কওমির 'দাওরায়ে হাদিস' স্নাতকোত্তর স্বীকৃতি পাচ্ছে


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2018-08-14 07:56:37 BdST | Updated: 2024-03-28 22:31:38 BdST

কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রির স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে মন্ত্রিসভায় কওমি মাদ্রাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের (তাকমিল) সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান আইন-২০১৮ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ আইনে অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া বৈঠকে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন-২০১৮ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন এবং রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সঙ্গে ২০১১ সালের নভেম্বরে করা সমঝোতা চুক্তিতে সংশোধনী এনেছে সরকার।

সভা শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগে থেকেই কওমি সনদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সেটাকে এখন আইনি কাঠামোতে নিয়ে আসা হচ্ছে। সারাদেশে ছয়টি বোর্ড কওমি মাদ্রাসাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এদেরকে নিয়ে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড করা হবে। এর নাম হবে 'আলহাইয়্যাতুল উলিয়ালিল জামিয়াতুল কওমিয়া বাংলাদেশ'। এর কার্যালয় হবে ঢাকায়। বর্তমানে কওমি মাদ্রাসায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এই বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে মূলধারার সঙ্গে আনতেই এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।

সচিব বলেন, কওমি মাদ্রাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ও দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিকে ভিত্তি করে সমমান দেওয়া হয়েছে। মূলত এ সংক্রান্ত কমিটির নিবন্ধিত মাদ্রাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের সনদকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমমর্যাদা দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল গঠিত ওই কমিটিকে এখন এ আইনে রূপ দেওয়া হচ্ছে। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এ কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হবে। কমিটিতে নয় ধরনের ব্যক্তি থাকবেন। কমিটির চেয়ারম্যান হবেন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার সভাপতি; কো-চেয়ারম্যান-বেফাকুল মাদারিসিলের সিনিয়র সহসভাপতি, এবং বেফাকুল মাদারিসিল আবারিয়া বা এর মহাসচিব মনোনীত আরও পাঁচজন সদস্য থাকবেন কমিটিতে। এ ছাড়া গওহরডাঙ্গার বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া, চট্টগ্রামের আন্‌জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসিল কওমিয়া, বগুড়ার আযাদদ্বীনি এদারায়ে তালিম, বগুড়ার তানজীমুল মাদারিসিল কওমিয়া এবং জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে দুইজন করে সদস্য কমিটিতে আসবেন। চেয়ারম্যান ইচ্ছা করলে যে কাউকে কমিটিতে যোগ করে নিতে পারবেন। তবে সব মিলিয়ে তা ১৫ জনের বেশি হবে না। কমিটি দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকবে।

তিনি বলেন, বোর্ড কমিটিই তাদের সনদ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। কমিটির নিবন্ধিত মাদ্রাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের সনদ (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) মাস্টার্স সনদের সমমান বিবেচিত হবে। এই কমিটির অধীনে ও তত্ত্বাবধানে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা হবে। সিলেবাস প্রণয়ন, পরীক্ষা পদ্ধতি, অভিন্ন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফল ও সনদ তৈরিসহ অন্যান্য কাজে এক বা একাধিক কমিটি করা যাবে।

ইতিপূর্বে পাস করা ছাত্ররা মাস্টার্সের সমমানের সনদ অথবা মর্যাদা পাবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিলের আগে যারা পাস করেছেন, তারা এই সমমান পাবেন না। প্রজ্ঞাপন জারির পরে যারা পাস করেছেন, তারাই পাবেন।

মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হওয়া 'বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন-২০১৮' সম্পর্কে শফিউল আলম বলেন, এটি ১৯৮৪ সালের অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে এতদিন পরিচালিত হচ্ছিল। এখন এটিকে আইনে পরিণত করা হয়েছে। আইনে ইনস্টিটিউট পরিচালনার জন্য একটি পরিচালনা বোর্ড গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও অনুমোদন হওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সঙ্গে করা সমঝোতা চুক্তির সংশোধনী সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০১১ সালের ২ নভেম্বর যে চুক্তি হয়েছে, এর সুরক্ষার জন্য সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিয়ে চুক্তিতে সংশোধনী আনা হয়েছে।

 

//