অনলাইনে ক্লাসঃ সমস্যা ও সম্ভাবনা


Dhaka | Published: 2020-06-29 05:17:55 BdST | Updated: 2024-09-29 04:46:23 BdST

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস এর কারণে সরকার গত মার্চ মাস থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় দফায় দফায় বাড়তে থাকে এ ছুটি। আগামী আগষ্ট মাস এমনকি সেপ্টেম্বর পর্যন্তও আসতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা।

এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতোমধ্যেই অনলাইন ক্লাস এর উদ্যোগ নিয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে চলছে অনলাইন ক্লাস। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাসে উপস্থিত হচ্ছে, পরীক্ষা এসাইনমেন্ট এর কাজও সম্পন্ন করে যাচ্ছে।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ৪৬ টি পাবলিক এবং স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। পড়াশোনা করছে কয়েক লক্ষ শিক্ষার্থী। কভিড-১৯ এর ভয়াবহতার জন্যে শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ সেশনজটে পড়ার আশংকায় আছে। সেশনজট নিরসনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে আগামী পহেলা জুলাই থেকে অনলাইন ক্লাসে যেতে।

নিঃসন্দেহে উদ্যোগটি যুগোপযোগী এবং প্রশংসনীয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও সাধুবাদ জানাচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের জন্যে কতটুকু সফল হবে তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে, যৌক্তিক প্রশ্ন উঠতেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ এখনো বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান করছে। যেখানে পর্যাপ্ত ইন্টারনেট সুবিধা নেই। ঘাটতি রয়েছে উন্নত ইন্টারনেট গতির। এছাড়া কারো কারো ক্ষেত্রে ইন্টারনেট দূরের কথা স্মার্ট ফোনই নেই।এ অবস্থায় অনলাইন ক্লাস চালু করলে প্রায় ৪০ ভাগ শিক্ষার্থী এ শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেটি কোনভাবেই করতে পারে না।

উন্নত ইন্টারনেট এর সুব্যবস্থা না করতে পারলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করা অনেকটা মাটির ঘরে ডেস্কটপ কম্পিউটার চালানোর মতই।

তারউপর অনেক শিক্ষক আছেন যাদের অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করার দক্ষতা নেই। তবে হ্যা, যেখানে সমস্যা আছে, সেখানে সুষ্ঠু সমাধানও আছে। এ বিষয়ে শিক্ষকদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ অনেক বেশি জরুরি।

তাছাড়া ক্লাসে শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্ন উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা শিক্ষার্থীদের ফোনে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইন্টারনেটের ডাটা এবং ইন্টারনেটের দ্রুত গতি নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রত্যেকটি সিম কোম্পানির সাথে গঠনমূলক আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি সমঝোতায় আসতে পারে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ফোনে 3G, 4G ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

অন্যথায় অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা বরং নিরুৎসাহিত হবে বলেই মনে করছি।

অন্যদিকে, লকডাউনের বর্তমান সময়টাতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের ব্যক্তিগত দক্ষতা উন্নয়নেও নজর দিতে পারে। তথ্য এবং গবেষণাধর্মী নতুন নতুন কাজ করার উদ্যোগ নিতে পারে।

মহামারী পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ আগের মত ফিরিয়ে আনতে যেন আলাদাভাবে সময় নষ্ট না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক এবং প্রশাসন একত্রে বসতে পারে। পরিকল্পনা করতে পারে। ক্লাস, পরীক্ষার শিডিউল কিভাবে সাজালে সেশনজট এড়ানো যাবে সে ব্যাপারে কাজ করতে পারে।

আর সব রকম সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে অনলাইন কার্যক্রম সফলতার মুখ দেখুক এটিই শিক্ষার্থীদের চাওয়া। ৪৬ টি পাবলিক এবং স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশন(ইউজিসি) সরকারের সঙ্গে দ্রুত পরামর্শ করবে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। পরীক্ষা কিংবা ল্যাব চালিয়ে নেয়া অনেকটা অসম্ভব হলেও অন্তত অনলাইনে ক্লাস নেয়ার সকল সুবিধা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবী, অতীব জরুরি।

লেখক: ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয়
শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।