অামাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অারেকটি কলঙ্কজনক ঘটনা চলছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানকার সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম ইউরোপের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে এক বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে শিক্ষা ছুটি দিচ্ছে না। এমনকি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকার পরেও।
কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় একটা মামলা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সে সময়ের বিলুপ্ত কমিটির সদস্য ইফতেখারুল ইসলাম। মামলা দায়েরের পর হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের জামিন নিয়েছিলেন মাইদুল।
জামিনের মেয়াদ শেষে ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর মাইদুল চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেনের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারে যাওয়ার পরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ৩৭ দিন কারাভোগের পর মাইদুল জামিনে মুক্তি পান।
চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ৫৭ ধারায় এই মামলা চলতে পারে না মর্মে হাইকোর্টে রিট করেন মাইদুল ইসলাম। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত মামলার তদন্তকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে দেন। অাদালত জানায়, মাইদুলের বিদেশযাত্রায় আর কোনো বাধা নেই। কিন্তু
এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অজুহাতে তার বিদেশযাত্রার অনুমতি দিচ্ছে না।
হায়রে বিশ্ববিদ্যালয়! অার কতো নামবে? অাচ্ছা মাইদু্লের অপরাধটা কী? তেলবাজি করেনি? কী অদ্ভুত কাণ্ড ১ সেপ্টেম্বর থেকে নেদারল্যান্ডসের লাইডেন ইউনিভার্সিটিতে তাররসেশন শুরু হয়েছে। সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বারবার তাগাদা দিচ্ছে। কিন্তু ছুটি না পাওয়ায় যেতে পারছেন না মাইদুল।
ঘটনার প্রতিবাদে এবং মাইদুল ইসলামকে বিদেশে গবেষণার জন্য ছুটি দিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে অাজ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭৫ জন শিক্ষক এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। তারা বলেছেন, মাইদুল ইসলামকে হয়রানির মধ্য দিয়ে বিভাগের চেয়ারপারসন বা বিভাগ তার উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ন্যায্য অধিকারকে রদ করেছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন ও সংবিধানসম্মত নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী। অতি দ্রুত তারা মাইদুলের ছুটি অনুমোদনের উদ্যোগ নিতে বলেছেন।
অামিও একই দাবি করছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, উপাচার্য়সহ সবাইকে বলবো, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা ভালো না। দয়া করে পরিস্থিতি খারাপ না করে মাইদুল ইসলামকে দ্রুত চলে যেতে দিন। তাকে অবিলম্বে ছুটি প্রদানের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। অার পারলে নিজেদের বিবেকবোধটা জাগান।