হুবহু নকল করলো অথচ ঢাবির বাঘা অধ্যাপকদের কেউ টেরও পেলেন না!


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2017-09-30 23:00:55 BdST | Updated: 2024-05-12 17:43:19 BdST

রাকিবুল ইসলাম মুকুল নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন,  আমাদের ফিল্ম থিওরি ও ক্রিটিসিজম পড়াতেন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন শফিউল আলম ভুঁইয়া স্যার। পাঁচ মার্কের একটা অ্যাসাইনমেন্টে মিশেল ফুকোর একটা লাইন ব্যবহার করেছিলাম। কোট আনকোটও করেছি, কিন্তু ফুটনোটে সূত্র উল্লেখ করিনি। শুধু ওই কারনে সেমিস্টারে আমার অ্যাসাইনমেন্টের পাঁচ নম্বরে শূণ্য পেয়েছি। স্যারের সাথে ভালো সুসম্পর্ক থাকলেও বা তিনি স্নেহ করলেও একাডেমিক জায়গায় নূন্যতম সুবিধা পাইনি।

আমি এখন গর্ব করে বলতে পারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ অধ্যাপকদের মধ্যে আলম ভুঁইয়া অন্যতম। কারন তিনি হাজারটা লাইনের ভেতর খ্যাতিমান যে কোন একজন সমাজবিজ্ঞানীর লেখা থেকে পাঁচটা শব্দও চট করে আলাদা করতে পারেন। বলে দিতে পারেন এটা কার থিওরির অংশ বা কার মতবাদ।

শুনেছি দু'একজন শিক্ষক মিশেল ফুকোকে বানান করে ডাকতে গিয়ে " মিশেল/মাইকেল ফুকাল্টও" উচ্চারণ করেন।
সবচে অবাক করা বিষয় হল- একজন চৌর্যবৃত্তি করে আট পাতার থিসিসের পাঁচ পাতাই মিশেল ফুকো থেকে হুবহু মেরে দিল, কিন্তু বাঘা অধ্যাপকদের কেউ টেরও পেলেন না। এটা হতে পারেনা। হয়ত কোন কারনে সংশ্লিষ্টরা বায়াসড বা অন্ধ ছিলেন।

সংবাদ...... 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক এক প্রবন্ধ লেখেন। যা গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’-এর ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। ওই প্রবন্ধের বিরুদ্ধে ‘চৌর্যবৃত্তি’র অভিযোগ এনেছে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস।

শিকাগো প্রেসের অভিযোগ, প্রবন্ধের সিংহভাগ নেওয়া হয়েছে প্রখ্যাত দার্শনিক মিশেল ফুকোর প্রবন্ধ ‘The Subject and Power’ থেকে। ১৯৮২ সালে তা শিকাগো জার্নালে প্রকাশিত হয়। এর প্রকাশক ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস।

অভিযুক্ত দুই শিক্ষক হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান ও অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের (ক্রিমিনোলজি) বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান।

ওই দুই শিক্ষকের লেখা প্রবন্ধটির নাম হচ্ছে, ‘A New dimension of Colonialism and Pop Culture: A case study of the Cultural Imperialism’.

গবেষণায় ‘চৌর্যবৃত্তির’ অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গত মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় এই তদন্ত কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য।

সিন্ডিকেটের এক সদস্য এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই শিক্ষকের প্রবন্ধ আট পৃষ্ঠার। ওই আট পৃষ্ঠার প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠাই মিশেল ফুকোর ওই প্রবন্ধ থেকে হুবহু নেওয়া। সেই হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই শিক্ষকের প্রবন্ধের ৬২ শতাংশই নকল। শিকাগো জার্নালে প্রকাশিত মিশেল ফুকোর ওই প্রবন্ধ ছিল ১০ পৃষ্ঠার।

সিন্ডিকেট সূত্রে জানা যায়, এমন অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার প্রতিবেদন আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।

সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল জানান, দার্শনিক মিশেল ফুকোর লেখা “The Subject and Power” শীর্ষক প্রবন্ধ, প্রকাশ করেছে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস (১৯৮২), থেকে লেখা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা চুরি করে নিজের নামে ছাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ করেছে স্বয়ং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস।

মাকসুদ কামাল জানান, এক লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এই চুরির অভিযোগের কথা জানিয়েছে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। তিনি জানান, শিকাগো জার্নালের সম্পাদক ওই অভিযোগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছে।

শিকাগো জার্নাল জানায়, Critical Inquiry জার্নালের ১৯৮২ সালের অষ্টম ভলিউমের ৪ নম্বর সংখ্যায় মিশেল ফুকোর ওই প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি সামিয়া রহমান বেসরকারি টিভি চ্যানেল নিউজ টুয়েন্টিফোরের ‘হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স’-এর দায়িত্ব পালন করছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সামিয়া রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান এনটিভি অনলাইনকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক রুহুল আমিন, নুসরাত জাহান ও বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির দুটি অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ একজন শিক্ষক উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে রুহুল আমিন ও নুসরাত জাহানের প্রকাশিত প্রবন্ধগুলোর মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়ার অভিযোগ করেন। বদরুজ্জামানের বিরুদ্ধে পিএইচডি গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ করেন নুসরাত জাহান।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমেদ বলেন, ‘ওই পাঁচ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গবেষণা চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ পেয়েছে। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর আমাকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে।’--- খবর এনটিভি অনলাইনের

এমএসএল