বাইরের থেকেও রাবি ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে খাবারের দাম বেশি


RU Correspondent | Published: 2022-12-04 23:10:03 BdST | Updated: 2024-04-20 06:05:55 BdST

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির দোহাই দিয়ে বাহিরের থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে হোটেলগুলোতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে খাবারের দাম বেশি রাখার অভিযোগ উঠেছে দোকানিদের বিরুদ্ধে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরে খাবারের দাম কম হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চড়া দাম রাখছেন দোকানিরা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরের দোকানগুলোতে সিঙ্গাড়ার দাম ৫ টাকা রাখা হলেও ক্যাম্পাসের ভিতরে সিলসিলা হোটেলে সিঙ্গাড়ার দাম ৭-৮ টাকা রাখা হচ্ছে। চপের দাম বাহিরে ৫ টাকা হলেও সিলসিলাতে ৮ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। এমন চিত্র শুধু সিলসিলাই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্রই দাম বেশি রাখছেন বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে সিঙ্গাড়ার দাম ৭ টাকা, পুরির দাম ৭-৮ টাকা রাখা হচ্ছে, যেখানে বাহিরে ৫ টাকায় পাওয়া যায় এসব সিঙ্গাড়া-পুরি। পিয়াজুর দাম ৫ টাকা রাখলেও সাইজ অনেক ছোট। চায়ের দাম ১ টাকা বাড়িয়ে ৬ টাকায় বিক্রি করছেন ক্যাম্পাসের হোটেল মালিকরা। সকালের নাস্তা পরোটা ও ভাজিতেও দাম বাড়িয়ে রাখছেন। আগের থেকে সাইজ অনেক ছোট করা হয়েছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের হোটেলগুলোতেও রাখা হচ্ছে খাবারের চড়া দাম। দেড় প্লেট ভাত খেতে লাগছে ৩৫ টাকা যা বাহিরে ২০-২৫ টাকায় পাওয়া যায়। সবরকম তরকারিতেও রাখা হচ্ছে চড়া দাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনগুলোতেও রাখা হচ্ছে চড়া দাম। প্রতি পিস ডিমের দাম ৮ টাকা হলেও ডিমভাজি করে ১৮-২০ টাকা বিক্রি করছেন দোকানীরা। প্লেট প্রতি খিচুড়ি রাখা হচ্ছে ২০ টাকা যা বাইরে ১৫ টাকায় পাওয়া যায়।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদারকির অভাবেই এমনটা হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি নিয়মিত এসব দোকানের তদারকি করতেন তাহলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দাম বেশি রাখার সাহস পেতো না এসব হোটেল মালিকরা। দোকানের ভাড়া বেশি দিয়ে বাহিরের দোকানিরা যদি কম টাকায় বিক্রি করতে পারে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কম ভাড়া দিয়ে কেন পারবে না? প্রশাসনের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এসব শিক্ষার্থীরা।

লোক প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী পলক মাহমুদ বলেন, ক্যাম্পাস এর মধ্যে খাবারের দাম বাইরের থেকে বেশি। এটা নিয়ে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তাছাড়াও আমাদের ভার্সিটি থেকে অন্যান্য ভার্সিটির হোটেলগুলোতে খাবারের দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হোটেল মালিকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। ক্যাম্পাসে বাইরে কম টাকায় খাবার পাওয়া গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে পাওয়া যায় না। সিঙ্গাড়া, পুরি, চপ, পিয়াজু বাইরে অনেক কম দামে পাওয়া যায়। কিন্তু ক্যাম্পাসের ভিতরে এসব খাবারের পরিমাণও ছোট এবং দামও বেশি নিচ্ছে দোকানিরা। দ্রব্যের দাম বাড়লেও আমাদের পরিবারের মাসিক আয় কিন্তু বাড়ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের খাবার চড়া দামে বিরক্ত হয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আবু বকর অন্তু বলেন, চারুকলা অনুষদে দেড় প্লেট ভাত ও মাছের তরকারি দিয়ে খাবার খেয়ে বিল দিতে হয়েছে ৮০ টাকা। বাহিরে ৫৫-৬০ টাকায় এ খাবার খাওয়া যেতো। একবেলায় যদি ৮০ টাকা দিয়ে খেতে হয় তাহলে অন্য দুবেলা কী করবো? ক্যাম্পাসের অন্যান্য দোকানগুলোতেও চড়া দাম রাখছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এ বিষয়গুলোকে দেখার জন্য সুনজর কামনা করেন এ শিক্ষার্থী।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন দোকানিরা। বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনের দোকানি বাবু হোটেলের মালিক বাবু মিয়া বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে আমাদের কিছুটা দাম বাড়াতে হয়েছে। তবে বাইরের থেকে বেশি বাড়ানো হয়নি বলে জানান তিনি। যদি দ্রব্যের দাম কমে তাহলে আমরাও খাবারের দাম কমাবো বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বিষয়টি শুনেছি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা অভিযান চালাবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের খাবারের দাম যাচাই করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে খাবারের মূল্যের সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ করে দিবো। তার জন্য আমাদের আগে বাইরের খাবারের দাম সম্পর্কে অবহিত হতে হবে।