বিজয়ের প্রথম প্রহরে টিএসসিতে বর্ণিল আলোকবাজি


ঢাবি টাইমস | Published: 2019-12-16 17:53:01 BdST | Updated: 2024-05-18 15:26:49 BdST

মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই ৪৯ বছরে পা দিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁকে ভাটির এই জনপদের অনেক নৃপতি স্বাধীনভাবে রাজ্য শাসন করলেও স্বাধীন আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে এটিই বাংলাদেশের দীর্ঘতম যাত্রা। যে যাত্রার সূচনা হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর।

স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মদিন উদযাপনকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সেজেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকেই ভিড় বাড়াতে থাকেন উৎসবমুখর মানুষেরা। বিজয়ের রঙ ছড়িয়ে দিতে বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরেই পুরো এলাকায় উদ্ভাসিত হয় আতশবাজির আলোকছটায়!

এ সময় ৪৯টি আতশবাজি পোড়ানো ছাড়াও আগুন খেলা ও কনসার্টের আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর আগে, ১১টা ৪৫ মিনিটে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের দেশ গড়ার শপথবাক্যও পাঠ করানো হয়। তারপর শুরু হয় কনসার্ট।

বিজয় দিবসের কনসার্ট মাতিয়েছে জনপ্রিয় গানের দল আভাস। একই মঞ্চে গান পরিবেশন করেছেন দেশের অনেকগুলো আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড।

উৎসব শেষে ধানমন্ডির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী রাতুল চৌধুরী বলেন, বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে উৎসবে শামিল হতে প্রতি বছরই এখানে আসি। মনে হয় এই বুঝি স্বাধীন হল বাংলাদেশ। এখানকার আয়োজনগুলো অনেক বেশী গোছানো ও সুন্দর। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঐতিহাসিক একটি স্থান। এজন্যই প্রতিবছর এখানে আসি। প্রতি বছরের মতো এবারও এখানে চমৎকারভাবে বিজয় উৎসব হয়েছে।

ঢাবি শিক্ষার্থী জহুরুল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় উৎসবে অংশ নিতে না পারলে বিজয়ানন্দ পূর্ণ হয় না। ক্লাস-পরীক্ষা না থাকলেও এই সময়টায় তাই ক্যাম্পাসেই থাকি। আজকে সারারাত জেগে আছি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে মানুষের মনে কেমন অনুভূতি কাজ করছিল সেটি বোঝার চেষ্টা করছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় উৎসবে গান পরিবেশন শেষে আভাস ব্যান্ডের ভোকাল তানযীর তুহিন বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গান গাইতে পারা অনেক সম্মানের। সেটিও আবার বিজয় উৎসবে! আমি অনেক খুশি ও আনন্দিত। এমন স্বাধীনভাবে গান গাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এ দেশের সূর্য সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে কৃতজ্ঞতা।

উল্লেখ করা যায় যে, এবার বিজয় দিবস উদযাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, ডাকসু, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও টিএসসিভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো একসঙ্গে কাজ করেছে।

বিজয়ের আগের দিন (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকেই টিএসসিতে ফানুস উড়িয়ে উৎসব শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র সংসদের সদস্যরা। এরপর সাধারণ শিক্ষার্থীরা শুরু করেন আগুন খেলা। রাহাতুল জান্নাত নামের এক শিক্ষার্থী জানান, টিএসসি প্রাঙ্গনে ফানুস উড়ানো ও আগুন খেলার আয়োজন নব্বই দশক থেকে হয়ে আসছে। সাধারণত চলচ্চিত্র সংসদের সদস্যরা এই আয়োজনটি করে থাকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি প্রতি বছরের মতো এবারও সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। এবারের আলোকচিত্র প্রদর্শনীর শিরোনাম হচ্ছে ‘সাহসের জয়’।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিজয় কর্মসূচির মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর (সোমবার) সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে উপাচার্য ভবনসহ প্রধান প্রধান ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। পরে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জমায়েত হয়ে সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণের জন্য যাত্রা করবেন।

এছাড়া বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ছায়ানটের যৌথ উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে বিজয় দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন হল মসজিদে জোহরের পর শহীদদের আত্মার মাগফেরাত এবং দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নতি কামনা করে বিশেষ দোয়ার আয়োজন হবে। বিজয় দিবসে অন্য উপাসনালয়েও শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা ও দেশের সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হবে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) আয়োজন করছে বিশেষ বইমেলার। এছাড়া ডাকসুর সহযোগিতায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) উদ্যোগে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে কনসার্ট। যেখানে জেমস, চিরকুট, মমতাজসহ অন্য শিল্পীরা গান করবেন। কনসার্টটি দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে।