হায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়!


প্রভাষ আমিন | Published: 2017-11-22 16:27:00 BdST | Updated: 2024-05-11 16:30:23 BdST

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আমার সবচেয়ে প্রিয় বিচরণ ক্ষেত্র। কিছুদিন পড়েছি বলেই নয়, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসের প্রতি আগ্রহের কারণে স্কুলে পড়ার সময় থেকেই এই ক্যাম্পাস আমার হৃদয়ে গেঁথে আছে। আশির দশকে স্কুলে থাকতে এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম। রিকশায় যেতে যেতে কাজী নজরুলের মাজার, মধুর ক্যান্টিন, ডাকসু ভবন, অপরাজেয় বাংলা, মল চত্বর, রেজিস্ট্রার বিল্ডিং দেখে শিহরিত হয়েছি। পরে ছাত্র হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কত দিনরাত একাকার করেছি তার কোনো ইয়ত্তা নেই।

ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে সকালে মধুর ক্যান্টিন, দুপুরে ডাকসু ক্যান্টিন, বিকালে হাকিম চত্বর, সন্ধ্যায় টিএসসি, রাতে শাহবাগে মৌলি-সিলভানা বা আজিজ সুপার মার্কেট, গভীর রাতে মল চত্বর- এভাবে চলতো আমাদের আড্ডার সাইকেল। মনে আছে ৮৮ সালে প্রথম যেদিন টিএসসিতে ঢুকেছি; কেউ একজন গাইছিল, ‘এই নীল মনিহার…’। প্রথম দিনেই টিএসসি সম্পর্কে আামার অনুভূতি ছিল, বাংলাদেশের সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র, তারুণ্যের রাজধানী। সেভাবে নিয়মিত হলে থাকা হয়নি; তবে সূর্যসেন, জিয়া, বঙ্গবন্ধু, জসিমউদ্দিন, মহসিন, জহুরুল হক, শাহনেওয়াজ, জগন্নাথ হল কত হলে যে রাত কাটিয়েছি ইয়ত্তা নেই। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের উত্তাল সময়টা আমাদের কেটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

এই যে এত দিন-বছর কেটেছে তবু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আসার আবেগ একটুও কমেনি। এখনও শাহবাগের মোড় পেরুলেই মনে হয়, আহা এই বুঝি আমার আপন ঘর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মোড়ে মোড়ে আমি খুঁজে ফিরি বাঙালির গৌরবের ইতিহাস। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক আমতলা এখন নেই। কিন্তু সেই আমতলা, ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের মিছিল বেরিয়েছিল যে গেট দিয়ে; সেই গেট দেখে আমি অনুভব করার চেষ্টা করি ভাষা আন্দোলনের উত্তাপ। একটু সামনে আসলে আমার জন্ম সাল ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আসাদের রক্তভেজা স্থানটি দেখে শিহরিত হই।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার তো আমাদের বিপ্লবী চেতনার চিরকালীন আশ্রয়। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট শুরু করেছিল পিলখানা, রাজারবাগ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হামলা দিয়ে। সার্জেন্ট জহুরুল হক হল বা জগন্নাথ হলের গণকবর এখনও সে নির্মমতার সাক্ষ্য বহন করে। টিএসসির উল্টোদিকে লাইব্রেরির কোনার রাস্তায় শহীদ ডা. শামসুল আলম মিলন বা মহসিন হলের মাঠের সামনের রাস্তায় রাউফুন বসুনিয়ার আত্মদানের স্থানটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি।

কার্জন হল, এস এম হল, শহীদুল্লাহ হল, বর্ধমান হাউস- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনায় কোনায় ইতিহাস। মুক্তি সংগ্রামের বিশাল এক জাদুঘর যেন। এখন নতুন নতুন ভবন হচ্ছে বটে, তবুও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখনও সবুজে ঢাকা। শাহবাগ থেকে টিএসসি, এস এস হলের সামনের রাস্তা বা ফুলার রোড- সবুজে নয় যেন মায়ায় ঢাকা। শহীদ মিনারের সামনের গগন শিরিষের সারি যেন প্রাকৃতিক শহীদ মিনার। জন্মের পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ অঞ্চলের মানুষের মানস গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। সকল প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে সামনে থেকে। সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত কয়েক মাসে যা হচ্ছে, তা নিয়ে লজ্জায় আমার মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে বারবার।

সাধারণত সব ইস্যুতেই আমি কিছু না কিছু লিখি। কিন্তু চোখের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অধঃপতন’ দেখেও চোখ বুজেই ছিলাম। আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতিবাচক দিক নিয়ে লিখতে মন সায় দিচ্ছিল না। কিন্তু আমি জানি অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ থাকে না। আমি উটপাখির মত বালিতে মুখ গুঁজে রাখলেই তো আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভালো হয়ে যাবে না। যায়ওনি। শেষ পর্যন্ত শিক্ষকদের মারামারিতে গিয়ে ঠেকেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধঃপতন। আরো কত কি দেখতে কে জানে!


গত ২৯ জুলাই সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দিন কিছু শিক্ষার্থী ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানাতে গেলে শিক্ষকদের বাধার মুখে পড়েন। কয়েকজন শিক্ষক ওই দিন শিক্ষার্থীদের কিল-ঘুষি মারেন এবং ধাক্কা দিয়ে ও কলার চেপে বের করে দেন। শিক্ষার্থীদের মেরে হাত পাকানো শিক্ষকরা এবার মারামরিতে জড়ালেন নিজেরাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নীল, সাদা, গোলাপি রঙে বিভক্ত দীর্ঘদিন ধরেই। সমাজের সবচেয়ে মেধাবী, শিক্ষিত, সচেতন মানুষদের মধ্যে আদর্শিক বিভক্তি থাকতেই পারে। কিন্তু তারা যখন ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের মত মূল দলের অন্ধ আনুগত্য পোষণ করেন এবং তার উদগ্র প্রকাশ ঘটান; তখন আমরা আমজনতা লজ্জা পাই।

কোনো বিভাগের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র, মানে প্রথম শ্রেণি পাওয়া শিক্ষার্থীরাই সংশ্লিষ্ট বিভাগে শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পান। একই বিভাগের দ্বিতীয় শ্রেণি পাওয়া শিক্ষার্থী হয়তো ব্যাংক বা কোনো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে মোটা বেতনে চাকরি করে। সেখানে ব্যাচের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীটি কম বেতনের শিক্ষকতা বেছে নেয়। কেন? কারণ অর্থনৈতিক মাপকাঠি যাই হোক, শিক্ষক বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সমাজে সম্মানের উচ্চ আসনে থাকেন। সবসময় সব বিষয়ে আমরা তাদের কাছ থেকে উচ্চ মান প্রত্যাশা করি। এমনকি কোনো বিরোধ হলেও তাতে আমরা প্রজ্ঞা আর যুক্তির প্রত্যাশা করি। কিন্তু যখন তারা যুক্তির বদলে লাথি-ঘুষি আর চেয়ার নিয়ে একজন আরেকজনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন, আমরা লজ্জা পাই, কারওয়ানবাজারের ছিচকে মাস্তানের সাথে কোনো তফাত খুজে পাই না। আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে যখন দেশে তুমুল সমালোচনা, তখন কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক আরেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা করলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষক জ্ঞানী, উচ্চ প্রজ্ঞার অধিকারী। কিন্তু এক শিক্ষক আরেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন, এক শিক্ষক আরেক শিক্ষককে লাথি মারেন, প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলেন। এ কেমন শিক্ষক!

অনেকদিন ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ছাত্র রাজনীতি নির্বাসিত। ২৭ বছর ধরে হয় না ডাকসু নির্বাচন। ৯০এ স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর গণতন্ত্রের নতুন অভিযাত্রার পর থেকে থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে উল্টো যাত্রা। এখন সেখানে বিরোধী মতের কোনো স্থান নেই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ছাত্রলীগ সর্বেসর্বা, বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে ছাত্রদল। শিক্ষকরা যেন সেই শুন্যতা পূরণ করতে মাঠে নেমেছেন। শিক্ষকদের মধ্যে আওয়ামী লীগ-বিএনপি বিরোধ তো ছিলই। এখন আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যেই প্রবল দুই দল। এতসব মারামারি সব কিন্তু নিজেদের মধ্যেই।

মূল দ্বন্দ্বটা কিন্তু আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে নিয়ে। ছাত্র-শিক্ষক সব মহলে দারুণ জনপ্রিয় আরেফিন সিদ্দিক দুই দফায় ৮ বছর ৭ মাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন তিনি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ। তার তৃতীয় দফায় ভিসি হওয়ার সম্ভাবনাকে সামনে রেখে মাঠে নামে একটি পক্ষ। তারা সফলও হয়। আরেফিন সিদ্দিককে সরিয়ে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য করা হয়েছে অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে। একজনের পরপর তিনবার উপাচার্য হওয়া কাউকে কাউকে ক্ষুব্ধ করতেই পারে। কিন্তু তাই বলে উপাচার্যের দায়িত্ব ছাড়ার সাথে সাথে তার বিরোধী পক্ষ যেভাবে তার এবং তার সমথর্কদের হেয় করতে উঠে পড়ে লেগেছেন; তা শুধু দৃষ্টিকটুই নয়, অশোভনও।

আরেফিন সিদ্দিক দায়িত্ব ছাড়ার কদিন পরেই দায়িত্ব হারাতে হয় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন শফিউল আলম ভুঁইয়াকে। দায়িত্ব পান সাদেকা হালিম। তার দায়িত্ব নেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এমনকি বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। তার দায়িত্বের সময়ই ফাঁস হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন। তবে অস্বীকার করে দায়-দায়িত্ব এড়িয়েছেন তিনি। দায়িত্ব নেয়ার কদিন পরেই সদ্য সাবেক উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিকের রুমের সামনে তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যের বসা নিয়ে হইচই করেছেন। তাদের সেখান থেকে সরে যেতে বলেছেন। এমনকি আরেফিন সিদ্দিকের রুম সরিয়ে দেয়ারও হুমকি দিয়েছেন। আরেফিন সিদ্দিককে কিন্তু উপাচার্য বা সাবেক উপাচার্য হিসেবে পুলিশ নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছিল না। জঙ্গীদের হুমকির কারণেই তিনি পুলিশ নিরাপত্তা পাচ্ছিলেন। এখন যদি ডিন সেই নিরাপত্তা রক্ষীদের বসতেই না দেন, তারা কিভাবে নিরাপত্তা দেবেন? সাদেকা হালিম যখন নিরাপত্তা কর্মীদের ওপর তোপ দাগছিলেন, আরেফিন সিদ্দিক তখন রুমেই ছিলেন।

শুধু আরেফিন সিদ্দিককেই যে নানা ভাবে অপদস্থ করা হচ্ছিল তা নয়। তার সমর্থক শিক্ষকদেরও নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক সামিয়া রহমান ও মাজহফুজুল হক মারজানের বিরুদ্ধে গবেষণাপত্রে মিশেল ফুকো এবং এডওয়ার্ড সাঈদের লেখা চুরির অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। যা হয়, তদন্ত ছাড়াই আমরা গণমাধ্যম দুই শিক্ষকের চরিত্রহননের প্রতিযোগিতায় নামলাম। আর সামাজিক মাধ্যমের তো কোনো মা-বাপ নেই। সামিয়া রহমানের ২০ বছরের ক্যারিয়ার ধসিয়ে দেয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা চললো কয়েকদিন। বিতর্কের ধরন দেখে আমার মনে হয়েছে, সামিয়া রহমানের মূল অপরাধ তিনি আরেফিন সিদ্দিকের প্রিয়ভাজন। এমনকি পিতৃসম আরেফিন সিদ্দিকের সোফার হাতলে বসা সামিয়া রহমানের একটি ছবি নিয়েও তোলপাড় হলো। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য না মিথ্যা তা তদন্ত কমিটি দেখবে। কিন্তু তদন্ত কমিটি বসার আগেই ক্ষতি যা করার তা করা শেষ।

এখন যদি তদন্ত কমিটি রায় দেয় অভিযোগ মিথ্যা, তাহলে কি তার হারানো সম্মান ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য না মিথ্যা আমি জানি না। তবে শুনে আমার কাছে মনে হয়েছে, ঝামেলাটা রেফারেন্সিঙের। আর এ ধরনের ঝামেলা খুঁজতে গেলে ঠগ বাছতে গা উজাড় হয়ে যাবে। তারপরও আমি ধরে নিলাম সামিয়া রহমান ইচ্ছায় হোক আর ভুলে হোক, যথাযথ রেফারেন্স ছাড়া মিশেল ফুকো আর এডওয়ার্ড সাঈদের লেখা ব্যবহার করেছেন। কিন্তু আমরা যারা তার চৌদ্দ গোষ্ঠি উদ্ধার করছি, তাদের অনেকে তো এদের লেখা পড়া তো দূরের কথা নামই শুনিনি কখনো। যাক অন্তত সামিয়া রহমানকে হেয় করতে হলেও আমাদের কেউ কেউ ফুকোর নাম শুনেছি বা পড়েছি; তাই বা কম কি?

৮ বছর ৭ মাস দোর্দণ্ড প্রতাপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাসন করার পর ক্ষমতা হারিয়ে হঠাৎ করে আরেফিন সিদ্দিক দেখলেন তার পাশে কেউ নেই। তিনি আজ এতটাই অপাংক্তেয় হয়ে গেলেন যে, তার কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে সুবিধা পাওয়া শিক্ষকরাই এখন তাকে হেয় করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আরেফিন সিদ্দিকের সময়ে ক্যাম্পাসে রাজনীতির প্রাণচাঞ্চল্য ছিল না। কিন্তু এক ধরনের শান্তি ও স্থিতিশীলতা ছিল। তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত দুর্নীতির অভিযোগ তার অতি বড় শত্রুও তুলতে পারবেন না। ছাত্র শিক্ষক সবার জন্য তার দুয়ার ছিল খোলা। যেখানে নিয়মিত শিক্ষকরাই নিয়মিত ক্লাশ নেন না, সেখানে আরেফিন সিদ্দিক উপাচার্য থাবার সময়ও ক্লাশ নিয়েছেন। টানা দুই মেয়াদ দায়িত্ব পালনের পর নীল দলের শিক্ষকরাই তার তৃতীয় দফার নিয়োগ ঠেকাতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন এবং সফলও হরেছেন। কিন্তু তাই বলে তার আমলের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তুলতে হবে; তিনি কেন এখনও ভিসির বাসা ছাড়ছেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে; তার রুমের সামনে পুলিশ বসে থাকে কেন, তা নিয়ে হইচই বাধাতে হবে? পুরো বিরোধটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসুলভ হলো না। একদম যেন সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ের পাল্টাপাল্টি।

দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদ শিরোনাম হবে গবেষণার জন্য, মেধার জন্য অথবা দেশের কোনো ন্যায্য দাবির প্রশ্নে আন্দোলনের জন্য। কিন্তু চাকা যেন উল্টে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন সংবাদ শিরোনাম হয় শিক্ষকদের মারামারি, শিক্ষকদের মামলা, আটটার মধ্যে টিএসসি ছাড়ার নোটিশ, বুয়েটের শিক্ষার্থীদের সাথে গাজা খাওয়া নিয়ে মারামরি আর উল্টো পথে গাড়ি চালানোর ঘটনায়। বেদনায় আমার বুক ভেঙে যায়। কেউ কি আছে সেই চাকাটা একটু ঘুরিয়ে দিতে পারেন?

লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএননিউজ।

এমআই/ ২২ নভেম্বর ২০১৭