০১৫ সালের সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পেরেছিলেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪০ থেকে ৪৩তম এই চারটি ব্যাচের প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ করেছে। এছাড়া ৪৪তম ব্যাচের অধিকাংশ বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্নাতক পরীক্ষা শেষ করেছে। বড় অঙ্কের এই শিক্ষার্থীরা এখন গায়ে কালো গাউন জড়িয়ে আকাশে ক্যাপ উড়িয়ে সমাবর্তন উদযাপনের অপেক্ষায় রয়েছেন।

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর ঢাবিতে ৫২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। গত ৫ ডিসেম্বর হয়েছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন। গত ৩০ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১তম ও ১ ডিসেম্বর রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে পঞ্চম সমাবর্তন। এছাড়া ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ সমাবর্তন আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমাবর্তনের উৎসবে জাবি শিক্ষার্থীদের হাত কামড়িয়ে সমালোচনা আর ক্ষোভ প্রকাশ করা ছাড়া অন্য উপায় অজানা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে ওঠা ফেসবুকের গ্রুপগুলোতে ক্ষোভের মাত্রা অতীতের চেয়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে। শিক্ষার্থীদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবরই শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে স্বার্থের রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এজন্যই তারা শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি সমাবর্তন নিয়ে কোনো চিন্তাই করেন না।

জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘সমাবর্তন পাওয়াটা সবার স্বপ্ন। কারণ সমাবর্তনের আগে মূল সনদপত্র দেয়া হয় না। তাছাড়া সবাই চায় আচার্যের কাছ থেকে সনদ নিতে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত সমাবর্তন হচ্ছে না। এটা মূলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাব। তারা চাইলেই সমাবর্তন আয়োজন করতে পারে।’

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক বলেন, ‘নিয়মিতভাবে সমাবর্তন না হওয়া প্রশাসনিক ব্যর্থতা। আর তাদের সদিচ্ছারও অভাব রয়েছে।’

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম পাপ্পু বলেন, ‘সমাবর্তন আয়োজনে সদিচ্ছাই নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা চিন্তা না করে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকায় সমাবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ভাবার সময় হয়ে উঠছে না তাদের। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি চিন্তা করে সমাবর্তনসহ শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট সকল একাডেমিক বিষয় নিয়মিতভাবে সম্পন্ন করার আহ্বান জানাই।’

তবে উপাচার্যের সঙ্গে বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে আলোচনা করলেই তিনি ‘আগামী বছরের’ মুলা ঝুলিয়ে দেন। তিনি গত তিন বছর ধরে ‘আগামী বছর করব’ বলে আশ্বাস দিলেও সেই আগামী বছরের দেখা আর পায়নি শিক্ষার্থীরা।

তিনবার আশ্বাস দিয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের কোনো উদ্যোগ নেননি। এবার তিনি কী বলবেন- এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, ‘সমাবর্তন প্রতি বছর হতে হবে এরকম লিখিত কোনো কিছু আমি কোথাও দেখিনি। তবে সমাবর্তন প্রতি বছর হওয়া উচিত। এটা একটা উৎসব। আগে কেন নিয়মিত হয়নি সে বিষয়টি আমি বলতে পারব না। তবে আমরা এটা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছি। এটা (সমাবর্তন) আমাদের চিন্তায় আছে।’