শাবি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এবার মাঠে শিক্ষকরা


Desk report | Published: 2022-01-20 00:19:04 BdST | Updated: 2024-12-14 03:46:43 BdST

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্যের অভিযোগ এনে আন্দোলনে নেমছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

তারা বলছেন, শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের নামে শিক্ষকদের নিয়ে যে মন্তব্য করছে তা অশালীন। এতে শিক্ষকরা আহত হয়েছেন। তবে এই অভিযোগ নাকচ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিছু শিক্ষক এসব কথা বলছেন। অথচ তারা ভিসির কুরুচিপূর্ণ অডিও ক্লিপ নিয়ে কোনো মন্তব্য করছেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অবস্থান নেন শিক্ষকদের একাংশ। এ সময় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগ সম্বলিত নানা প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে তাদের হাতে।

ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক হিমাদ্রি শেখর রায় বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করতেই পারে। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চিত এসবের একটি সমাধান হবে। কিন্তু আন্দোলনের নামে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য কখনও কাম্য নয়। আমরা আমাদের শিক্ষার্থী ও সন্তানদের এ রকম শিক্ষা কখনই দেইনি।’

শিক্ষক ফাহমিদা রহমান খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এরকম ভাষা কখনই কাম্য হতে পারে না। তারা যে ভাষা ব্যবহার করছে তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়কেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। শিক্ষকদের নিয়ে এমন ভাষা ব্যবহারের পর আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না। তাই প্রতিবাদে নেমেছি।’

সহকারী অধ্যাপক জাহিদ হাসান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন তার সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। তাদের দাবিগুলো কতটুকু যৌক্তিক তা প্রশাসন বিবেচনা করবে। কিন্তু দাবি আদায়ের জন্য শিক্ষকদের নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য ও অশোভন ভাষা ব্যবহার কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। ক্ষোভের ভাষা ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের আরও পরিশীলিত হওয়া প্রয়োজন।’

ফটকে অবস্থান নেয়ার আগে শিক্ষকদের একাংশ উপাচার্য ফরিদ আহমেদের সঙ্গে তার বাসভবনে দেখা করেন।

এখানে সপ্তম দিনের মতো অবস্থান বজায় রেখেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাদের একজন দেলোয়ার হোসেন।

শিক্ষকদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা যে অভিযোগ করছেন তার কোনো ভিত্তি নেই। কোনো শিক্ষককে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়নি। তাদের অভিযোগের কোনো প্রমাণও তারা দেখাতে পারবেন না।

‘মঙ্গলবার ভিসির একটি অশালীন বক্তব্যের অডিও ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে তারা কিছু বলছেন না। উল্টো শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আন্দোলনে নেমেছেন।’

তিনি বলেন, ‘এই শিক্ষকরা কারও দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে কিংবা সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে আজকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তবে কোনো অপতৎপরতাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দাবিয়ে রাখতে পারবে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন লিজার বিরুদ্ধে খাবারের খারাপ মান, অব্যবস্থাপনা ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আনেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তার প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে সরে যান। দাবি পূরণ না হওয়ায় শনিবার সন্ধ্যায় ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক আটকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

এরপর মধ্যরাতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সরে গেলেও রোববার সকাল থেকে ফের শুরু হয় তাদের বিক্ষোভ।

বিকেলে তারা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদকে অবরুদ্ধ করলে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে। শিক্ষার্থীরাও ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এরপর শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।

শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কয়েকটি রাবার বুলেট ছোড়া হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ গুলিবিদ্ধ হন। এরপর পুলিশ উপাচার্যকে বের করে তার বাসভবনে নিয়ে যায়।

পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের পর রোববার অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।

জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে রোববার রাতে উপাচার্য ফরিদ প্রাধ্যক্ষ জাফরিনের পদত্যাগের বিষয়টি জানান। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে নামেন।

এর মাঝে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অজ্ঞাতপরিচয় ২ থেকে ৩ শ শিক্ষার্থীকে আসামি করে সোমবার রাতে সিলেটের জালালাবাদ থানায় মামলা করে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলে এই মামলা প্রত্যাহারের জন্য পুলিশকে সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্যের পদত্যাগের সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে এ দাবি মানা না হলে আমরণ অনশনে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ আন্দোলন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল করেন। সূত্র- নিউজবাংলা