বাকৃবির গবেষণা

ব্রয়লার মুরগিতে হিট স্টেসের প্রভাব হ্রাস করবে আমলকি


Md Likhon Islam | Published: 2024-06-11 19:44:16 BdST | Updated: 2024-06-23 08:46:52 BdST

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলোতে তাপপ্রবাহ ও তাপমাত্রা অতিতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়, দেশের তাপমাত্রা এবছর প্রায় ৪৫ ডিগ্রি ছুয়ে ফেলেছে। তাপপ্রবাহ ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেশের পোল্ট্রি শিল্পের জন্য মারাত্মক হুমকি। ব্রয়লার মুরগির দ্রুত বৃদ্ধিহার, উচ্চ দৈহিক ওজন, উচ্চ খাবার রুপান্তর হারের ফলে দেহে প্রচুর পরিমাণে তাপ উৎপাদন করে। তাই পরিবেশের উচ্চ তাপ ব্রয়লারের জন্য খুবই সংবেদনশীল। হিট স্ট্রেসের ফলে ব্রয়লার মুরগির খাবার গ্রহণের পরিমাণ, কম খাদ্য রুপান্তর হার এবং বৃদ্ধি কমে যায়। এছাড়াও বেশি সময় ধরে হিট স্ট্রেসে থাকা ব্রয়লারের মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ কমে যায়, ব্রেস্ট পেশির মাংসের আকার ছোট হয়ে যায় এবং মাংসে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এমনকি মুরগির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।


সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) একদল গবেষক ব্রয়লারের খাবারে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে আমলকি ফলের পাউডার প্রয়োগ করে হিট স্ট্রেস মোকাবেলায় সফলতা পেয়েছেন। গবেষক দলের প্রধান এবং বাকৃবির প্রাণরসায়ণ ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. চয়ন গোস্বামীর নেতৃত্বে ওই গবেষণা সংক্রান্ত একটি গবেষণা পত্র সম্প্রতি ইউরোপিয়ান জার্নাল অব এগ্রিকালচার এন্ড ফুড সায়েন্সেস- এ প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ওই গবেষণাটি সম্পন্ন হয়েছে।

গবেষণা দলে আরো ছিলেন পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. বাপন দে, ইন্টারডিসিপ্লিনারি ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটির (আইআইএফসি) সহযোগী অধ্যাপক ড. রাখি চক্রবর্তী এবং প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. কামরুল হাসান কাজলসহ স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা।

অধ্যাপক ড. চয়ন গোস্বামী বলেন, আমলা ফলে অ্যান্টিবায়োটিক ,অ্যান্টিস্ট্রেস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুনাগুন রয়েছে এবং এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। হিট স্ট্রেসের প্রভাবে ব্রয়লার মুরগি খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়। পরিবেশের তাপমাত্রা ৩২ থেকে ৩৮ পর্যন্ত প্রতি ডিগ্রি বৃদ্ধিতে ব্রয়লারে খাবার গ্রহণের পরিমাণ ৪.৬ ভাগ হারে কমতে থাকে। খাদ্য গ্রহণ কমে গেলে দেহে স্ট্রেস হরমোন ক্ষরণ বেশি হয় যা ব্রয়লারের দেহে কর্টিকোস্টেরয়েডের মাত্রা বৃদ্ধি করে দেয়। আর এই কর্টিকোস্টেরয়েড দেহের প্রোটিনকে ভেঙে দেয় ফলে পরিপাক তন্ত্রে জটিলতা ও খাবার হজমে বাধা সৃষ্টি করে। এজন্য মুরগির বৃদ্ধি কম হয় ও ওজন হ্রাস পায়।

আমলকি ক্ষুধা বিবর্ধক হিসেবে কাজ করে খাবার গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এগুলো প্রতিরোধ করে। এছাড়াও এটির ব্যবহার ফ্রি-র‍্যাডিক্যাল হ্রাস করে এবং খাদ্য রুপান্তর হার বৃদ্ধি করে দেহে খাদ্য গ্রহণের সাথে ওজন বৃদ্ধির ভারসাম্য ঠিক রাখে। যার ফলে ব্রয়লার মুরগিতে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে এটির ব্যবহার ব্রয়লারের হিট স্ট্রেস জনিত ক্ষতি মোকাবেলা করতে সহায়তা করবে।

তিনি আরো বলেন, আমলা যার বৈজ্ঞানিক নাম এমব্লিকা অফিসিনালিস। যার মধ্যে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এছাড়াও এতে ০.৫ ভাগ প্রোটিন, .০.১ ভাগ ফ্যাট, ৩.৪ ভাগ ফাইবার এবং ১৪.১ ভাগ শর্করা থাকে। এছাড়াও এতে উচ্চ ঘনত্বে ট্যানিন, ক্যামফেরল, ইলাজিক এসিড, ও গ্যালিক এসিডের মতো প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। দৈনিক খাবারের সাথে তাই আমলা ফলের পাউডার সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ব্রয়লারে খাওয়ালে ব্রয়লারের দৈহিক ওজন বৃদ্ধি, খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং মৃত্যুহার কমাবে। এছাড়াও এটা প্রয়োগে ব্রয়লারের দেহে কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড, এলডিএলের মতো খারাপ ফ্যাট কমিয়ে এইচডিএলের মতো ভালো ফ্যাট বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

গবেষক আরো জানান, বর্তমানে দেশের পোল্ট্রি শিল্প হিট স্ট্রেসের ক্ষতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যা ব্রয়লারের উৎপাদন হ্রাস এবং মানসম্মত মাংস উৎপাদনে বড় বাধা। জেনেটিক রুপান্তর, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, নিবিড় বায়ুপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ ও কক্ষ আদ্রতা নিয়ন্ত্রণের মত ব্যয়বহুল প্রযুক্তি হিট স্ট্রেস কমাতে ব্যবহার করা হলেও বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ে ছোট ও মাঝারি খামারগুলোতে এগুলো ব্যবহার করা সম্ভব না। এছাড়াও রাসায়নিক এন্টিঅক্সিডেন্ট হিট স্ট্রেস কমাতে ব্যাপক হারে প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু এই এন্টিঅক্সিডেন্ট গুলো মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। তাই হিট স্ট্রেস মোকাবেলা করতে প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট হতে পারে নির্ভরযোগ্য সমাধান।

গবেষণার ব্যাপার সহযোগী অধ্যাপক ড. বাপন দে বলেন, আমলা ফলের অ্যান্টিবায়োটিক গুণও রয়েছে। এটি পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রে উপকারী ল্যাকটোব্যাসিলি ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেয় যারা ল্যাকটিক এসিড উৎপাদন করে এজন্য ই-কোলাই, সালমোনেলার মত গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া গুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এজন্য প্রাকৃতিক আমলকি অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।