পর্যাপ্ত ঔষধ মিলছে না রাবি মেডিকেল সেন্টারে, প্যারাসিটামলেই ভরসা


Shoeb Shuvro | Published: 2024-02-10 22:54:46 BdST | Updated: 2024-05-04 04:28:43 BdST

দীর্ঘদিন ধরেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসা সেবা নিয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে আসছে। তাদের অভিযোগ, যেকোনো অসুখের চিকিৎসায় দেওয়া হয় প্যারাসিটামল ও গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ। এছাড়া বিশেষ কোনো রোগে চিকিৎসা দিতে নেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। অনেক সময় প্যারাসিটামল পেতেও ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। তবে রাবি চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী। তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৬টি। কিন্তু সেই পদের বিপরীতে চিকিৎসক আছেন মাত্র ১৮ জন। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় শিক্ষার্থীদের সেবা দিতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন কর্মরত চিকিৎসকরাও। ফলে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম হোসেন বলেন, আমি কয়েকদিন যাবত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। আমার গলাব্যথা, ঠান্ডা-কাশি, জ্বর ও মাথাব্যথা। এ সমস্যা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে যাই। ডাক্তার পরীক্ষা করে প্রেসক্রিপশন দেয় আমাকে। মেডিসিন দপ্তরে সেটি দেখালে আমাকে শুধু নাপা-স্যালাইন ও কয়েকটি গ্যাসের ট্যাবলেট দেয়। আমি আমার আসল রোগ কী সেটি জানতে পারিনি। কাশির জন্য আমি বাইরে থেকে শিরাপ কিনেছি।

নাক দিয়ে রক্ত ঝরার সমস্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে যান গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ইসরাত জাহান নাবা। তিনি বলেন, নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিল আমার। এ নিয়ে মেডিকলে গেলে আমাকে নাপা-প্যারাসিটামল ও গ্যাসের কয়েকটি ট্যাবলেট প্রদান করেন তারা। আমার সমস্যার কথা চিন্তা করে আমি বাইরে ডাক্তার দেখাই।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু বলেন, মেডিকেল সেন্টারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাব বহুদিনের। চুলকানি সমস্যা নিয়ে গত সপ্তাহে মেডিকেল সেন্টারে যাই। কিন্তু সেখানে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ কোনো ডাক্তার নেই। বাধ্য হয়ে মেডিসিন বিভাগের ডাক্তার দেখাতে হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এখলাস মিয়া বলেন, আমাদের চিকিৎসা কেন্দ্র মূলত তিন চারটি ওষুধ দিয়েই চলে। নাপা, প্যরাসিটামল, স্যালাইন ও গ্যাসের ট্যাবলেট। এ তিনটি ছাড়া আর কিছুই সেখানে পাওয়া যায় না। অধিকাংশ মেডিসিন কিনতে হয় বাইরে থেকে। কোনো বড় সমস্যা হলেই আমাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে যেতে হয়।

তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে রাবি চিকিৎসাকেন্দ্রের ওষুধ সরবরাহ বিভাগের ইনচার্জ মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, প্রতিনিয়ত দুই শতাধিকের ওপরে শিক্ষার্থী সেবা নিচ্ছে। আমাদের মেডিকেলে বর্তমানে ৫৯ পদের ওষুধ আছে। শিক্ষার্থীরা যদি শুধু নাপা আর প্যারাসিটামল পায় তাহলে অন্য ৫৭ পদের ওষুধ কাকে দিচ্ছি আমরা?

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, শূন্য ১৮টি পদের বিপরীতে ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর চিকিৎসক পদে ১৩ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তবে তাদের মৌখিক পরীক্ষা না হওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম আটকে আছে।

এছাড়াও মেডিকেল সেন্টারের তিনটি কিউএস মেশিনের মধ্যে দুইটি অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। এই মেশিনের সাহায্যে শিক্ষার্থীরা তাদের স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, রোগীর ব্যবস্থাপত্র, ইলেকট্রনিক রেকর্ডে সংযোজন, রোগ অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা নেওয়াসহ নানা কাজ করেন।

ইসিজি মেশিনের চিকিৎসক না থাকায় প্রায় আট বছর ধরে বন্ধ আছে এর কার্যক্রম। এছাড়াও গাইনি বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, চর্ম বিশেষজ্ঞ বিভাগগুলো চিকিৎসক সংকটে সেবা দিতে পারছে না।

এ বিষয়ে রাবি মেডিকেল সেন্টারের প্রধান ডা. তবিবুর রহমান শেখ বলেন, শিক্ষার্থীরা চিকিৎসার জন্য এখানে আসেন কিন্তু আমরা তাদের যথাযথ সেবা দিতে পারছি না। এতে আমাদের নিজেদেরও খারাপ লাগে।

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে অনেকগুলো বিভাগ ফাঁকা হয়ে পড়ে আছে। আমি উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা দ্রুত চিকিৎসকের শূন্য পদগুলোতে নিয়োগ দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি, তখন শিক্ষার্থীদের যথাযথ সেবা দিতে পারবো।

শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. তবিবুর বলেন, শিক্ষার্থীদেরও ধৈর্যশীল ও সহনশীল হতে হবে। এখানে বিভিন্ন পদের ওষুধ শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এই মেডিকেল সেন্টার থেকে মূলত প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাই রোগীর অবস্থা দেখে শুরুতে আমরা এন্টিবায়োটিক ওষুধ দিতে পারি না। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ওষুধ দিয়ে থাকি। এতে করে শিক্ষার্থীরা ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ করে থাকেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা আছে। অল্প সময়ের মধ্যেই নিয়োগ কার্যক্রম চালু হতে পারে। ফাঁকা পদগুলোতে আমরা নিয়োগ দিতে পারলে চিকিৎসক সংকট কমে আসবে এবং শিক্ষার্থীরাও সঠিক সেবা পাবে বলে জানান তিনি।