৭ই মার্চ ভাষণের ইউনেস্কো স্বীকৃতি: যা ভাবছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা


ওয়ালি খান রাজু | Published: 2017-11-22 03:49:05 BdST | Updated: 2024-05-12 05:05:18 BdST

৭ মার্চ ১৯৭১, ঢাকার রেসকোর্স ময়দান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজারো জনতার সামনে প্রদান করলেন এক অগ্নিঝরা বক্তব্য। যা নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর মুক্তির সনদ, অত্যাচারিত, শোষিত, মজলুম বাঙালী জনগোষ্ঠীর জন্য ছিল এক উজ্জ্বল আলোর দিশা।

গত ৩০ শে অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে ইউনেস্কো স্বীকৃতি প্রদান করে। 

ইউনেস্কো কর্তৃক এই স্বীকৃতি পাওয়ায় গর্বিত ও আনন্দিত হয়েছে পুরো জাতি। ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলনের সুতিকাগার দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তুলে ধরেছেন ৭ই মার্চকে ঘিরে তাদের আবেগ অনুভুতি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের শিক্ষার্থী রিয়াজ উদ্দিন ক্যাম্পাস টাইমসকে বলেন "যে ভাষণটা শুনলে শরীরের লোম শিহরিত হয় তার নাম ৭ই মার্চের ভাষণ। আজ এতদিন পর এই ভাষণের বিশ্ব স্বীকৃতি বাঙ্গালি জাতির আত্মপরিচয়ের বিকাশে বিরাট ভূমিকা পালন করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আদিবা আল হেলাল মনে করেন ৭ই মার্চের ভাষণের ইউনেস্কো স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে দেশের জন্য এক বড় প্রাপ্তি। তিনি বলেন, 'আমাদের শুধু ভাষণ শুনলেই হবে না বরং ভাষণের প্রতিটি বক্তব্য আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিফলনের চেষ্টা করতে হবে।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী নিজাম উদ্দিন বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত ইউনেস্কোর এই মূল্যায়নে। তিনি বলেন, ব্যাপারটা আমাদের জন্য গর্বের! কিন্তু এত দিন পর ইউনেস্কোর স্বীকৃতি দেয়ায় গুরুত্ব খুব বেশি বেড়ে গেছে বলে আমার মনে হয় না! ৭ই মার্চ এর ভাষণ আগেও এমন গুরত্ববহই ছিল, ৭ই মার্চের ভাষণ মূলত আমাদের অহংকার! এই রকম আমাদের আরো অনেক কিছুই আছে যা গর্ব করার মত! শুধু আমরা না, পৃথিবীতে নানা জাতির মাঝে মানুষের দিক নির্দেশনামূলক কথা, কাজ আছে যা চলমান তাদের কথা কাজগুলো ও স্বীকৃতি পাওয়া উচিত!

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী আহমেদ সাকিব বলেন, "ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতির ফলে দেরিতে হলেও বিশ্বব্যাপী বাংগালী জাতির মুক্তির সংগ্রাম এবং সেই সংগ্রামের পিছনের কারিগরকে চিনতে পারবে এবং জানতে পারবে, তিনি ৭ই মার্চের ভাষণের ইংরেজি ডাবিং বিশ্বব্যাপী প্রচার করারো তরুণ সমাজের প্রতি আহবান জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স শিক্ষার্থী সাকলাইন আম্মার বলেন "৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের ঘোষণা ‘‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম-এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’’ ছিল স্বাধীনতার ডাক। এই উচ্চারণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কেবল স্বাধীনতার চূড়ান্ত আহ্বানটি দিয়েই ক্ষান্ত হননি, স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের রূপরেখাও দিয়েছিলেন। আজ ইউনেস্কো সাত ই মার্চের ভাষণের স্বীকৃতি প্রদান করে আমাদের গর্বিত করেছে।

ইউনেস্কোর এই মূল্যায়ণের ফলে সমগ্র বিশ্ববাসীর অহংকারের ধনে পরিণত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ।

কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায় ‘অমর কবিতাখানি’। ৭ই মার্চের ভাষণ প্রকৃত অর্থেই এক অসাধারণ কবিতা। এই কবিতার মধ্য দিয়ে তৎকালীন সাড়ে সাত কোটি বাঙালির হৃদস্পন্দন প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল। শুধু মুক্তিযুদ্ধের জন্যই নয়, বরং এই ভাষণ বাঙালীর জাতীয় জীবনের প্রতিটি স্তরের জন্য এক অমূল্য  দিক নির্দেশিকা।

আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিটি স্তরে ৭ই মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের আদর্শ প্রতিফলিত হবে এবং ৭ই মার্চের ভাষণের চেতনা শুধু মুখেই নয় বরং কাজেও প্রকাশ ঘটবে এমনটিই প্রত্যাশা করেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের আরেক অমর সাক্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

এমএসএল/ ২১ নভেম্বর ২০১৭