ভর্তি ফরম বিক্রি করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় ২৪ কোটি টাকা


RU Correspondent | Published: 2023-05-11 14:28:07 BdST | Updated: 2024-07-01 14:31:45 BdST

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শেষ হয়েছে গত ২ মে। ৩ হাজার ৯৩০টি আসনের বিপরীতে এবার আবেদন জমা পড়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩০০টি। সে হিসেবে প্রায় ২৪ কোটি টাকার ভর্তি ফরম বিক্রি হয়েছে। এবার বেড়েছে ভর্তি আবেদন ফি। ২২০ টাকা বাড়িয়ে ‘এ’ ও ‘'সি’ ইউনিটের জন্য আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয় ১৩২০ টাকা। তবে ‘বি’ ইউনিটের জন্য আগের ফি ১১০০ টাকা বহাল রাখা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক পর্যায়ে তিনটি ইউনিটে আবেদন জমা পড়ে ৪ লাখ ১ হাজার ৪১৪টি। একক আবেদন সংখ্যা ছিল ২ লাখ ১৯ হাজার ২৭৩টি। প্রাথমিক পর্যায়ে আবেদন ফি ধার্য করা হয়েছিল ৫৫ টাকা। সেখানে একজন ভর্তিচ্ছু এই ফি দিয়েই ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ ইউনিটে আবেদনের সুযোগ পেয়েছিল।

অন্যদিকে, চূড়ান্ত পর্যায়ে ‘এ’ ইউনিটে ৭২ হাজার ৫০টি, ‘বি’ ইউনিটে ৩০ হাজার ৬৭৪টি এবং ‘সি’ ইউনিটে জমা পড়ে ৭৫ হাজার ৮৫০টি আবেদন। ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জসহ চূড়ান্ত পর্যায়ে ‘এ’ ও ‘সি’ ইউনিটের জন্য আবেদন ফি ধার্য করা হয় ১৩২০ টাকা এবং ‘বি’ ইউনিটের জন্য ধার্য করা হয় ১১০০ টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে আবেদন থেকে আয় হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার ১৫ টাকা; অন্যদিকে চূড়ান্ত পর্যায়ের আবেদনে তিনটি ইউনিট থেকে ১০% সার্ভিস চার্জসহ আয় হয়েছে ২২ কোটি ৮৯ লাখ ৬৯ হাজার ৪০০ টাকা। ফলে, প্রাথমিক ও চূড়ান্ত দুই ধাপে আবেদন ফরম বিক্রি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় হয়েছে সর্বমোট ২৪ কোটি ১০ লাখ ২৯ হাজার ৪১৫ টাকা। অনলাইন সার্ভিস চার্জ ও ব্যাংক পেমেন্ট সার্ভিস চার্জ বাদ দিলে এই আয়ের পরিমাণ ২২ কোটি ২ লাখ ১৪ হাজার ১৫ টাকা। সার্ভিস চার্জ থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের উন্নয়ন ফান্ডে জমা হবে।

যেসব খাতে ব্যয় হয় এই টাকা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে আবেদন ফি থেকে প্রাপ্ত অর্থ কোন কোন খাতে ব্যয় হবে তা জানতে যোগাযোগ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরে। রেজিস্ট্রারের অনুমতি ছাড়া গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি অর্থ ও হিসাব দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. শেখ শামসুল আরেফিন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

তবে আবেদন থেকে প্রাপ্ত অর্থ কোন কোন খাতে খরচ হয় তার একটি নথি বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার অনলাইন পদ্ধতিতে আবেদনের বিপরীতে প্রাপ্ত অর্থের ৬০% ইউনিটগুলো গ্রহণ করে থাকে। অবশিষ্ট ৪০% অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফান্ডে জমা হয়। ৬০% অর্থের ৫% অর্থ ইউনিটভুক্ত ডিন ইনস্টিটিউট অফিস এবং ১০% অর্থ ইউনিটভুক্ত বিভাগসমূহের উন্নয়নের জন্য রেখে বাকি অর্থ প্রতিটি ইউনিট ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয় সম্পন্ন করে থাকে।

ফলে এ বছর শুধু ভর্তি সংক্রান্ত কাজেই ব্যয় করা হবে ১১ কোটিরও বেশি টাকা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফান্ডে জমা হবে প্রায় ৯ কোটি টাকা। এছাড়া ইউনিটভুক্ত বিভাগগুলোর উন্নয়ন ফান্ডে জমা হবে প্রায় দেড় কোটি টাকা।

গত শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার হলে পরিদর্শকের সম্মানি দেওয়া হয় ৩০০০ টাকা এবং কর্মচারীর পারিতোষিক ১০০০ টাকা। এছাড়া চিফ কো-অর্ডিনেটরের সম্মানি ৬০ হাজার টাকা, এডিশনাল চিফ কো-অর্ডিনেটরের সম্মানী ৬০ হাজার টাকা এবং কো-অর্ডিনেটরের সম্মানি ৪৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী, ভর্তি পরীক্ষার হলে ১৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন পরিদর্শক এবং ৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন কর্মচারী থাকবে।

এদিকে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ এবং রেজিস্ট্রারের সম্মানি সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, বিষয়টি প্রশাসনিকভাবে কমিটির মাধ্যমে ৪০% অর্থ থেকে প্রদান করা হয়ে থাকে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকেই অনলাইনে আবেদন থেকে প্রাপ্ত অর্থ খরচ করা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে গত শিক্ষাবর্ষে ইউনিট সমন্বয়কারী ও পরিদর্শকের সম্মানি এবং কর্মচারীদের পারিতোষিক যা ছিল, এবারও সেটিই বহাল রাখা হয়েছে।