করোনা সংকটে পর্যটন শিল্পের পাশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী


Dhaka | Published: 2021-07-17 03:42:35 BdST | Updated: 2024-04-24 16:28:55 BdST

ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া
অধ্যাপক
ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

করোনা মহামারীর এইসময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাছিনা এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিভিন্ন বিপর্যয়ের সময়ে দেখা যায় বিভিন্ন শিল্পের সাথে জড়িতদের আর্থিক সহায়তা বা প্রণোদনা দেওয়া হয়। কিন্তু এই প্রথম পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িতদের করোনা মহামারীর ক্ষতি পুষিয়ে উঠার জন্য স্বল্পসুদে ১০০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এতে করে বর্তমানের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার সহায়ক হবে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সুদূর প্রসারি চিন্তার প্রতিফলন হিসাবে ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ১ জানুয়ারি ১৯৭৩ সাল থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। সেই থেকে এই দেশে যাত্রা শুরু হয় পর্যটন শিল্পের।

বাংলাদেশে বিগত প্রায় একদশক ধরে ধারাবাহিকভাবে পর্যটন শিল্পে উন্নতি করে যাচ্ছে। তবে করোনাভাইরাসের থাবায় এই গতি অনেকটাই কমে গেছে। দেশের বেশীরভাগ পর্যটন এলাকা এখন শূন্য। ফলে এই শিল্পের সাথে জড়িত সকল ব্যবসায়ী, কর্মী ও স্থানীয় জনগনের অবর্ননীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সারা বিশ্বের পর্যটন শিল্পের বর্তমান সংকট প্রায় একই রকম। এর থেকে উত্তরনের জন্য দেশগুলো নিজেদের দিক নির্দেশনা ঠিক করছে। পাশাপাশি পর্যটন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও উন্নয়ন ও গবেষনা সংস্থাগুলোর পরামর্শ নিয়ে কাজ করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য পর্যটনের সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষতগ্রস্থ সকলের জন্য বিশেষ সহায়তা প্রদান করছে। বাংলাদেশ সরকার ও সেই পদক্ষেপ নিয়েছে।

অপূর্ব সৌন্দর্যের আধার বাংলাদেশ যার প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্যের কোনো অভাব নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামের অকৃত্রিম সৌন্দর্য, সিলেটের সবুজ অরণ্যসহ আরও অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের বাংলাদেশ। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর একমাত্র দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত, যা আর পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। ১২০ কিমি. দীর্ঘ সৈকত টিতে কাদার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। তাই তো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমুদ্র সৈকতের চেয়ে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এবং এর রয়েছে অপার সম্ভাবনা। বর্তমানে কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে নেয়া হচ্ছে নানা পরিকল্পনা।

সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগরের পাড়ে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক আকর্ষণে কক্সবাজারে তিনটি পর্যটন পার্ক তৈরির পরিকল্পনা করেছে বর্তমান সরকার। প্রতি বছর এতে বাড়তি ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ তিনটি ট্যুরিজম পার্ক হল সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক।

কক্সবাজারে একটি বেসরকারি সংস্থা ২.৬৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী৷ সেখানে তারা উন্নত মানের ফাইভ স্টার হোটেল, বিনোদন উপযোগী স্থান তৈরি করা, বিলাসবহুল কার পার্কিংসহ যোগাযোগ খাতে অর্থ বিনিয়োগ করবে। তাছাড়া পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা তৈরি করতে এরই মধ্যে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটি সম্পন্ন হওয়ার পর সেখানে থাকা স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দেশের পর্যটন উন্নয়নের স্বার্থে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে।পর্যটন মহাপরিকল্পনা অনুসারে কাজ করলে দেশে এ খাতের গুণগত ও আঙ্গিকগত পরিবর্তন হবে এবং তা আমাদের পর্যটন শিল্পের বিকাশে সহায়ক হবে। পর্যটন শিল্পের গুণগত পরিবর্তন আনতে কক্সবাজার ও সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ‘এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন’ গড়ে তোলার জন্যে কাজ চলছে। দেশের এই এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোনগুলোতে প্রচুর সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

তাছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এইদেশের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে যা দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। যেগুলোর বাস্তবায়ন এইদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে ও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। দ্রুতগতিতে চলছে প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক পদ্মা বহুমুখী সেতুসহ ১০ মেগা প্রকল্প ও একশ’ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণকাজ।

ভবিষ্যতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখার ভিত্তি রচনার ক্ষেত্রে এই দশ মেগা প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সরকারের এই দশ মেগা প্রকল্প হচ্ছে- পদ্মা বহুমূখী সেতু প্রকল্প, ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, কয়লা ভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্প এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প।

অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পাদিত গত ১০ বছরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই দশ মেগা প্রকল্পের বাইরেও ২০৩০ সালের মধ্যে মোট ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে মোট ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইপিজেড) প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলছে। ২০১০ সালে ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন’ প্রণয়নের মাধ্যমে এ কার্যক্রমের সূচনা হয়েছিল।সরকারের প্রত্যাশা, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো (ইপিজেড) তৈরি হলে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রফতানি আয় সম্ভব হবে। একইসঙ্গে এই ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশের এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ‘পদ্মাসেতু রেল সংযোগ নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে মাওয়া থেকে পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে রেললাইন জাজিরা, শিবচর, ভাঙ্গা জংশন হয়ে ভাঙ্গা স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত হবে।

এতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোর জেলা সংযুক্ত হবে। তাছাড়া দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইন প্রকল্পটি হলে কক্সবাজারের সঙ্গে রেলযোগাযোগ বাড়বে। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে এই প্রকল্প। ট্রান্স এশিয়ান রেলের অর্ন্তভুক্ত এই সংযোগটি বাংলাদেশ হয়ে মিয়ানমার চলে যাবে। ২০২২ সালের মধ্যেই এ প্রকল্পটি সম্পন্ন হবে।

করোনা মহামারীর মধ্যেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এতে করে সারা দেশের মানুষ উপকৃত হচ্ছে। পর্যটন শিল্পের চরম অবস্থায় প্রতি এই প্রণোদনা এক মাইলফলক হয়ে থাকবে।