
আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পর্নোগ্রাফির চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আর করোনা কালীন সময়ে সেই ঝুঁকি আরও প্রকট আকার ধারন করেছে। অনলাইনের ক্লাসের কারণে স্কুলের বাচ্চাদেরও সারাদিন অনলাইনে থাকতে হয়। বাবা-মা বাসায় না থাকলে এই অনলাইন তাদের কোথায় নিয়ে যেতে পারে, তা অজানা নয়।
ঢাকায় ইংলিশ মিডিয়ামের দু'জন শিক্ষার্থীর মধ্যে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। বাবা- মা দুজনেরই ব্যস্ততা সন্তানকে কোন পথে নিয়ে যেতে পারে, তা আবারও খুব ভালভাবে আমাদের স্মরণ করিয়ে দিলো।
আমাদের মনে আরও ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছে এই কথা শুনে যে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে, মেয়েটির সাথে ঘৃণ্য বিকৃত যৌনাচার করার কারণে। মেয়েটির শরীরে " ফরেন বডির" চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে মিডিয়াতে উঠে এসেছে। যা আমাদের আরও আতঙ্কে ফেলেছে। সমাজটা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে তা সহজে অনুমেয়।
মেয়েটির বয়স কম। ছেলেটিও মেয়েটির চেয়ে বয়সে খুব বেশি বড়, সেটিও নয়। তাদের মধ্যে সামান্য ২-৩ মাসের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। বাবা- মায়ের অনুপস্থিতে মেয়েটিকে বাসায় ডেকে নেয় ছেলেটি। এই ধরনের ঘটনা ঢাকা শহরে অহরহ ঘটছে। কিন্তু দিহান ও আনুশকার মত বিষয়গুলো বাইরে আসেনা। প্রতিটি দুর্ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে সতর্ক হওয়ার বার্তা প্রদান করে।
আমাদের সমাজে কিছু তথাকথিত সেলিব্রিটি রয়েছে, যারা স্কুলের বাচ্চাদের বিভ্রান্ত করে। তারা ক্যাম্পেইন করে " তুমি যদি ফ্রেন্ডদের সাথে রাত্রে sleep over করতে চাও, তোমার এটা করতে পারা উচিত!" এইসব সেলিব্রিটিরা ছেলেমেয়েদের অবাধ চলাফেরা ও গ্রুপ স্টাডির ক্যাম্পেইন করে।
স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা গ্রুপ স্টাডি ও অবাধ চলাফেরার জন্য পরিণত কি না, সেটা আমাদের সেলিব্রিটিরা অনুধাবন করতে ব্যর্থ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট ম্যাচুউরড। আর এজন্যই বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় মুক্তচিন্তা ও চর্চার জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রুপ স্টাডি কারার জন্য সুশৃঙ্খল লাইব্রেরি ও রিডিং রুম রয়েছে। স্কুল কলেজে সে-ধরনের নিরাপদ স্থান নেই এবং সেই মানসিকতাও এই বয়সে হয়না।
কিন্তু তথাকথিত সেলিব্রিটিরা বাংলাদেশকে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সাথে মেলাতে চায়। কিন্তু দীর্ঘদিনের বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা থেকে বেরিয়ে এসে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির চর্চা আমাদের ছেলেমেয়েদের কোন পথে নিয়ে যেতে পারে, তা দিহান ও অনুশকা থেকে নিশ্চয়ই আমরা বুঝতে পারছি।
সমাজে এমন ঘটনা আর না ঘটুক। আর কোন অনশকাকে অকালে প্রাণ হারাতে না হোক। আর কোন বাবা- মাকে এভাবে আর কাঁদতে না হোক, সেটিই কাম্য। ছেলেমেয়েদের কেন কড়া নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে, তা আশা করি সকলেই বুঝতে পারছেন।
১। আপনার ছেলেমেয়ে মোবাইলে কার সাথে যোগাযোগ করছে, সেটির খোঁজ রাখুন। কাদের সাথে মিশছে, জানার চেষ্টা করুন।
২। অনলাইনে ক্লাস পরীক্ষার সময় পুরোটা সময়, সন্তানের পাশে বসে থাকুন। অভিভাবক হিসেবে বসে থাকলে, সন্তান মানসিক শক্তি পাবে।
৩। স্কুল ও কলেজে সঠিক সময়ে গেলো কি না, স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানার চেষ্টা করুন।
৪। বাসায় যথাসময়ে ফিরলো কিনা, দেরিতে ফিরলে জবাবদিহিতা নিন।
৫। স্কুল-কলেজে যাওয়ার জন্য যোগাযোগের জন্য বাটন ফোন ব্যবহার করতে দিতে পারেন। ছোট ছেলেমেয়ের হাতে স্মার্টফোন তুলে দিবেন না।
৬। বাসায় কম্পিউটার ব্যবহার করলে, সার্চ হিস্ট্রি চেক করুন।
৭। মোবাইল বা কম্পিউটার ডিভাইসে এডাল্ট কন্টেন্ট ব্লক করে রাখুন।
৮। ইন্টারনেটে চাইল্ড লক দিয়ে রাখতে পারেন।
৯। সন্তানের আচার-আচরণে খেয়াল রাখুন।
১০। অভিভাবক হিসেবে সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিন। মাঝেমধ্যে সন্তানকে সাথে নিয়ে দর্শনীয় স্থান, পার্কে ঘুরতে যান। সন্তানকে শরীরচর্চা ও খেলাধুলায় মনোনিবেশ করুন।
১১। সন্তানদের মধ্যে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের বিকাশ ঘটান।
রাশেদ খান - ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ