ভারতে মাদ্রাসার খাওয়ার পানিতে বিষ: রক্ষা পেলো ৪ হাজার ছাত্রছাত্রী


admin | Published: 2017-09-19 03:01:34 BdST | Updated: 2025-05-26 01:36:18 BdST

ভারতের উত্তর প্রদেশের আলিগড়ের একটি মাদ্রাসার খাবার পানির ট্যাঙ্কে ইঁদুর মারার বিষ মেশানোর অভিযোগ উঠল অজ্ঞাতপরিচয় দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। চাচা নেহেরু নামে ওই মাদ্রাসার শীর্ষপদে রয়েছেন দেশটির প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির স্ত্রী সালমা আনসারি। এই ঘটনায় তিনি অত্যন্ত আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। সত্যিই ওই মাদ্রাসার খাবার পানির ট্যাঙ্কে বিষাক্ত কিছু মেশানো হয়েছে কিনা, তা জানতে পানির নমুনা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
১৮ বছরের পুরনো ওই মাদ্রাসায় ৪০০০ ছাত্রছাত্রী থাকে। আল নূর চ্যারিটেবল সোসাইটি পরিচালন করে চাচা নেহেরু মাদ্রাসার কাজকর্ম। এই সোসাইটির প্রধান সালমা আনসারি। এই ঘটনার পর মাদ্রাসায় সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। অজ্ঞাতপরিচয় দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইপিসি ৩২৮ এবং ৫০৬ ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
আলিগড়ের সিনিয়র পুলিশ সুপার রাজেশ পাণ্ডে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন এক ছাত্র পানি খেতে গিয়ে দেখতে পায় যে এক ব্যক্তি পানির ট্যাঙ্কে কিছু মেশাচ্ছে। অন্য একজন পাশেই পাঁচিলের ওপর হাতে পিস্তল নিয়ে বসে আছে। তারা কী করছে জানতে চাইলে মুখ বন্ধ রাখার হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায় দু-জনে। ওরা চলে গেলে ট্যাঙ্কের পাশে ইঁদুর মারার বিষের খালি প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখে ওই ছাত্র। তখনই সেই ঘটনা কর্তৃপক্ষের নজরে আনে সে। পুলিশে খবর দেওয়া হয়। ওই ট্যাঙ্কের পানি যাতে কেউ না খায়, সে বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়।
আলিগড়ের জেএন মেডিক্যাল কলেজের চিফ মেডিক্যাল অফিসার এহতিশাম আহমেদ জানিয়েছেন, ইঁদুর মারার বিষ মানুষের পক্ষে প্রাণঘাতী নয়। তবে বেশি পরিমাণে ওই বিষ শরীরে গেলে গুরুতর অসুস্থ অবশ্যই হতে পারে। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মোদি সরকারের অনুদান প্রত্যাখ্যান করল দেওবন্দ মাদ্রাসা
ভারতের ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দেওবন্দের দারুল উলুম সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তাদের অধীনস্থ মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার আধুনিকীকরণের জন্য তারা কোনো সরকারি অনুদান নেবে না। নরেন্দ্র মোদি সরকার এ বছর তাদের বাজেটে মাদ্রাসা শিক্ষার সংস্কারের জন্য ১০০ কোটি রুপি বরাদ্দ করেছে, কিন্তু দারুল উলুম মনে করছে এই সরকারি সহায়তা নিলে তাদের মাদ্রাসাগুলোয় যে ধর্মীয় শিক্ষার পরম্পরা আছে তা ব্যাহত হবে।
দেওবন্দের দারুল উলুমের অনুমোদিত প্রায় তিন হাজার মাদ্রাসা আছে সারা দেশ জুড়ে- আর এ সপ্তাহের গোড়ায় তাদেরই সংগঠন রাবতা-ই-মাদারিস-ই-ইসলামিয়ার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল দেওবন্দের ক্যাম্পাসে। সেখানে চার হাজারেরও বেশি মাওলানার উপস্থিতিতে দারুল উলুম সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের শিক্ষাপদ্ধতি বা সিলেবাসের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না, আর তাই তাদের মাদ্রাসাগুলো এ জন্য সরকারি অনুদানও প্রত্যাখ্যান করবে।
দারুল উলুমের মাদ্রাসা বিভাগের কর্মকর্তা মাওলানা আবদুল খালেকের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, দেড়শ বছরের পুরনো এই প্রতিষ্ঠান তাদের ইতিহাসে কখনও সরকারি অনুদান নেয়নি- ভারতেরও না, বাইরের কোনো সরকারেরও না। দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতারাই এই বিধান করে গেছেন- কারণ সরকারের টাকা নিলে তাদের কথাই তো আমাদের শুনতে হবে, আমরা আমাদের স্বাধীনতা হারাব! বস্তুত দারুল উলুমের প্রধান আশঙ্কা এটাই- সরকারি অর্থ নিলে তাদের পাঠক্রম বা পড়াশোনোতেও সরকার নাক গলাবে। দারুল উলুমের প্রধান আবুল কাশেম নোমানিও জানিয়েছেন, আধুনিকতার নামে তারা তাদের মাদ্রাসায় ধর্মীয় শিক্ষার বিশুদ্ধতা নষ্ট করতে পারবেন না। বহু বছরের অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান ও বামপন্থী রাজনীতিক মুহাম্মদ সেলিমও মনে করছেন, মাদ্রাসা শিক্ষার সংস্কার চাইলে সরকারকে অন্য রাস্তায় এগোতে হবে। তার মতে, ধর্মীয় শিক্ষায় সরকারের কোনো ভূমিকা দরকার নেই, টাকা দেওয়ারও দরকার নেই। ধর্মীয় শিক্ষা তাদেরই কাজে লাগুক, যারা ছেলেদেরকে মাওলানা-মৌলবী-কাজী বানাতে চান! মুহাম্মদ সেলিম আরও বলছেন, যেখানে সাধারণ স্কুল-কলেজ নেই বা শিক্ষক নেই, সেখানে অনেকটা বাধ্য হয়েই লোকে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। সরকার বরং বেশি করে স্কুল-কলেজ করুক- তাহলে তাদের মাদ্রাসাতেও নাক গলাতে হবে না, মাদ্রাসাগুলোকেও সরকারি অর্থের ভরসায় থাকতে হবে না!
বস্তুত সরকার দেশের যেসব মাদ্রাসায় নাক গলিয়েছে, সেখানে পড়াশোনা লাটে উঠেছে বলেই দাবি করছেন দারুল উলুমের কর্তৃপক্ষ। এ সম্পর্কের এক বক্তব্যে মাওলানা আবদুল খালেক বলেন, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মাদ্রাসায় পড়াশোনো কিছু হয় না- সেখানে শিক্ষকরা শুধু সরকারের কাছ থেকে মাইনে পেয়েই খালাস। তাদের পড়াশোনার তাগিদ থাকে না, ছাত্রদেরও শেখার গরজ থাকে না। দেশে সবচেয়ে বেশি সরকারি অনুদান-পাওয়া মাদ্রাসা আছে বিহারে, সেগুলোর সবই একেবারে মৃতপ্রায় দশা! 

সূত্রঃ দ্য এক্সপ্রেস ইন্ডিয়া

বিজ্ঞাপন

 

এমএসএল