রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তি হতে আসা এক শিক্ষার্থীকে ‘প্রক্সি চুক্তি’র টাকার জন্য তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি এবং জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে শাখা ছাত্রলীগের নেতাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবারের এ ঘটনার পরদিন দুটি পৃথক মামলা হয় নগরীর মতিহার থানায়। এতে আরও দু-তিনজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার কথা স্বীকার করা শিক্ষার্থীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
আসামিরা হলেন– রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়, শের-ই-বাংলা হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শাকোয়ান সিদ্দিক ওরফে প্রাঙ্গণ, লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মহিবুল মমিন সনেট এবং জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী আহসান হাবীব।
দুই মামলার এজাহারের বর্ণনা প্রায় একই রকম। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগে ভর্তি হতে মায়ের সঙ্গে স্যার জগদীশচন্দ্র একাডেমি ভবনে যান আহসান হাবীব। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে ওই ভবন থেকে বের হলে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চারজন তাঁকে অপহরণ করে শের-ই-বাংলা হলের তৃতীয় তলায় আটকে রাখে। এর পর অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনে তাঁর বাবার কাছে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
এদিকে দীর্ঘক্ষণ ছেলের খোঁজ না পেয়ে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানান আহসান হাবীবের মা। পরে প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আহসান হাবীব স্বীকার করেন, তিনি প্রক্সির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। এ জন্য প্রাঙ্গণের সঙ্গে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার চুক্তি হয়। ভর্তির আগে তিনি ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন এবং বাকি ৬০ হাজার টাকা ভর্তির পর দেবেন বলে অঙ্গীকার করেন। কিন্তু হাবীব পরে সেই টাকা না দেওয়ায় অপহরণ করে ভয়ভীতি দেখানো হয়। অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা তন্ময়কে প্রধান আসামি করে আরও তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন হাবীবের মা। তাঁর বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘তন্ময় ও প্রাঙ্গণ নাম বলে দুই জন আমার কাছে ৩ লাখ টাকা দাবি করে। তারা আমাকে হুমকি দিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে এই টাকা পাঠাতে বলে। আমি টাকা দিতে রাজি হইনি।’
এদিকে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগ নেতা তন্ময় দাবি করেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। আহসান হাবীবের সঙ্গে তাঁর পরিচয় নেই। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আগামী কমিটিতে আমি পদপ্রত্যাশী। সে জন্য আমাকে আটকাতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ষড়যন্ত্রে সরাসরি জড়িত শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও শামিল হয়েছে।’
অভিযুক্ত রাজু আহমেদ বলেন, ‘সনেট ও প্রাঙ্গণ এ ঘটনার মূল কারিগর। তাদের সঙ্গে চুক্তিতে কিছু টাকা বাকি থাকায় ওই শিক্ষার্থীকে আমার পাশের রুমে নিয়ে এলে আমি হল থেকে বের করে দিই। পরে প্রভোস্ট স্যার ফোন দিয়ে বলেন তাদের ডেকে আনতে। যেহেতু আমি হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, তাই তাদের ফোন দিয়ে প্রভোস্ট স্যারের মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীকে প্রশাসনের কাছে তুলে দিই। আমি এ ঘটনায় জড়িত নই।’
এদিকে তন্ময়ের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু। কিবরিয়া বলেন, ‘তন্ময় নিজে বাঁচতে আমাদের ওপর অভিযোগ দিচ্ছে। সে এমন কেউ হয়নি যে, তাকে আটকাতে যাব।’
মতিহার থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, এ ঘটনায় পাবলিক পরীক্ষা আইনে এবং অপহরণ ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদে জালিয়াতির সঙ্গে তন্ময়ের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল। আমরা মতিহার থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।
এর আগে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে আটক একজন প্রক্সিকাণ্ডের ‘মূল হোতা’ হিসেবে তন্ময়ের নাম বলেন। ওই ঘটনার পর তাঁকে সংগঠন থেকেও বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। যদিও পরে সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।