বাগমারায় আ’লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2018-12-02 07:17:43 BdST | Updated: 2024-07-08 02:58:51 BdST

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর এলাকায় দ্বন্দ্বের জের ধরে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে চঞ্চল কুমার (৪২) নামে এক কর্মী নিহত হয়েছেন।

সংঘর্ষের পর শনিবার (০১ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই তার মৃত্যু হয়। বর্তমানে মরদেহ রামেক হাসপাতালের শবাগারে রাখা হয়েছে। এর আগে দুপুরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

বাগমারা-৪ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক ও তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে আবারও মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এনামুল হক। এ নিয়ে তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। আজকের ঘটনার পর উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ সকালে আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতা-কর্মী নিয়ে জামগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বসে সভা করছিলেন। মেয়র আবুল কালাম আজাদ ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। এসময় বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ থেকে সংসদ সদস্য এনামুল হকের সমর্থক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গুলবর রহমান মোবাইল ফোনে তার ভিডিও ধারণ করেন। বিষয়টি টের পেয়ে মেয়রের লোকজন তার কাছে বিষয়টি জানতে চান।

এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাক-বিতণ্ডার একপর্যায়ে মেয়র আবুল কালামের লোকজন শিক্ষক গুলবর রহমানকে হাতুড়ি দিয়ে মারধর করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। ঘটনার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সংসদ সদস্য এনামুল হকের সমর্থক আর্ট বাবুর নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন কর্মী উপজেলার তাহেরপুর বাজারে মেয়রের সমর্থক আওয়ামী লীগ কর্মী চঞ্চলের ওপর পাল্টা হামলা করেন।

এসময় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আওয়ামী লীগ কর্মী চঞ্চল আহত হন। প্রতিপক্ষের হামলায় কাউছার হোসেন (৪৫) নামে আরেকজন শিক্ষকও আহত হন। হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে মেয়রের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক লোকজন তাহেরপুর বাজারে আসেন। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ঘটনার পর তাহেরপুর পৌরসভার সরকার দলীয় মেয়র আবুল কালাম আজাদের অভিযোগ- ‘পুলিশের সামনে সংসদ সদস্যের লোকজন সশস্ত্র অবস্থায় তার লোকজনের ওপর হামলা করেছে। হত্যার জন্য এক কর্মীকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করার জন্য চরমপন্থী ক্যাডার আর্ট বাবুর নেতৃত্বে কিছু সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর হামলা করেছে’।

এছাড়া স্কুল শিক্ষক গুলবর হোসেনের ওপর হামলার প্রশ্নে মেয়র বলেন, ‘গোপনে ভিডিও ধারণ করা নিয়ে তার লোকজনের সঙ্গে শিক্ষকের বাক-বিতণ্ডা হয়েছে মাত্র। এর চেয়ে বেশি কিছু হয়নি’।

এদিকে, সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বলন, ‘বিএনপির লোকজনের টাকা খেয়ে তাহেরপুর পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ আসন্ন নির্বাচনে বাগমারাকে অশান্ত করতে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করে তিনি পরিবেশ উত্তপ্ত করতে চাইছেন। মনোনয়ন না পেয়ে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমি বর্তমানে ঢাকায়। এরপরও সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছি’।

রাজশাহীর বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহমেদ বলেন, আহত ব্যক্তিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই তার মৃত্যু হয়। বর্তমানে ওই এলাকায় এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় থানায় কেউ মামলা দিলে সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।