উত্তালের পরে ইবিতে শুরু নিয়োগ বোর্ড


Shakib Aslam | Published: 2024-02-06 17:56:00 BdST | Updated: 2024-10-09 16:48:35 BdST

তুমুল লঙ্কাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ইমাম নিয়োগ বোর্ডের লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০ টায় নিয়োগ বোর্ড শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিকেল সাড়ে তিনটায় উপাচার্যের বাসভবনে এ পরীক্ষা আরম্ভ হয়। এসময় ১২ জন চাকরিপ্রার্থীকে ঢুকতে দেখা যায়। জানা যায়, লিখিত পরিক্ষা শেষে ৭ জন উত্তীর্ণ হন।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, এ নিয়োগ বোর্ডকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-কর্মকর্তারা দুগ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। শিক্ষকদের একপক্ষ নিয়োগ স্থগিতের দাবিতে এবং অপরপক্ষ ও ছাত্রলীগ সম্মিলিত হয়ে নিয়োগ বোর্ড চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন। উপাচার্যের কার্যালয়ে বোর্ড বন্ধের দাবি নিয়ে যাওয়া শিক্ষকদের সঙ্গে বোর্ড চালু রাখার দাবি নিয়ে যাওয়া ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় শিক্ষকরা উপাচার্যের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এদিকে সকাল ১০ টার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কার্যালয়, মেইন গেইট, প্রশাসন ভবন এবং ভিসির বাস ভবনের সামনে দফায় দফায় এসব ঘটনা ঘটে। এতে পক্ষে বিপক্ষে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বক্তব্য তুলে ধরেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তারা।

এদিন সকাল থেকে উপাচার্যের কার্যলের সামনে একে একে জড়ো হতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, কর্মকর্তার সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিট, ছাত্রলীগের বর্তমান নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে ইতিপূর্বে উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়ায় নিয়োগ বোর্ড স্থগিত রাখার পক্ষে ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির দাবি অনুযায়ী, উপাচার্যের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটি তাকে নির্দোষ হিসেবে রায় দাওয়া পর্যন্ত তারাও প্রচার্যকে সকল নিয়োগ বোর্ড বন্ধ রাখার পক্ষে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু অনুরোধ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম পদে নিয়োগ বোর্ড দেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর শেখ আব্দুস সালাম। তদন্ত কমিটির কাজ চলমান থাকার মধ্যেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তা সমিতির নেতৃবৃন্দ।

এদিন সকালে নিয়োগ বোর্ড আপাতত স্থগিত রাখার দাবি জানাতে উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ। তাদের কথোপকথনের একপর্যায়ে হুড়মুড়িয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করে ইবিতে দীর্ঘদিন বিভিন্ন দপ্তরে চুক্তিভিত্তিক কর্মরত সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ ও কর্মকর্তা সমিতির সদস্যরা। তারা একপর্যায়ে ভিসির বিপক্ষে বিভিন্ন স্লোগান ও উপস্থিত শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও লাঞ্চিত করে। একই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। উপাচার্যের কার্যালয়ে তুমুল হট্টগোলের একপর্যায়ে অপদস্ত হয়ে, গালাগাল ও লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে শাপলা ফোরাম, বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শিক্ষক সমিতির শিক্ষকবৃন্দ কার্যালয় থেকে বেরিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে মানববন্ধনে অংশ নেন।

এসময় ইউজিসির তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ বন্ধ রাখা, বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত অন্যান্য নিয়োগ বন্ধ রাখা, প্লানিং কমিটির সুপারিশ মোতাবেক বিশেষজ্ঞ সদস্য নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত সকল শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রাখা, মধ্যে প্রচারিত সকল দুর্নীতির তদন্ত দ্রুততময় শেষ করা সহ নানা দাবী তুলে ধরেন শিক্ষকরা।

এসময় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ যারা ইতিমধ্যে শিক্ষাজীবন শেষ করেছে, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ এ বিশ্ববিদ্যালয় চাকরির দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের দাবি, সঠিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা যদি যোগ্য হিসেবে প্রতীয়মান হয়, প্রশাসনের যদি মনে হয় যে তারা যোগ্য তবে তারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেতে চায়। তবে এক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ বিপক্ষে দাঁড়ানোর মত কোন বিষয় আছে বলে আমার মনে হয় না।

ঘটনাস্থলে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, এই মুহূর্তে দেখলাম নিচে মাইক বাঁধিয়ে এক ধরনের বক্তব্য, কর্মকাণ্ড হয়েছে। এক পর্যায়ে ওখান থেকে একটা টিম ভিসি অফিসে দাবি নিয়ে আসছে। বিষয়টা হচ্ছে মানুষের দাবি-দাওয়া থাকতে পারে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা চাই যে কেউ অফিসে ঢুকার আগে পিএস'র সাথে কথা বলে বা অনুমতি নিয়ে ঢুকুক। কিন্তু পর্যায়ক্রমে না ঢুকে প্রথমে কর্মচারী-কর্মকর্তা, এরই মাঝে আদর্শিক শিক্ষক গ্রুপ, পরক্ষণেই ছাত্রলীগ ঢুকে পড়েছে। আমি জানি না পিএস'র সাথে অনুমতি নিয়েছে কিনা। একটু ডেকোরামের মাধ্যমে একটা গ্রুপ শেষ হলে অন্য গ্রুপ আসবে এভাবে তো শৃঙ্খলা থাকে। আমার প্রথম পরিচয় শিক্ষক, দ্বিতীয়ত আমি দায়িত্বশীল ব্যক্তি। সবার প্রতি এটাই অনুরোধ থাকবে।

বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ইমামের মতো একটি পদ নিয়ে এমন হয়েছে, এটি অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। আমি নিজেই এখানে শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারী ছিলাম। আমি দেখেছি, এখানে যারা এসেছে তাদের অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেছে। তারা আমাদের এখানে উপস্থিত সম্মানিত শিক্ষকদের সম্মানহানি করেছে।

ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলিনা নাসরীন বলেন, যেহেতু নিয়োগ নিয়ে একটি বিষয় তদন্তাধীন রয়েছে তাই আমরা বলেছিলাম যে তদন্ত প্রতিবেদন ইতিবাচক না হওয়া পর্যন্ত আপনি নিয়োগে যাবেন না। আর যদি নিয়োগে আপনি নির্দোষ প্রমাণিত হন বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক নিয়োগের মত ভাল একটি কাজ দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। এই সামান্য কথাটি আমরা বলা শেষ করতে পারেনি কিন্তু অনেক সন্তান সমতুল্য শিক্ষার্থী, অছাত্র বা বহিরাগতদের আমাদের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ভাবে দাঁড় করানো হয়েছে, আমাদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন পদ পদবীতে থাকলেও নিয়ম মেনে সেখানে যাই, কিন্তু এরকম একটা মিছিল কিভাবে সেখানে প্রবেশ করল, কারা নেতৃত্বে ছিল, কারা তাদের সাপোর্ট দিয়েছে, তা বের করার প্রয়োজন।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, যারা আজকের এই কাল্পনিক ঘটনা ঘটিয়েছে আমি মনে করি তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া উচিৎ যারা জাতীয় প্রোগ্রামে তছনছ, কম্পিউটার এইসব বিষয় নিয়ে আপনারা তোহ জানেন , এসবের তদন্ত হওয়া উচিৎ। ভুতের মুখে রাম রাম।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘আমি কোনো ধরনের নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে কখনোই জড়িত নই। এসব অভিযোগের সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি আমার সততা নিয়ে এসব অভিযোগ মোকাবিলা করতে চাই।