ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন


ঢাবি টাইমস | Published: 2020-06-25 20:22:14 BdST | Updated: 2024-05-18 10:39:15 BdST

স্বামীর বাড়িতে নির্যাতনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। "নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ" ব্যানারে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।

এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাবির ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন , ডাকসুর সদ্য সাবেক নেতৃবৃন্দ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমাদের নারীরা এখনো বাংলাদেশের রাজধানী  হোক, প্রত্যন্ত অঞ্চলে হোক , মাদ্রাসায় হোক কিংবা হাইস্কুলে হোক নিরাপদ নয় । নারীর জন্য সম্মানজনক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমাদেরকে আরো সচেষ্ট থাকতে হবে।

মানববন্ধনের সঞ্চালনা করেন ডাকসুর সদ্য সাবেক সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইন্স সোসাইটির সভাপতি রাইসা নাসের। তিনি বলেন , এ হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে আমাদের নারীরা নির্যাতিত থেকেই যাবে । তারা সামনে এগুনোর সাহস পাবেনা । সম্মানজনক জায়গায় যেতে পারবে না। তারা পুরুষ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হতেই থাকবে।

মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদার, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাহরিমা তানজিন অর্নি এবং অন্যান্যরা।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী সুমাইয়া খাতুনকে হত্যার অভিযোগে তার স্বামী মোস্তাক হোসাইনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

 সুমাইয়া ও তার স্বামী মুস্তাক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান শামসুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে তার শাশুড়ি সৈয়দা মালেক ও তার মেয়ে জাকিয়া ইয়াসমিন জুথিকে (ননদ) গ্রেফতার করে পুলিশ।

নিহত সুমাইয়ার শ্বশুর জাকির হোসেন এখনও পলাতক রয়েছে। গত সোমবার (২২ জুন) রাতে নিহতের মা নুজহাত সুলতানা বাদী হয়ে জামাইসহ পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এতে চারজনকে আসামি করা হয়।

ঢাবি ছাত্রী সুমাইয়া নাটোর সদরের হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকার মোস্তাক হোসাইনের স্ত্রী। সোমবার (২২ জুন) সকালে তাকে হত্যার ঘটনা ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের এ শিক্ষার্থী মাস্টার্স পরীক্ষা শেষে ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি বিসিএস ও সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।

সুমাইয়ার বাবার বাড়ির লোকজন জানান, সোমবার সকালে সুমাইয়ার শ্বশুর জাকির হোসেন ফোন করে সুমাইয়ার মা নুজহাতকে বলেন, তাঁর মেয়ে অসুস্থ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে এসে দেখে যেতে। তখন পরিবারের লোকজন সবাই মিলে হাসপাতালে গিয়ে তার নিথর মরদেহ দেখতে পায়। এ সময় সুমাইয়ার স্বামী মোস্তাক বা শ্বশুরবাড়ির কোনো সদস্যকে সেখানে দেখা যায়নি।

মানববন্ধন

এ সময় তাদের সন্দেহ হলে তারা ঘটনাটি সদর থানা পুলিশকে জানায়। পুলিশ এসে মরদেহটির সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। পুলিশ জানায়, সুমাইয়ার দেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার পরিবারের লোকজন মামলা দায়ের করলেই তদন্ত শেষে বলা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা। পুলিশ তদন্তের জন্য সুমাইয়ার শ্বশুরবাড়ি হরিশপুরের বাগানবাড়ি এলাকায় গেলেও সেখানে গিয়ে পরিবারের কোনো সদস্যকে পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ।

সুমাইয়ার চাচা মোহাম্মদ আলী জানান, ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল পরিণয় সূত্রে মোস্তাক হোসাইনের সাথে সুমাইয়ার বিয়ে হয়। সুমাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করে বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন এতে বাঁধা দেয়। তারা সুমাইয়ার পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে চায় এবং বাড়িতে ঘর-গৃহস্থালির কাজে মনোযোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সুমাইয়া স্বপ্ন সে বিসিএস ক্যাডার হবে। তাই সে থেমে না থেকে তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়।