বেরোবিতে শিক্ষকদের কর্মবিরতি, শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কা


MD ABUL KHAYER JAYED | Published: 2024-06-28 22:41:25 BdST | Updated: 2024-07-01 05:22:15 BdST

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করে আসছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষকবৃন্দ। এসময় ক্লাস সিডিউলে কিছুটা বিপর্যয় দেখা দিলেও পরীক্ষা চলমান ছিল। তবে দাবি না মেনে নিলে ০১ জুলাই থেকে কর্মবিরতির যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে এতে পূর্বনির্ধারিত নোটিশের চলমান এবং সম্ভাব্য তারিখের পরীক্ষাসমূহ নিয়ে দোটানায় পড়েছে বেরোবি শিক্ষার্থীরা।

ফেডারেশন সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ই মার্চ ২০২৪ তারিখ, বুধবার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত (এস,আর,ও নং-৪৭- আইন/২০২৪) পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানিয়ে ৪ঠা জুন ২০২৪ মঙ্গলবার সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করে। কর্মবিরতিতে তারা পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবি জানান। সেখানে তারা ২৪শে জুন ২০২৪ তারিখের মধ্যে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার না হলে (২৫-২৭) জুন ২০২৪ পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি এবং ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের কথা বলেন। তবে এসময়ে পরীক্ষাসমূহ কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে বলে উল্লেখ্য করা হয়। তবে এসময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে পহেলা জুলাই ২০২৪ তারিখ থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করে হবে বলে জানান ফেডারেশন।

তবে এসব কর্মসূচির কারণে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে শিক্ষার্থীদের কপালে। ০১ জুলাই থেকে কি হবে সে বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নির্ধারিত পরিক্ষাসমূহ হবে কি না বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত শিক্ষার্থীরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু বিভাগে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলমান, আবার অনেক বিভাগের পরিক্ষা সম্ভাব্য তারিখ দেওয়া আছে, ল্যাব, ক্লাসসহ সকল কিছু অংশ এসময়ের মধ্যে পড়েছে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, আগামী ১ জুলাই বা এর পরবর্তী কাছাকাছি সময়ে থাকা পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন তারা। ঈদের ছুটি কাটিয়ে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসা নিয়েও দোটানায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী । বিভাগ থেকেও পরীক্ষা হবে কি না সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হচ্ছে না। এদিকে আবার শিক্ষক সমিতির পহেলা জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতির জন্য পরীক্ষা হওয়া নিয়েও সংশয় তাদের মনে।

জেন্ডার ডেভেলপমেন্ট স্টাডিস বিভাগের নুসরাত জাহান বলেন, শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলতে থাকলে বড় সেশনজটের মুখে পড়তে হবে। এমনিতেই মহামারি করোনার কারণে শিক্ষাজীবনের দুই বছর ক্ষতি হয়েছে। সেশন জটে পড়লে শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে চাকরির প্রস্তুতির জন্য সময়ই পাওয়া যায়নি। একসময় চাকরির বয়সই শেষ হয়ে যাবে। তাই শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলতে থাকলে সবদিকে শিক্ষার্থীদেরই ক্ষতি হচ্ছে, সেশনজট তৈরি হচ্ছে।’ তাই শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে সরকারকে যথাযথ ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করেন এই শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাকেটিং বিভাগের আল আমিন বলেন, বর্তমান শিক্ষকদের কর্মবিরতি যদি অনির্দিষ্টকালের জন্য চলমান থাকে তাহলে এর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করবে শিক্ষার্থীদের উপর।যার ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীরা কয়েক ধাপ পিছিয়ে পড়বে।কেননা, শিক্ষকদের কর্মবিরতি মানেই শিক্ষাক্ষেত্রের নিথর অবস্থার সম্মুখীন হবে। ক্লাস, পরীক্ষা এছাড়া সকল একাডেমিক কার্যকর স্থগিত হয়ে গেলে সেশনজট তো হবেই, এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা সকল ধরনের চাকরি পরীক্ষাতেও পিছিয়ে পড়বে,এর কারণে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ারে আশার আলো নিমজ্জিত হতে পারে!

শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ ও বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ,বেরোবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ আহসান হাসান হাবীব সৌরভ বলেন,
ঈদের ছুটির আগে কিছু বিভাগ পরীক্ষা শেষ করেছেন, আবার কিছু বিভাগ পরীক্ষা শুরু করে এখনো শেষ করতে পারেনি, কিছু বিভাগ আছে, যাদের পরীক্ষার তারিখ দিয়েছে। যে বিভাগগুলো পরীক্ষার তারিখ দিয়েছে এবং পরীক্ষা শেষ করতে পারেনি, যদি পরীক্ষাগুলো স্থগিত করে শিক্ষকদের কর্ম বিরতি চলতে থাকে তবে শিক্ষার্থীরা বড় সেশন জটের মধ্যে পড়বে। এমনিতেই মহামারী করোনার কারণে আমাদের পড়ালেখা অনেক পিছিয়ে। যার কারণে শিক্ষা জীবনের দুই বছর ক্ষতি হয়েছে। এভাবে যদি আমাদের চাকরির বয়সসীমা শেষের দিকে যায়, তবে দেখা যাবে চাকরি প্রস্তুতির পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাচ্ছে না।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ বলেন, ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা আগামী ১ তারিখ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল সকল কার্যক্রম থেকে সরে আসারা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে অনুযায়ী ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকার কথা আছে। এর আগে ৩০ তারিখ আমরা সংবাদ সম্মেলন করব। এর পরেও সরকার মেনে না নেয় তাহলে তাহলে আমাদের বাধ্য হয়ে করতে হবে। আমরা এর আগে ২ মাস আন্দোলন করেছি শিক্ষার্থীদের কোন ক্ষতি হয়নি। এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের কোন ক্ষতি হলে আমরা পরবর্তীতে কাটিয়ে উঠবো ইনশাআল্লাহ। আশা করি আমাদের ১ তারিখের এই এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে না।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. বিজন মোহন চাকী কে বারবার ফোন করে পাওয়া যায় নি ফোন রিসিভ করে নাই।

শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হাসিবুর রশীদ বলেন, "পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে যারা আন্দোলনে আছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। শিক্ষক ফেডারেশন বলতে পারবে আমি কিছু বলতে পারবো না।"

এদিকে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারাও।