কিংবদন্তি নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিন


Dhaka | Published: 2020-07-18 20:28:22 BdST | Updated: 2024-06-26 17:05:21 BdST

আজ ম্যান্ডেলা ডে। দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার ১০৩তম জন্মদিন। বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াইয়ের জন্য এ বিশ্বনেতার জন্মদিনকে ‘ম্যান্ডেলা ডে’ হিসেবে উদ্‌যাপন করা হয়। ২০০৯ সালের নভেম্বর জাতিসংঘ ১৮ জুলাই ম্যান্ডেলার জন্মদিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যান্ডেলা ডে হিসেবে ঘোষণা করে।

ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশন এ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। এর মধ্যে ম্যান্ডেলা বক্তৃতা অন্যতম। প্রতিবছর বিশ্বের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ম্যান্ডেলা বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। ২০০৯ সালে ম্যান্ডেলা বক্তৃতা দিয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ইতিপূর্বে ম্যান্ডেলা বক্তৃতা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, দক্ষিণ আফ্রিকার নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী আর্চ বিশপ ডেসমন্ড টুটু, কেনিয়ার মন্ত্রী ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ওয়াঙ্গারি মাথাই, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট থাবো এমবেকি, জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান এবং লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট এলেন জনসন সারলিফ।

ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে অধ্যাপক ইউনূসের প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে আমার দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। সেই সুবাদে ম্যান্ডেলার সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং ম্যান্ডেলা ডেতে আয়োজিত নানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছে। ম্যান্ডেলার মতো একজন বিশ্বনেতার সাক্ষাৎ পাওয়া দুর্লভ বটে। এ ধরনের মানুষেরা স্বপ্নের মতো। তাঁদের কাছ থেকে দেখা, কথা বলা বা ছুঁয়ে দেখা এক অন্য রকমের অনুভূতি। ম্যান্ডেলা এমন এক ব্যক্তি, যিনি দেশমাতৃকার জন্য জীবনের ২৭টি বছর অন্ধকার কারাপ্রকোষ্ঠে অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করেছেন, বর্ণবাদী সরকারের নানা প্রলোভন সত্ত্বেও যিনি নীতি ও আদর্শে অবিচল থেকেছেন, ক্ষমতার মোহ যাকে বিন্দুমাত্র প্রলুব্ধ করতে পারেনি, তাঁকে দেখলে শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে।

ম্যান্ডেলার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ফাউন্ডেশনের একজন কর্মকর্তা হোটেল ওয়েস্টক্লিফ থেকে আমাদের ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশনে নিয়ে গেলেন। জোহানেসবার্গের হফটন এলাকার সেন্ট্রাল রোডে ফাউন্ডেশনের পরিপাটি অফিস। অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে ম্যান্ডেলার বৈঠকের একপর্যায়ে আমাদের তাঁর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হলো। বয়সের ভারে ন্যুব্জ অথচ শান্ত-সৌম্য ও দৃঢ়চেতা ম্যান্ডেলা সোফায় বসে আছেন। অধ্যাপক ড. ইউনূস আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন।

ম্যান্ডেলার জন্ম ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই ট্রান্সকির প্রত্যন্ত গ্রাম ভেজোতে। তাঁর বাবা হেনরি ছিলেন টেম্বু গোত্রপ্রধান। জন্মের পর বাবা তাঁর নাম রাখেন রোহিলাহলা, যার অর্থ ‘ট্রাবল মেকার’। ম্যান্ডেলা যখন খুব ছোট, তখন একটি ঘটনা তাঁদের পরিবারকে সর্বস্বান্ত করে দেয়। এক ব্যক্তি শ্বেতাঙ্গ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগ করেন যে হেনরির একটি ষাঁড় তাঁর খেতের ফসল নষ্ট করেছে। ম্যাজিস্ট্রেট হেনরিকে তাঁর অফিসে তলব করেন। হেনরি ছিলেন একগুঁয়ে স্বভাবের মানুষ। তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যেতে অস্বীকার করলেন। ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর বিরুদ্ধে অবাধ্যতার অভিযোগ আনেন। সেই সঙ্গে তাঁকে গোত্রপ্রধানের পদ থেকে পদচ্যুত করেন এবং তাঁর গবাদিপশু ও জমি-জিরাত বাজেয়াপ্ত করেন। তারপর পৈতৃক ভিটা ছেড়ে তিনি পার্শ্ববর্তী কুনুতে বসতি গড়েন। সাত বছর বয়সে হেনরি ম্যান্ডেলাকে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করে দেন। স্কুলের শিক্ষকেরাই তাঁর নাম রাখেন নেলসন।

ম্যান্ডেলার গোত্রনাম হচ্ছে মাদিবা। দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণ ভালোবেসে তাঁকে মাদিবা নামে ডাকে। ম্যান্ডেলার বয়স যখন মাত্র ৯ বছর, তখন তাঁর বাবা ফুসফুসের রোগে মারা যান। মৃত্যুর কিছুদিন আগে হেনরির বন্ধু জঙ্গিনটাবা (টেম্বু রাজার প্রতিভু) তাঁকে দেখতে আসেন। হেনরি জঙ্গিনটাবাকে তাঁর ছেলের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেন। জাঙ্গিনটাবা তাঁকে কথা দেন, রোহিলাহলাকে তিনি উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। বাবার মৃত্যুর পর ম্যান্ডেলা জঙ্গিনটাবার কিউহিকিজ্যুইনির গ্রেট প্যালেসে আশ্রয় পান। জঙ্গিনটাবা তাঁকে নিজের ছেলের মতো প্রতিপালন করেন। ম্যান্ডেলা জঙ্গিনটাবার ছেলে জাস্টিস ও সাবাটা এবং মেয়ে নেমাফু ও জিজোর মতো রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে বড় হতে থাকেন।

গোত্রপ্রথা অনুযায়ী কৈশোরোত্তীর্ণ ম্যান্ডেলা ও জাস্টিসকে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খৎনা করানো হলো। অনুষ্ঠান শেষে জঙ্গিনটাবা তাঁদের ডেকে বললেন, তোমরা এখন বয়ঃপ্রাপ্ত হয়েছ। তোমাদের বিয়ে দেওয়া আমার কর্তব্য। আর এই কর্তব্য আমি খুব শিগগির শেষ করতে চাই। দুশ্চিন্তায় পড়লেন ম্যান্ডেলা ও জাস্টিস। এখন কিছুতেই তাঁরা বিয়ে করবেন না বলে পণ করলেন। কিন্তু জঙ্গিনটাবার আদেশের অন্যথা হওয়ারও তো কোনো জো নেই। অগত্যা তাঁরা জোহানেসবার্গে পালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। হাতে কোনো টাকাপয়সা নেই, কী করা যায়? শেষমেশ চুরি করে জঙ্গিনটাবার কয়েকটি গরু বিক্রি করে রওনা হলেন জোহানেসবার্গের ট্রেন ধরতে। টিকেট কাটতে গেলে স্টেশনমাস্টার তাঁদের পারমিট দেখতে চাইলেন। ওই সময়ে বর্ণবাদী সরকারের আইন ছিল, কোনো কৃষ্ণাঙ্গ এক শহর থেকে অন্য শহরে যেতে চাইলে কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্রের প্রয়োজন হতো। কিন্তু শ্বেতাঙ্গদের তত্ত্বাবধানে ভ্রমণ করলে কৃষ্ণাঙ্গদের পারমিটের প্রয়োজন হতো না। তাঁরা স্টেশনে অপেক্ষমাণ জোহানেসবার্গের যাত্রী এক শ্বেতাঙ্গ বৃদ্ধার শরণাপন্ন হলেন। বৃদ্ধাকে অনুনয়-বিনয় করলেন তাঁদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বৃদ্ধা রাজি হলেন, তবে টাকার বিনিময়ে। গরু বিক্রি করে যে টাকা তাঁরা পেয়েছিলেন, তার প্রায় পুরোটাই বৃদ্ধাকে দিতে হলো। জোহানেসবার্গে পৌঁছে তাঁরা বৃদ্ধার গৃহভৃত্যদের সঙ্গে রাত কাটালেন। পরদিন কাজের সন্ধানে বের হলেন এবং কাজ জুটলো একটি কয়লাখনিতে। জঙ্গিনটাবা এত প্রভাবশালী ছিলেন যে শ্বেতাঙ্গরাও তাঁকে বেশ সমীহ করতেন। সহজেই তিনি তাঁদের খোঁজ পেলেন। তাঁর পরামর্শেই খনি থেকে ম্যান্ডেলা ও জাস্টিসকে ছাঁটাই করা হলো।

ম্যান্ডেলার জীবন ছিল বৈচিত্র্যময়। ছিলেন রাখাল, মিশনবয়, খনি পুলিশ, ল ফার্মের কেরানি, মুষ্টিযোদ্ধা, আইনজীবী, রাজনৈতিক কর্মী, গেরিলাযোদ্ধা, বিপ্লবীনেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক। বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ম্যান্ডেলা অলিভার ট্যাম্বো ও ওয়াল্টার সিসুলুকে নিয়ে এএনসির যুব সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। যুবসমাজকে বর্ণবাদী আইন অমান্য ও স্বেচ্ছা কারাবরণে উদ্বুদ্ধ করে চলমান আন্দোলনে গতি সঞ্চার করেছেন। হুলিয়া মাথায় নিয়ে দেশজুড়ে কর্মীদের সংগঠিত করেছেন, ছদ্মবেশে দেশত্যাগ করে আফ্রিকার নানান দেশ সফর করেছেন। ওই সব দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছ থেকে এএনসির জন্য সমর্থন, অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহ করেছেন। সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে গেরিলা যুদ্ধ করেছেন। যৌবনে নেহেরুর আদর্শ তাঁকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছিল। প্রায়ই তিনি নেহেরুকে উদ্ধৃত করে বক্তৃতা শেষ করতেন, ‘স্বাধীনতার সোজাসাপটা কোনো পথ নেই। আপনারা দেখেছেন, পৃথিবীর কোথাও সহজভাবে স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি। পাহাড়ের শীর্ষদেশে আরোহণের আগে আমাদের বারবার ছায়ামৃত্যু উপত্যকার ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতে হবে।’ সোয়েটো হত্যাকাণ্ডের পর জেল থেকে তিনি সহযোদ্ধাদের কাছে মর্মে বার্তা পাঠান যে ‘যারা অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা আকঁড়ে থাকতে চায়, তাদেরকে অস্ত্র দিয়েই বিতাড়ন করতে হবে।’

আবার পরিণত বয়সে আমরা ম্যান্ডেলাকে গান্ধীবাদে উদ্বুদ্ধ হতে দেখি। বন্দিজীবনে বর্ণবাদী সরকারের মন্ত্রী ও পদস্থ কর্মকর্তারা তাঁকে অসংখ্যবার শর্ত সাপেক্ষে মুক্তির প্রস্তাব দেন। কিন্তু প্রতিবারই তিনি সব প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে দৃঢ়কণ্ঠে বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি লড়াই করবেন। তাঁর এ দৃঢ়চেতা মনোভাব তাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয়তাবাদের প্রতীকে পরিণত করে।

ম্যান্ডেলার ৬০তম জন্মদিনে খোদ লন্ডন টাইমস তাঁকে ‘আফ্রিকার জাতীয়তাবাদের জলজ্যান্ত মূর্তি’ বলে আখ্যায়িত করে। আবার আমরা এই ম্যান্ডেলাকেই তাঁর মুক্তি ও ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে বন্দী অবস্থায় সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করতে দেখি। সেই সঙ্গে আমরা এ–ও লক্ষ করি, অসম্ভব জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও তিনি এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে পার্টির মনোভাব জানার চেষ্টা করেছেন এবং নেতাদের পরামর্শ গ্রহণ করেছেন। গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্নœনেতৃত্বের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো, মুক্তির পরপরই জেলগেটে এএনসির কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে বৈঠক। এ বৈঠকে তিনি পার্টির অবস্থা সম্পর্কে অবগত হলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি জানার চেষ্টা করলেন। এমনকি কারান্তরীণ থেকে বেরিয়ে তিনি কী বক্তব্য দেবেন, তা–ও নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে নিলেন। মুক্তির পর তিনি এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেন। দাঙ্গাবিক্ষুদ্ধ দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ চরম বৈরিতাপূর্ণ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি তিনি ঘটাতে পারবেন কি না? অত্যাচারী ও শোষক শ্বেতাঙ্গদের সঙ্গে নিগৃহীত ও বঞ্চিত কালো মানুষেরা এক পতাকাতলে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারবে কি না? এসব প্রশ্নে চরম আশাবাদীরাও ছিলেন শঙ্কিত ও দ্বিধান্বিত।

ম্যান্ডেলা তাঁর সম্মোহনী শক্তি দিয়ে গোটা জাতিকে অহিংসা ও ক্ষমার আদর্শে উদ্বুদ্ধ করলেন। এতে তিনি বর্ণবৈষম্য একেবারে মুছে দিতে না পারলেও কালো-শ্বেতাঙ্গদের সহাবস্থানের অনন্য এক নজির সৃষ্টি করতে সক্ষম হলেন। কাজটি কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না। ম্যান্ডেলার সহাবস্থানের নীতিকে খোদ এএনসির অনেক নেতাই মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু ম্যান্ডেলা দেশের ভবিষ্যৎ চিন্তা করেছেন। তাই আফ্রিকার অন্যান্য দেশের মতো ‘শ্বেতাঙ্গ খেদাও’ আন্দোলনে তিনি যাননি। এমনিতেই দক্ষিণ আফ্রিকা সন্ত্রাস ও দারিদ্র্যের জাঁতাকলে পিষ্ট, তার ওপর দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা। ফলে সংগত কারণেই ম্যান্ডেলা শ্বেতাঙ্গদের তাড়িয়ে দেশের অর্থনীতিতে ধস নামার ঝুঁকি নিতে চাননি। অন্যদিকে শ্বেতাঙ্গ খেদাও আন্দোলনে গিয়ে তিনি পশ্চিমা বিশ্বকেও চটাতে চাননি। ১৯৯৪ সালের নির্বাচনে এএনসি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সত্ত্বেও জাতীয় সংহতির স্বার্থে তিনি পরস্পরবিরোধী প্রতিপক্ষকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বশেষ শ্বেতাঙ্গ প্রেসিডেন্ট পি ডব্লিউ বোথাকে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট করলেন। কট্টর শ্বেতাঙ্গবিরোধী এবং দাঙ্গাবাজ জুলুনেতা মনগোসুথু বুথেলজিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন, ম্যান্ডেলা যত দিন বেঁচে থাকবেন তত দিন দেশের ক্ষমতা হাতছাড়া করবেন না। কিন্তু তিনি এ ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করে ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে প্রার্থীই হলেন না।

ইতিহাসে এমন অসংখ্য নজির আছে যে জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে অনেক নেতাই পরবর্তীকালে স্বেচ্ছাচারী একনায়কে পরিণত হয়েছেন। কিন্তু ম্যান্ডেলা ছিলেন ব্যতিক্রম। মাহাত্মা গান্ধীর পর সম্ভবত তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁকে ক্ষমতার ক্লেদ স্পর্শ করতে পারেনি। আর তাই ম্যান্ডেলা তাঁর দেশের সীমা ছাড়িয়ে সবার কাছে এক আদর্শ হয়ে উঠেছিলেন। যে আদর্শ বিশ্ববাসীকে ক্ষমতা ও সম্পদের প্রতি নির্মোহ থাকতে এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণের ভেদরেখামুক্ত এক মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ করে।

*লেখক: মোস্তফা কামাল, গ্রামীণ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার