'আমার পাহাড়ে চোখ দিলে, তোমার মুরগীর গলা চেপে ধরবো'


ঢাকা | Published: 2024-09-04 16:18:02 BdST | Updated: 2024-09-17 01:03:39 BdST

পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুম্মল্যান্ড বানাতে ভারতীয় মদদে উপজাতিদের ‘আদিবাসী’ বলে জোর প্রচারণা চলছে। তাদের ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি আদায়ের জন্য উসকানি দেওয়া হচ্ছে। অথচ পাহাড়ের উপজাতিরা কেউ আদিবাসী নয়, তারা অভিবাসী। এছাড়া, এই এলাকা অস্থিতিশীল করে খ্রিস্টান অধ্যুষিত দক্ষিণ সুদান বা পূর্ব তিমুরের মতো আলাদা রাষ্ট্র তৈরি করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি' নামে এক প্ল্যাটফর্ম।

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ (সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শিক্ষার্থী সমাজ)-এর ব্যানারে এক প্রতিবাদী সমাবেশে এমন মন্তব্য করেন শিক্ষার্থীরা।

‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি' প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মুহম্মদ জিয়াউল হক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুম্মল্যান্ড বানাতে ভারতীয় মদদে উপজাতিদের ‘আদিবাসী’ বলে জোর প্রচারণা চলছে। উপজাতিদের উসকানি দেওয়া হচ্ছে ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি আদায়ের জন্য। অথচ পাহাড়ের উপজাতিরা কেউ আদিবাসী নয়, তারা অভিবাসী। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রয়োজনে ভারত, মায়ানমার ও তিব্বত থেকে বাংলাদেশে অভিবাসন করে এসেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দখলদার (সেটেলার) যারা দস্যুবৃত্তি করতে করতে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে জোর করে বাঙালিদের ভূমিচ্যুত করে দখলদারিত্ব চালিয়েছে। আবার কেউ বা আশপাশের অঞ্চল থেকে নিপীড়নের শিকার হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের এই উভয় শ্রেণিই বাংলাদেশের আদিম কিংবা প্রকৃত অধিবাসী নয়।

তিনি বলেন, তাদের ‘আদিবাসী’ বলে প্রচার করা মানে একটি ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক সত্যকে অস্বীকার করা; যে প্রচারণার পেছনে ভারত, মিশনারি ও বিভিন্ন দেশি-বিদেশি এনজিওর মদদ রয়েছে।

কারণ আদিবাসী স্বীকৃতি আদায় করতে পারলে আইএলও কনভেনশন কিংবা জাতিসংঘের ২০০৭ সালের কনভেনশন অনুযায়ী ‘রাইট টু সেলফ ডিটারমিনেশন’ বা স্বায়ত্তশাসন, আলাদা জাতীয়তা, আলাদা ভূমির মালিকানা ও সর্বশেষ স্বাধীনতার দাবিকে লেজিটিমেসি বা আইনগত বৈধতা দেওয়ার পথ খুলে যাবে। অথচ বাংলাদেশের উপজাতিরা কেউ-ই আদিবাসী নয়।

কাজেই উপজাতিদের ‘আদিবাসী’ দাবি করা কিংবা সম্বোধন করা মানে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করা, যা অবশ্যই রাষ্ট্রদ্রোহিতা। বাংলাদেশের কেউ যদি এমন প্রচারণায় অংশ নেয়, তবে সে অবশ্যই রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধে অপরাধী হবে, তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।

প্ল্যাটফর্মটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহম্মদ মুরসালীন বলেন, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো রাজার শাসন চলতে পারে না। পাহাড়ে জমি ক্রয় করতে গেলে চাকমা, বোমাং ও মং রাজাকে খাজনা দিতে হয়। এক বাংলাদেশে দুই নিয়ম কেন? মুহম্মদ মুরসালীন পাহাড়ে কথিত রাজাদের খাজনা দেওয়া বন্ধের দাবি তোলেন।

স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি মশিউর রহমান বলেন, পাহাড়ে খ্রিস্টান মিশনারিরা একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। তারা উপজাতি গোষ্ঠীগুলোকে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করে পাহাড়ে খ্রিস্টান ধর্মের আধিক্য দেখাতে চায়‌। এর সঙ্গে বেশকিছু এনজিও রয়েছে যারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ‘আদিবাসী’ প্রচারণার সবক দিয়ে থাকে ও সম্বোধন করে থাকে। উপজাতিদের আদিবাসী স্বীকৃতির জন্য উসকানিও দেয়। তাদের উদ্দেশ্য- পাহাড়কে খ্রিস্টান অধ্যুষিত দক্ষিণ সুদান বা পূর্ব তিমুরের মতো আলাদা রাষ্ট্র তৈরি করা। রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের দায়ে পাহাড়ে সব ধরনের মিশনারি ও এনজিও কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি তোলেন মশিউর রহমান।

মশিউর আরও বলেন, সিএইচটি কমিশন নামক একটি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ে রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যক্রমে লিপ্ত। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের অধিকার রক্ষার নামে যারা বাংলাদেশের পাহাড়কে দক্ষিণ সুদান বা পূর্ব তিমুর বানাতে চায়। এই সংগঠনের অন্যতম সদস্য ড. জাফর ইকবাল এবং তার স্ত্রী ইয়াসমিন হক। মশিউর রহমান রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যক্রমের জন্য জাফর ইকবালসহ সিএইচটি কমিশনের সব সদস্যের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহম্মদ শাহীন বলেন, পাহাড়ে উপজাতি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করেছে। রাজনগর গণহত্যা, পাকুয়াখালী ট্র্যজেডি, মাটিরাঙ্গা গণহত্যা, ভূষণছড়া গণহত্যার ইতিহাস এখনো জনগণ ভুলে যায়নি। এখনো পাহাড় সে সব শহীদদের গণকবরের ওজন বহন করে। আমরা এসব নৃশংস গণহত্যার বিচার চাই, খুনিদের ফাঁসি চাই। এখনো ভারতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। এগুলো বন্ধ না হলে ভারতকে অবশ্যই তার ফল ভোগ করতে হবে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি জসিম উদ্দিন বলেন, আমার বাংলাদেশকে জুম্মল্যান্ড-কুকি চীন হতে দেব না। ভারত আমাদের পাহাড়ে চোখ দিলে, তার মুরগির গলা (চিকেনস নেক) চেপে ধরব। পাহাড়কে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র হলে চিকেনস নেক দিয়ে তারাও দুই টুকরা হয়ে যাবে। জসিম উদ্দিন পাহাড়ে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সেনাবাহিনীকে শক্ত ভূমিকা নেওয়ার দাবি তোলেন। তিনি পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প আরও বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান।

প্রতিবাদী সমাবেশজুড়ে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে শিক্ষার্থীদের স্লোগান দিতে দেখা যায়। এসব প্ল্যাকার্ডে ‘কেউ নয় আদিবাসী, সবাই আমরা বাংলাদেশি’, ‘সমতল ও পাহাড়-এক আইনে চলতে হবে’, ‘পাহাড়ের বাঙালিদের সাথে সকল বৈষম্য বন্ধ করো’, ‘ঢাবিতে উপজাতি কোটা বন্ধ করো, নাথান বোমরা ঢুকছে’- ইত্যাদি লেখা পরিলক্ষিত হয়।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষার্থী অংশ নেন।