আজ টুঙ্গিপাড়া থেকে শুরু হচ্ছে আ.লীগের হ্যাটট্রিক মিশন


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2018-12-12 13:04:31 BdST | Updated: 2024-07-08 01:35:37 BdST

গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনেই সিলেট থেকে নির্বাচনি প্রচারণা শুরুর রেওয়াজ থাকলেও এবার সে পথে হাঁটছে না আওয়ামী লীগ। বরং স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামছে দলটি। আগামীকাল বুধবার (১২ ডিসেম্বর) এ লক্ষ্যেই টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মধুমতির কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আদর্শিক নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। তারই নেতৃত্বে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে বাঙালি পায় লাল-সবুজের পতাকা। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকদের নির্মম নিষ্ঠুর হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় তাকে। সেদিনের সেই ঘটনায় ঘটনাচক্রে বেঁচে যান তার দুই কন্যা। সেই দুই কন্যার এক কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে নৌকার হাল ধরে সময়ের ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে তিন বার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনেন। এবারে টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বুধবার দুপুরে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাবেন শেখ হাসিনা। এরই মাধ্যমে তিনি শুরু করবেন একাদশ জাতীয় সংসদে নৌকা প্রতীকের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা।

শেখ হাসিনার সফরসূচি থেকে জানা যায়, বুধবার দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফাতেহা পাঠ, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোনাজাত করবেন তিনি। এরপর দুপুর ৩টায় কোটালীপাড়ায় স্থানীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। রাতে টুঙ্গিপাড়ায় পৈতৃক বাড়িতে অবস্থান করে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার পথে রওনা দেবেন শেখ হাসিনা।

যাত্রাপথে আওয়ামী লীগ সভাপতি কয়েকটি পথসভায় অংশ নেবেন। পথসভার স্থানগুলো হলো— ভাঙ্গার মোড়, ফরিদপুরের মোড়, রাজবাড়ী রাস্তার মোড় (রাজবাড়ী জেলা), পাটুরিয়ার আরোয়া ইউনিয়ন, মানিকগঞ্জ পৌরসভা, রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ (ধামরাই) ও সাভারের জালেশ্বর মৌজার ৫ নম্বর ওয়ার্ড।

জানা গেছে, বুধবার বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় ছোট বোন শেখ রেহানা ও পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এরপর দুপুরে কোটালীপাড়া উপজেলা সদরে শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ মাঠে এবারের নির্বাচনের প্রথম নির্বাচনি জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনেও শেখ হাসিনার নির্বাচনি সফরের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমানও।

তিনি জানান, আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, বি এম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীসহ অন্যান্য নেতারা অগ্রবর্তী টিম হিসেবে মঙ্গলবারই রওনা হচ্ছেন টুঙ্গিপাড়ার পথে।

এর আগে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ (কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া) আসন থেকে ছয় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও তিনি ওই আসন থেকেই নৌকার প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আসনটিতে মোট সাত জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে দু’জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় এই আসনে শেখ হাসিনাসহ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন পাঁচ জন। বাকিরা হলেন— বিএনপির এস এম জিলানী, ইসলামী আন্দোলনের মো. মারুফ শেখ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. উজির ফকির ও মো. এনামুল হক।

এদিকে, শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে এরই মধ্যে প্রস্তুত টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়াসহ তার ফেরার পথের পথসভার বিভিন্ন স্থান। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনার বুধবারের জনসভায় ১৬টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ শোভাযাত্রাসহ বর্ণিল আয়োজনে অংশ নিতে আসবেন। পাশাপাশি ৩০ ডিসেম্বরের ভোটযুদ্ধে বিজয়ী হতে দলীয় প্রধানের দিকনির্দেশনা পেতেও প্রহর গুনছেন তারা।

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এম বদরুল আলম বদর দৈনিক আমাদের দিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় জনগণ ও নেতাকর্মীরা তাদের প্রিয় নেত্রীর আগমন উপলক্ষে উন্মুখ হয়ে আছে।

এর আগে ৩০ জানুয়ারি সিলেট থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মিশনে প্রাক-নির্বাচনি জনসভার সূচনা করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই দিন বিকেলে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় আগামী নির্বাচনে সবাইকে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এ ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে বিভাগীয় শহরগুলো ছাড়াও কয়েকটি জেলায় জনসভা করেন শেখ হাসিনা।