হারি জিতি নাহি লাজ, ১১ বার হেরেও ফের নির্বাচনে


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2018-12-03 07:04:37 BdST | Updated: 2024-07-08 03:34:47 BdST

অর্থ বা ক্ষমতার কারণে নয়, সামাজিক পরিবর্তন এবং সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন মারফত আলী মাস্টার। মারফত আলী কুষ্টিয়ার মিরপুরের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে লড়ে যাচ্ছেন। তিনি ১৯৮০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদ, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে লড়ে আসছেন। তিনি ১৯৮০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৮টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তবে একবারও জয়ী হতে পারেননি তিনি।

ছাত্রজীবনেই ১৯৬২ সালে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৯৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৯ সালে তিনি মিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭০ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বাধীনতার স্বপক্ষে বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করে।

কর্মজীবনে মারফত আলী দৌলতপুর উপজেলার ছাতারপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসাবে চাকুরি করতেন। উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের নওদা আজমপুর এলাকার মৃত হাতেম আলীর ছেলে ৭২ বয়সী মারফত আলী মাস্টার বর্তমানে বয়সের ভারে খুড়িয়ে চলেন। এখনো স্বপ্ন দেখেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার।

মারফত আলী মাস্টার বলেন, আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য এই মিরপুরের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনা। মিরপুর-ভেড়ামার উপজেলা নিয়ে কুষ্টিয়া-২ সংসদীয় আসন। এই আসনে বেশি ভোট মিরপুর উপজেলায় তবে এই এলাকার মানুষেরা ভেড়ামারার মানুষের চেয়ে অবহেলিত। নির্বাচনে নেতৃত্বের অভাবে মিরপুরের মানুষ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত।

ইতিপূর্বের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, সর্বপ্রথম ইনুর দলের হয়ে ১৯৮০ সালে সদরপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে খেজুরগাছ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। সে সময় মাত্র ২৬ ভোটে পরাজিত হই। তার পরে প্রতিজ্ঞা করি যতদিন বাঁচবো নির্বাচন করে যাবো। তারপর প্রথম ১৯৮৬ সালে ১৫ দলীয় জোটের মাছ মার্কা প্রতীকের হয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেই। সে সময় ১৩ হাজার ভোট পাই। ১৯৮৮ এবং ১৯৯১ সালে দুইবারই জাসদ (শাজাহান সিরাজ) এর দলের হয়ে মাছ মার্কা প্রতীকে নির্বাচন করি। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে জনতা পার্টি (আতাউল গনি উসমানী) থেকে হরিণ মার্কা প্রতীকে নির্বাচন করি। এরপরে ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করি।

তিনি বলেন, ২০১০ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে টিয়া পাখি মার্কা প্রতীকে নির্বাচন করি। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে জাসদ রব গ্রুপের তারা মার্কা প্রতীকে অংশ নিয়েছিলাম। পরে অর্থের অভাবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছিলাম।

তিনি আরো বলেন, শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়া এবং সামাজিক একটা পরিবর্তন চাই। মিরপুরের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। অন্য কোনো কারণ নেই। আমি মুলত এমপি হতে চাই না। চাই ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর করতে। এ জন্য যত দিন বাঁচব, নির্বাচনে অংশ নিয়ে যাব।

প্রতি নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে মারফত আলী জানান, অর্থ এবং রাজনৈতিক কারণেই মূলত প্রতিবার আমি পরাজিত হই। তবে আমি নির্বাচনে না জিতলেও তরুণ প্রজন্মের কাছে একটা শিক্ষা দিতে চাই। যাতে তারা আগামীতে নেতৃত্ব দিতে পারে।

বর্তমানে বেঙ্গল ন্যাশনাল কংগ্রেস দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত মারফত আলী। তবে দল নিবন্ধন না পাওয়ায় পরে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের হয়ে হারিকেন প্রতীক পেতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।