কাশ্মীরের দোহাই দিয়ে যারা পার্বত্য চট্টোগ্রামের স্বাধীনতার দাবীকে বৈধ করবার চেষ্টা করছে এবং সেনা অবস্থানের বিরোধিতা করছে তাদের জন্য এই লেখাটি।
কিছু লোক না বুঝে, আবার কেউ বুঝে-শুনেই কাশ্মীরের দোহাই দিয়ে অপপ্রচার করছে যে, যেই বাঙ্গালীরা কাশ্মীরে সেনা অবস্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তারা পার্বত্য চট্টোগ্রামের সেনা অবস্থানের বিরোধিতা করে না কেন? তারা আরো বলছে, যে বাঙ্গালীরা কাশ্মীরের স্বাধীনতা চাচ্ছে, তারা পার্বত্য চট্টোগ্রামের স্বাধীনতার বিরোধিতা করছে কেন? কিছু লোক এভাবে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করবার চেষ্টা করছে। আসলে তাদের এসব কথা ও দাবী যে পুরোটাই অযৌক্তিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অন্যাহ্য সেটা নিম্নের পার্থক্য থেকে পরিষ্কার হবে আসা করছি-
১, কাশ্মীর ছিল স্বাধীন রাজ্য, একটা চুক্তির মাধ্যমে ভারতের সাথে একীভূত হয়েছিল। কিন্তু পার্বত্য চট্টোগ্রাম পূর্ব থেকেই বাংলাদেশের অংশ ছিল, এখনও আছে, কখনও স্বাধীন কিংবা স্বায়ত্বশাসিত ছিল না।
২, কাশ্মীরীরা হচ্ছে ভূমি সন্তান অর্থাৎ কাশ্মীরের ভূমির মালিক কাশ্মীরিরা। তারা ওখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। তাদের চৌদ্দ পুরুষ ওখানকারই। কিন্তু পার্বত্য উপজাতিরা হচ্ছে বহিরাগত। পার্বত্য চট্টোগ্রামের ভূমির মালিকও তারা নয়। তাদের পূর্বপুরুষ বহিরাগত, অর্থাৎ তাদের অরিজিন মিয়ানমার, চীন প্রভৃতি দেশ। ওখান থেকে তারা পার্বত্য চট্টোগ্রামে অস্থায়ী নিবাস করে অাজ ভূয়া আদিবাসী দাবী করছে। তারা পার্বত্য চট্টোগ্রামের আদীবাসী জনগোষ্ঠী নয়, বরং সেটেলার ও দখলদার উপজাতি।
৩, কাশ্মীরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ করা বেআইনী, যেহেতু চুক্তিই ছিল ৩টি বিষয় ছাড়া কাশ্মীরীরা সকল বিষয়ে স্বাধীনতা ভোগ করবে এবং ভারত তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। তাছাড়া নেহেরুও কাশ্মীরী জনমতকে উপেক্ষা করবে না বলে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু পার্বত্য চট্টোগ্রাম না স্বাধীন, আর না স্বায়ত্বশাসিত। শুরু থেকেই এটা বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। সূতরাং এখানকার সব বিষয় নিয়ন্ত্রন ও হস্তক্ষেপ করবার আইনগত বৈধতা বাংলাদেশ সরকারের রয়েছে, যেভাবে অন্যান্য জেলা ও অঞ্চলে নিয়ন্ত্রন ও হস্তক্ষেপ করে থাকে রাষ্ট্র।
৪, বাংলাদেশের যশোর, খুলনা, বগুড়া, গাজিপুর, টাঙ্গাইল, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলায় সেনাক্যাম্প রয়েছে। এমন নয় যে শুধু পার্বত্য চট্টোগ্রামেই সেনা ক্যাম্প আছে। যেভাবে অন্যান্য জেলায় সেনা ক্যাম্প রয়েছে ঠিক একইভাবে রাঙ্গামাটি, খাগরাছড়ি ও বান্দরবানেও রয়েছে।
৫, বাংলাদেশে কয়েকবার সেনাবাহিনী নামিয়ে চিহ্নিত বহু সন্ত্রাসীকে ক্রস ফায়ার বা অন্যান্য উপায়ে দমন করা হয়েছিল। ঠিক একইভাবে পার্বত্য চট্টোগ্রামেও যখন সন্ত্রাস মাথা চাড়া দিয়ে উঠে তখনও সেনাবাহিনী মাঠে নামে সন্ত্রাস দমন করবার জন্যে। যেমন গত কয়েকদিন পূর্বে উপজাতিরা কোনো কারণ ছাড়াই একজন সেনা সদস্যকে হত্যা করেছে।
পাঠক, এবার আপনারাই বলুন, কাশ্মীর ও পার্বত্য চট্টোগ্রামের প্রেক্ষাপট ও ইতিহাসের মধ্যে কি কোনো মিল আছে? নেই। তাহলে যারা কাশ্মীরের প্রসঙ্গ টেনে পার্বত্য চট্টোগ্রামের স্বাধীনতা দাবী করছে এবং ওখান থেকে সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করতে বলছে তাদের প্রচারণা যে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, অন্যাহ্য ও প্রতারনা সেটা বলার অপেক্ষাই রাখে না।
১৯৪৮ সালের পূর্বে কাশ্মীর স্বাধীন রাজ্য ছিল। সূতরাং কাশ্মীরী জনগণ স্বাধীনতা অথবা স্বায়ত্বশাসন চাওয়ার অধিকার রাখে। এছাড়াও এই অধিকারের প্রতিশ্রুতি নেহেরুও তাদের দিয়েছিল।
ভারতের সাথে চুুক্তবদ্ধ হওয়ার পর থেকে আজ অবধী সেই স্বাধীন কাশ্মীরের জনগণের উপর ভারতীয় দখলদার বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়ন কতটা মর্মান্তিক ও বেদনাবহ সেটা সবারই জানা। কিন্তু পার্বত্য চট্টোগ্রামে উপজাতিরাই বরং বাঙ্গালীদের উপর দমন পীড়ন চালিয়ে থাকে।
সূতরাং যারা কাশ্মীরের দোহাই দিয়ে পার্বত্য চট্টোগ্রামে সেনা অবস্থানের বিরোধিতা করছে, স্বাধীনতার দাবী তুলছে কিংবা উপজাতি সন্ত্রাসবাদ দমনের বিরোধীতা করছে তারা হয় অজ্ঞ ও মূর্খ, অথবা তাদের রয়েছে ভিন্ন উদ্দেশ্য। তারা মূলত পার্বত্য চট্টোগ্রাম নিয়ে বড় ধরণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
মোঃ জিয়াউল হক, শিক্ষাথী, সমাজকল্যাণ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়