বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়ে পুরস্কার পেল রাজশাহীর এক হাজার ৪৪৬ জন শিক্ষার্থী। বই পড়া শেষে পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলের ভিত্তিতে তারা পুরস্কার হিসেবেও বই পেল। গেল বছরের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্কুলপর্যায়ে বইপড়া কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিল রাজশাহী মহানগরীর ৩৫টি স্কুলের এসব শিক্ষার্থী।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজশাহীর শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য পুরস্কার বিতরণী উৎসব। সেখানেই আমন্ত্রিত অতিথিরা শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন পুরস্কারের বই। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।
তিনি বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এই বইপড়া কার্যক্রম আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে নিজেকে বিকশিত করার এক মহাসুযোগ। আমাদের সংস্কৃতিকে উন্নত করতে হলে অবশ্যই পাঠ্য বইয়ের বাইরে প্রচুর বই পড়তে হবে। যে যত বেশি বই পড়বে সে তত বেশি জানবে। এ সময় পুরস্কার অর্জনের জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দু’বার এভারেস্ট বিজয়ী একমাত্র বাংলাদেশি এম এ মুহিত। তিনি বলেন, প্রত্যেক মানুষের ভেতরেই একটা এভারেস্ট রয়েছে। এই এভারেস্ট হলো তার স্বপ্ন। তোমরা স্বপ্ন দেখ এবং নিজের স্বপ্নের প্রতি অবিচল থাকো। দেখবে, প্রত্যেকেই যার যার এভারেস্টে উঠতে পেরেছো।
উপস্থিত ছিলেন দেশের প্রথম নারী এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদারও। তিনি বলেন, তিনি পাহাড়ে ওঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন বই পড়ার মাধ্যমে। জীবনে বড় কিছু হতে হলে অবশ্যই বই পড়তে হবে। বই আমাদের স্বপ্ন দেখা শেখায় এবং আমাদের কল্পনা শক্তি বাড়ায়। শিক্ষার্থীরা বই পড়লে পাহাড়ের সমান উঁচু এবং আকাশের মতো উদার হতে পারবে।
এর আগে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের উপদেষ্টা অঞ্জন কুমার দে। তিনি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান। পরামর্শ দেন আরও বেশি বেশি বই পড়ার। পাশাপাশি এই বইপড়া কর্মসূচিকে সফলভাবে পরিচালনায় সহায়তা করার জন্য তিনি শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, সংগঠক ও পৃষ্ঠপোষকদের ধন্যবাদ জানান। আগামী বছর এই কর্মসূচিতে আরো বেশি শিক্ষার্থীকে অংশগ্রহণেরও আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর ড. রীনা রানী দাস, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের নাটোর শাখার সংগঠক অধ্যাপক অলক মৈত্র, শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ তাইফুর রহমান প্রমুখ।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যুগ্ম-পরিচালক মনির হোসেন জানান, তাদের বইপড়া কর্মসূচিতে বছরের প্রথমেই রাজশাহী নগরীর ৩৫টি স্কুলের শিক্ষার্থীদের সদস্য করা হয়েছিল। জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তাদের মোট ১৬টি বই পড়তে দেওয়া হয়। পড়া শেষে নেওয়া হয় একটি পরীক্ষা। ওই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতেই এক হাজার ৪৪৬ শিক্ষার্থীকে দেওয়া হলো পুরস্কার।
মনির হোসেন জানান, পরীক্ষায় ১৬টি বই থেকে দুটি করে প্রশ্ন থাকে। ফলে ফলাফলেই বোঝা যায় কে কয়টি বই পড়েছে। যারা সাতটি বই পড়েছে তাদের স্বাগত পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আর ১৬টি বই পড়লে পেয়েছে সেরা পাঠক পুরস্কার। এছাড়াও ১০টি বই পড়ে শুভেচ্ছা এবং ১৩টি বই পড়ে অভিননন্দ পুরস্কার পেয়েছে শিক্ষার্থীরা।
স্বাগত পুরস্কারপ্রাপ্তদের দেওয়া হয়েছে একটি ছোট বই। শুভেচ্ছা পুরস্কারপ্রাপ্তদেরও দেওয়া হয়েছে একটি বই। তবে এটি একটি বড় বই। এছাড়া অভিনন্দন পুরস্কারপ্রাপ্তরা পেয়েছে দুটি এবং সেরা পাঠক পুরস্কারপ্রাপ্তরা পেয়েছে তিনটি করে বই। কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকসহ অন্য অতিথিরা তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক (প্রোগ্রাম) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন। পুরস্কারের বইসহ উৎসব আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করে গ্রামীণফোন লিমিটেড। অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের রাজশাহী সার্কেলের হেড অব মার্কেটিং মোহাম্মদ সোহেল মাহমুদও উপস্থিত ছিলেন।
তিনি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বই আমাদের চিন্তা শক্তিকে বৃদ্ধি করে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কার্যক্রমের সাথে গ্রামীণফোন যুক্ত থাকতে পেরে গর্বিত। একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাথে ভবিষ্যতেও কাজ করে যেতে চায় গ্রামীণফোন।
গ্রামীণফোনের এই কর্মকর্তা জানান, দারুণ সব বই নিয়ে ‘আলোর পাঠশালা’ নামে ইন্টারনেটভিত্তিক একটি লাইব্রেরি তৈরি করেছে গ্রামীণফোন এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। এই ই-লাইব্রেরী সবার জন্য উন্মুক্ত। মন চাইলেই যে কোনো পাঠক ওয়েবসাইটে ঢুকে তাদের পছন্দের বই পড়তে পারবেন।
টিআই/ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮