নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেয়েও যেভাবে এগিয়ে যাবেন


এম. আমজাদ হোসাইন | Published: 2017-11-26 03:52:04 BdST | Updated: 2024-05-12 00:55:50 BdST

এম. আমজাদ হোসাইন : আমি হতাশদের খুঁজছি। যে সমস্ত তরুণ-তরুণী সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক দিয়ে কয়েক দফা ভর্তি পরীক্ষা দিয়েও কোন নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পান নাই, ভর্তি হতে পারেন নাই, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বাজারে অচল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজারে অচল বিভাগে ভর্তি হয়েছেন, চাকুরী বাকুরী নিয়ে চিন্তিত, আপনাকেও খুঁজছি এই প্রবন্ধে।

নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম করা বিভাগে ভর্তি হতে পারেন নি বলে হতাশ হবার কারন নেই। এক দরজা বন্ধ আাপনার- তবে খোলা আছে হাজারো দুয়ার। আসুন, চোখ খুলুন, দেখুন আরো কত সুযোগ সুমুখে রয়েছে আপনার। সুযোগগুলো খুঁজছে আপনাকেই হন্যে হয়ে।

নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম করা বিভাগের ছেলেমেয়েরা তাদের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য যে ৪- ৫ বছর হাড় ভাঙ্গা খাটুনি খাটবে, সেই ৪-৫ বছর পাচ্ছেন আপনার জীবনেও। শুধুমাত্র পথ ভিন্ন। ভিন্ন সেই সুন্দর পথে হেটেই দেখুন না ওদের চেয়ে কোন অংশে কম যান আপনি।

আপনার সুযোগগুলো নিম্নরুপ :

১. চার্টার্ড ফিন্যানশিয়াল অ্যানালিস্ট (Chartered Financial Analyst- CFA) – শব্দটা অপরিচিত লাগছে, গুগলে সার্চ দিন। দেখুন কী আসে। বাংলায় বা ইংরেজীতে যেসব আর্টিকেল আসে, পড়ে দেখুন, জিনিসটি কী। আচ্ছা, বিরক্ত লাগছে? আচ্ছা, আমি বলছি, শুনুন। CFA হলো অর্থায়নের ওপর আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের ডিগ্রি। বিশ্বের সবগুলো দেশে এটাকে খুব ভালোভাবে মূল্যায়ণ করে। সারা বাংলাদেশে এই ডিগ্রিধারী ৫০ জনের বেশী আছে বলে আমার জানা নেই।

ডিগ্রিটি আপনি নিতে পারেন বাংলাদেশ থেকেই। সময় লাগবে গড়ে ৩ বছর। যে কোন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি থাকলেই দেওয়া যাবে এই পরীক্ষা। বিস্তারিত জানতে অন্তত CFA INSTITUTE এর ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখুন।

২. চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (Chattered Accountant- CA ) : বাংলাদেশে বসে এই কোর্সটি করতে চাইলে যোগাযোগ করুন কাওরান বাজারের সিএভবনে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও করা যায়। আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রে এটাকে সিপিএ বলে। আকাউন্টান্টদের জন্য অনেক উঁচু মানের ডিগ্রি এই সিপিএ।

৩. কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টান্ট (Cost and Management Accountant-CMA) : এই ডিগ্রিটাও কিছুটা CA এর মতো। বাংলাদেশে বসে এটি সম্পন্ন করতে চাইলে রাজধানির ICMAB এ যোগাযোগ করুন।

৪. এমসিআইপিএস (Member of Chartered Institute of Procurement and Supply- MCIPS) : সরকার ও এনজিওগুলো প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার কেনাকাটা করে। এইসব জিনিসপত্রের procurement এর জন্য দরকার শত শত Procurement Specialist । তাঁরা সরকার বা এনজিওগুলোর এসব procurement খুবই গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারনী পরামর্শ দিয়ে থাকেন তারা। এজন্য পান কারি কারি টাকা। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অর্জন করতে হয় এমসিপিএস ডিগ্রি। এটা ব্রিটিশ সার্টিফিকেট। বাংলাদেশে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও ইঞ্জিনিয়ার স্টাফ কলেজ থেকে দেওয়া হয় এই ডিগ্রি।

৫. এফসিএস (Fellow Chartered Secretary-FCS) : বাংলাদেশে আইসিএসবি’র মাধ্যমে এ কোর্স করা যায়। এই সার্টিফিকেট দিয়ে আপনি বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কোম্পানি সেক্রেটারির পদ অর্জন করতে পারেন। মনে রাখবেন, কোন প্রতিষ্ঠানের কোম্পানি সেক্রেটারি এবং কোন ব্যাক্তির পারসোনাল সেক্রেটারি এক জিনিস নয়। কোম্পানি সেক্রেটারি হল, একটা কোম্পানির সচিব/ পরিচালক। এই পোস্টের ব্যাক্তি কোম্পানির অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও নীতিনির্ধারনী কাজে ভূমিকা পালন করেন।
যাহোক, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এই পদে বসতে চাইলে, এফসিএস ডিগ্রি দরকার হবে। বাংলাদেশ থেকে ডিগ্রিটি পেতে যোগাযোগ করুন আইসিএসবিতে।

৬. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে এমবিএ ডিগ্রি : ঢাবির আইবিএ সম্পর্কে নিশ্চয়ই শুনেছেন। এখান থেকে এমবিএ করে ভালো ক্যারিয়ার গড়া যায়, জানেন। আপনি, সবেমাত্র অনার্সে ভর্তি হয়ে থাকলে, আপনার হাতে প্রচুর সময় আছে, আইবিএর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার। এখন থেকেই লেগে যান। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠিন সাবজেক্টের শিক্ষার্থীরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ, তাদের পড়াশুনার চাপ অনেক বেশি।

৭. বিসিএস প্রস্তুতি : দুই লাখ প্রতিযোগী থেকে ২ হাজার বিসিএস ক্যাডার হয় প্রতিবছর (গড়ে)। সাধারণ ক্যাডার আরো কম। ৫০০-৬০০। এর মধ্যে ৫৬% কোটা। তাই দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। লাখে একজনও ও যদি হয়, আপনার তাতে সুযোগ আছে। ৪-৫ টা বছর নিয়মিত পড়াশুনা করলে বিফল হবার কথা না। জেনে রাখুন, অনার্সের যে ৪ বছর আপনি একটু একটু করে বিসিএস পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন, ঢাবির অর্থনীতিতে পড়া বা বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়া ছেলেটি/ মেয়েটি কিন্তু সেই সময়ে এসাইনমেন্ট- ল্যাবে জটিল জটিল সুত্রের হিসেব মেলাতে ব্যাস্ত।

এমএসএল/ ২৫ নভেম্বর ২০১৭