মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের সবিনয় অনুরোধটুকু রাখুন


Dhaka | Published: 2020-06-19 01:21:20 BdST | Updated: 2024-09-29 04:45:14 BdST

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে যখন চিন্তা করি তখন শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়, কৃতজ্ঞতায় আমার মাথা নত হয়ে যায়। তাঁকে নিয়ে লিখতে বসলে অঝোরে কান্না পায়! তাঁকে কিছু বলতে আমার কখনো ভয় করে না। একটা কারণ হতে পারে- আজ পর্যন্ত কখনো নিজের প্রয়োজনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে দেখা করি নাই। হ্যাঁ, অবশ্যই কিঞ্চিৎ যোগাযোগ আছে। এবং আমার জন্যে তাঁর স্নেহের পরশ টের পাই! সেই স্নেহের পরশ থেকেই এই সামান্য লেখাটির অবতারণা।

আমরা সকলেই জানি, বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করায় ১৯৭৫ সালের নারকীয় হত্যাকাণ্ড থেকে সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান। নিতান্ত সরল বুদ্ধিতে বুঝি- যদি বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু সমার্থক হয়, তবে নিঃসন্দেহে বঙ্গবন্ধু বা বাংলাদেশের একমাত্র উত্তরাধিকারী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। প্রায় অর্ধযুগ প্রবাসে দুঃসহ শরণার্থী-জীবন শেষে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার ব্রত নিয়ে স্বজনের রক্তেভেজা বাংলায় ফিরে আসেন। মা-বাবা-ভাই ও স্বজন হারানোর ব্যথা-বিষে নীলকণ্ঠ বঙ্গবন্ধুকন্যা জুলুম-নির্যাতন, গ্রেপ্তার, ঘাতকদের রক্তচক্ষু ও মৃতুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে সামরিক স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ফিরিয়ে এনেছেন। বাংলার মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও বিপুল সমর্থনে দেশের সেবায় নিজেকে উজাড় করে দিয়ে চলেছেন। অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক খাতে দেশের প্রভূত অগ্রগতি সাধন করেছেন। প্রতিটি মুহূর্ত নিরন্তর পরিশ্রম করে বঙ্গবন্ধুর দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে চলেছেন। অগণিত অসহায় মানুষের একমাত্র আশা আকাঙক্ষা তিনি। করোনার দুর্যোগ মোকাবিলায় তিনি কীভাবে রাজনৈতিক কর্মী, জনপ্রশাসক, স্বাস্থসেবক, আইন-শৃঙ্খলা-প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যসহ সবাইকে একতাবদ্ধ করে দেশের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তা আমরা প্রতিদিন দেখছি।

আমরা অনেকেই যারা শিক্ষা-দীক্ষায়, প্রজ্ঞায়-অভিজ্ঞতায় অযোগ্য- তারা নানাভাবে প্রতারণা-জালিয়াতি করে পদ-পদবি-পদক, মেগা প্রকল্পের ঠিকাদারী, বিশাল ব্যবসা-বাণিজ্য, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়-হাসপাতাল, শিল্পকারখানা, ব্যাংক-বীমা-লিজিং কোম্পানি, অবৈধ বিত্ত-বৈভব, বিদেশে বাড়ি-গাড়ি, ব্যাংকে কাড়ি কাড়ি টাকা বানিয়ে প্রতিদিন তাঁকে ঠকিয়ে চলেছি! প্রবল আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে দেশের সর্বনাশ করে ফেলছি; টেকসই উন্নয়নের পথ বাধাগ্রস্ত করছি।

গণমাধ্যম সূত্রে ও আমার জানা মতে, বয়স্ক ও স্বাস্থ্যগতভাবে নাজুক ৪০ জন সংসদ সদস্যকে তিনি চলমান অধিবেশনে যোগ দিতে বারণ করেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কয়েকজন মন্ত্রী-উপদেষ্টাকে কোনো সভায় যোগ দেওয়া বা তাদের দায়িত্বপালন থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ষীয়ান কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও ফলমূল পাঠিয়েছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মন্ত্রী-এমপি, চিকিৎসক, শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীসহ অনেকের চিকিৎসায় সাধ্যমতো সবকিছু করেছেন। যথাসাধ্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করেও নিজের শিক্ষক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান; দুঃসময়ের সহযোদ্ধা মোহাম্মদ নাসিম, শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, হাবিবুর রহমান মোল্লা, বদরুদ্দীন আহমেদ কামরানসহ অনেককে হারিয়েছেন। উপরন্তু, প্রতিদিন সারা দেশের মানুষকে করোনার তাণ্ডব থেকে রক্ষার জন্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দিয়ে চলেছেন। ছোট বোন শেখ রেহানার মাথা থেকে আসা রিকশার চিত্রাঙ্কনশিল্পীদের খুঁজে সহায়তা দেয়ার কথাও এখানে স্মরণীয়। আরও স্মরণে রাখা আবশ্যক যে, মানবতার ত্রাণকর্তা হিসেবে দেশহারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্যে আশ্রয়, খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ স্বদেশে তাদের প্রত্যাবাসনের দাবি আন্তর্জাতিক ফোরামে জোরালো কণ্ঠে তুলে ধরেছেন। সবাই কবিতায় কলামে বলনে-কথনে শেখ হাসিনার প্রশংসায় প মুখ! তাঁর মতোন এমন মানবিক প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই! অতি অবশ্যই খুব সত্যি কথা!

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, এই ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে গত ১০ই জুন ২০২০ তারিখে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন: ‘ আমি নিজের জীবন নিয়ে চিন্তা করি না। জন্ম যখন হয়েছে, মৃত্যু হবেই। গুলি খেয়ে মরি। বোমা খেয়ে মরি কিংবা করোনা ভাইরাসে অসুস্থ হয়ে মরি… মৃত্যুকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। … আমি এখানে বেঁচে থাকার জন্য আসিনি। জীবনটা বাংলার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতে এসেছি।’

এমন বেদনাভরা ভালোবাসার কথা ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন ঝড়বৃষ্টিস্নাত মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর জনসমুদ্রে তাঁর কান্নাভেজা কণ্ঠে আমরা শুনেছিলাম। গভীর রাতে অনলাইনে এ কথাগুলো পড়ার সময় দিল্লির সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকের করা ‘দ্য টেলিগ্রাফ’- এর একটি রিপোর্ট আসে আমার হোয়াটস্অ্যাপে। সেটি পড়ে ক্ষোভে-দুঃখে-বেদনায় আমি নির্ঘুম রাত কাটাই।

মহান আল্লাহ শেখ হাসিনাকে অসংখ্যবার নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে আমাদের জন্যে ফিরিয়ে দিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে নিয়ে রচিত তুমি ভূমিকন্যা কবিতায় আমি লিখেছি:

‘শেখ হাসিনা, জনগণমননন্দিত নেত্রী/আমাদের ফিনিক্স পাখি তুমি/অগ্নিস্নানে শুচি হয়ে বারবার আসো/তুমি ভূমিকন্যা- তুমি প্রিয় মাতৃভূমি।’

তাঁর জন্মদিনে শেষ দুই পঙ্ক্তি খচিত করে আওয়ামী লীগ পোস্টার প্রকাশ করেছে। আমরা সর্বদাই তাঁর নিরাপদ, সুস্থ্য ও সম্মানিত দীর্ঘ জীবনের জন্যে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি। তাই, শেখ হাসিনাকে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে চাই গরিব-অসহায় মানুষের জন্যে; সকল নাগরিকের উন্নত জীবনের জন্যে; করোনা-উত্তর নতুন বাংলাদেশের জন্যে।

আশার কথা, গত ১০ই জুন বিরোধদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান দেশের বিপজ্জনক করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে বাসভবন থেকে সংসদে ভার্চুয়ালি যোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেন। স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার কথা ভেবে বাসভবন থেকে যুক্ত হলে ভালো হয় বলে মত দিয়েছেন। বিস্মিত হয়ে ভেবেছি- তবে কি আওয়ামী লীগ বা চৌদ্দ দলের কেউ সেদিন জাতীয় সংসদে ছিলেন না! আমি মাননীয় স্পিকার ও সম্মানিত বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। সেই সঙ্গে আজকে অসীম কৃতজ্ঞতায়, ভালোবাসায় ও স্নেহের অধিকারে ব্যথিতচিত্তে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে সবিনয়ে বলি: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের বাঁচাতে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর, আপনার ও শেখ রেহানার বাংলাদেশকে বাঁচাতে আপনি ভার্চুয়াল মাধ্যমে সব কাজ করুন। জাতীয় সংসদে যোগ দিন; আলাদা কক্ষ থেকে সকল সভায় সভাপতিত্ব করুন; বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সংক্রমণমুক্ত করে ফাইল-পত্র স্বাক্ষর করুন; করোনাকালের সকল রকম স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করুন। আমরা আপনার সব নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলছি। আপনি আমাদের সবিনয় অনুরোধটুকু রাখুন! আপনি ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকবো; বাংলাদেশ ভালো থাকবে।

লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। লেখাটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর থেকে সংগৃহীত।