মাতৃভাষা দিবস উদযাপন দেখে অভিভূত ভারতীয় অধ্যাপক


Dhaka | Published: 2020-02-22 11:33:43 BdST | Updated: 2024-05-18 09:31:20 BdST

ভারতবর্ষে আমরা বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে থাকি। কিন্তু বাংলাদেশে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একসঙ্গে পালন করা হয়। আমি ঢাকায় আসার পরেই ইচ্ছা ছিল যে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাব। কিন্তু যাবার সময় দেখলাম, ঢাকা কলেজে শহীদ দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। আমি এসে যা দেখলাম, এককথায় অভিভূত, আনন্দিত।’

কথাগুলো বলছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নহাটা যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শেখ কামাল উদ্দিন। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঢাকা কলেজের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব বলেন তিনি।

অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘ইতিহাস সংসদ ঢাকা’ একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের আয়োজন করেছে ২২ ফেব্রুয়ারি। যেটি অনুষ্ঠিত হবে ঢাকায় অবস্থিত জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে। সেখানে একটি পেপার প্রেজেন্ট করব বলে আমি ঢাকায় এসেছি। যেহেতু তার আগের দিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, তাই একদিন আগেই ঢাকায় পৌঁছেছি। এখানে আসলাম দুটি কাজ একসঙ্গে হবে। সেমিনারে অংশগ্রহণ করব আর যেটা এতদিন বইয়ের পাতায় পড়েছি সেই মাতৃভাষা দিবস উদযাপন সচক্ষে দেখব।

পশ্চিমবঙ্গের এই অধ্যাপক বলেন, বইয়ের পাতায় পড়েছি, মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই ধরনের স্বতঃস্ফূর্ততা…ছাত্রদের, শিক্ষকদের অংশগ্রহণ আমি যা দেখলাম, এটা আমার ধারণা ছিল না। এককথায় অসাধারণ অনুভূতি হচ্ছে। আমিতো ছটফট করছি ভারতে ফিরে যাব আর আমার বন্ধুদেরকে বলব এমন উদযাপনের কথা। যেটি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে যে ছাত্র-শিক্ষক সবার স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ।

এর আগেও ভারতের এই অধ্যাপক দুইবার বাংলাদেশে এসেছেন বলে জানান। একবার পহেলা বৈশাখে যশোর শহরে, আরেকবার কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকসংস্কৃতি বিষয়ে সেমিনারে অংশ নিতে। তখন ঘুরে দেখেছেন কুষ্টিয়া, শিলাইদাহ অঞ্চল। ঢাকাতে এবারই প্রথম।

বাংলা বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, কলকাতার বিভিন্ন কলেজে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। আমি নিজেও ৬ বছর একটি কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছি৷ তখন বেশ ভালোভাবে চেষ্টা করেছি দিবসটি পালন করার। আমাদের কলেজেও মাতৃভাষা দিবসটি পালন করা হবে। কিন্তু আমি ঢাকা কলেজে যেভাবে দেখলাম, একটি কলেজ চত্বরে যেভাবে মাতৃভাষা দিবসের উদযাপন দেখলাম কলকাতায় সেটি কখনও চোখে পড়েনি।

কলকাতার মানুষের বাংলা ভাষার প্রতি আগ্রহ দিন দিন কমছে জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, বর্তমানে কলকাতায় বাংলার চাইতে ইংরেজিতে আগ্রহ বেশি। এখন বাঙালিরাও তাদের ছেলেমেয়েদেরকে ইংরেজি শেখাতে বেশি পছন্দ করেন। আমার ছেলে বাংলা জানে না-এই কথা বেশ গর্বের সঙ্গে বলে বাবা-মা। আমরা জানি না পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষাকে প্রধান ভাষা হিসেবে কতদিন ধরে রাখতে পারব। তবে এটি খুবই দুঃখজনক আর হতাশারও বটে।

ঢাকা কলেজে এসে কলেজ প্রশাসনের আতিথিয়তায় মুগ্ধ হয়ে এই অধ্যাপক বলেন, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সকলের আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ। এখানে আমি বাঙালির প্রাণের ছোঁয়া দেখেছি।

পরে ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এসে পরিদর্শন বইতে তিনি লেখেন, ‘আজ ঐতিহাসিক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভ প্রাক্কালে ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির অফিসে তরুণ সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করে আনন্দিত ও অভিভূত। ওদের সাফল্য কামনা করি।’