কেমন আছো শতবর্ষে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়?


Dhaka | Published: 2020-07-01 04:27:52 BdST | Updated: 2024-09-29 04:48:25 BdST

প্রিয়তমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,
কেমন আছো ৯৯ বছর পেরিয়ে?

তোমার জন্মটা খুব একটা ভালো সময়ে হয়নি। অবহেলিত জনপদের মানুষের মাঝে আলো ফোটাতে তোমার জন্ম হয়েছিলো ১৯২১ সালে। এরপর তোমার যৌবনেই তুমি কত রঙ ঢঙ দেখেছো; দেখছো অপরের বাড়িতে দাসী থাকা জনপদকে দুই পরিবারে ভাগ হতে। তোমার ভরণপোষণের দায়িত্ব দেয়া হলো বন্য শ্বাপদ এক শকুন পরিবারের হাতে।

ততদিনে তুমি বিপ্লবী যৌবনা। নিজের ভাষার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে তুমি সফল হয়েছো। ততদিনে তোমার উপর জনপদের সকলের আশা ভরসা বেড়ে গেলো, তুমিও হতাশ করোনি। ছিষট্টির ছয় দফা, একাত্তরের তুমুল লড়াই অসভ্য বর্বর পরিবারের বিরুদ্ধে। তোমার যৌবনদীপ্ত বীরত্ব সফল। তুমি একটি নতুন পরিবার জন্ম দিলে। নতুন পরিবারের দায়িত্ব দিলে একজন মহান কারিগরের হাতে যে কিনা তোমারই সন্তান তোমার চেয়েও একবছরের বড় যিনি। কিন্তু প্রেতাত্মারা তাকে বাঁচতে দেয়নি। শুরু হলো তোমার দৈন্য দশার। এরপর বিভিন্ন বন্য তোমাকে শাসন করেছে।

তোমার বার্ধক্য চলে এসেছে সম্ভবত। তোমার থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছিলো ডাকসু নামক গনতন্ত্র। যা তোমার যৌবন, তোমার রূপ এবং সৌন্দর্য। কেউ ফিরিয়ে দিতে পারেনি। এই জনপদের পরিচালকরা চাইলেও বিশ্ববিদ্যালয় যন্ত্র চায়নি অনেক সময়। অনেক সময় ডাকসুর বদলে অস্ত্রের ঝনঝানিতে ঝাঝরা করেছে বন্য শাসকেরা। তারা তোমার বুকে বীর দর্পে যেভাবে হেঁটেছে ভয় হয়েছিলো, আর লজ্জাও। অবশেষে তিন দশক পর ডাকসু পেয়েছো তুমি। সেটা তোমার আরেক সন্তানের প্রত্যক্ষ নির্দেশেই। এটা আমাদের ভাগ্যও বলতে পারো।

সময়ে সময়ে তোমার রূপ মলিন হয়েছে আবার তোমার সম্তানরাই ফিরিয়ে এনেছে। তারপরও তোমাকে ভালোবাসি যেমনি করে সহয় সম্বলহীন পিতামাতাকে কোনো আদর্শিক সন্তান ফেলে দিতে পারেনা।

এতসব কিছুর পরও কেমন আছো তুমি? করোনা মহামারীতে ভালো থাকার কথা না। শততম দিন আজ তোমর সন্তানেরা তোমার থেকে দূরে। সন্তানবিহীন খুব কম সময় থেকেছো তুমি।

তোমার বার্ধক্য চলে আসলেও হাজারো স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দু তুমি। তোমার জন্য কতজন দিনরাত এক করে সমাজ থেকে অন্তরালে গিয়ে কত কষ্টই না করছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে কিছুই চায় না শুধু তোমার সন্তান হতে চায়। হয়তো তুমি এগুলো জানো এবং মনে মনে হাসোও বটে। কিন্তু তুমি কি জানো তুমি লক্ষ লক্ষ তরুনের আবেগ, প্রথম স্বপ্ন এবং ভালোবাসার সর্বশেষ আশ্রয়স্থল।

তোমাকে ভালো থাকতে হবে। তুমি ভালো থাকলেই তো এই জনপদের মানুষ ভালো থাকবে। নিজের যত্ন নিবে। তোমার সকল সন্তানদের অভিনন্দন যাদের জন্য তুমি চির যৌবনা।

শুভ জন্মদিন, বাংলা জনপদের আশা আকাঙ্খার একমাত্র ভরসাস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

লেখক: মুহা মাহমুদুল হাসান, সদ্য সাবেক সদস্য-ডাকসু