বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ো, জীবনের লক্ষ্য কী?


আরিফুল ইসলাম | Published: 2017-10-13 01:57:04 BdST | Updated: 2024-05-12 13:55:09 BdST

একটা মাঝারি সাইজের দোকান, শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত থাকার দরুন দোকানের সামনে গ্লাস লাগানো থাকবে। দোকানটা হবে বইয়ের দোকান। যেহেতু বই সেহেতু দোকান না বলে লাইব্রেরীই বলাটাই শ্রেয়। এখনকার লাইব্রেরী গুলোতে কেবল হার্ড কপি বই পাওয়া যায়। ৪-৫ বছর পর মানুষের চাহিদার পরিবর্তন হবে। মানুষ আস্তে আস্তে ব্যয়বহুল হার্ডকপি বই কেনার চেয়ে পিডিএফ ডাউনলোড করে পড়বে। তখন মানুষ লাইব্রেরীতে গিয়ে যেমন হার্ডকপি চাইবে, তেমনি পিডিএফও চাইবে।

আমার লাইব্রেরীতে একটা ল্যাপটপ থাকবে। ল্যাপটপে লক্ষাধিক পিডিএফ বই থাকবে। যে কেউ পিডিএফ বই ডাউনলোড করতে না পারলে প্যানড্রাইভ নিয়ে আসবে, আমি আমার ল্যাপটপ থেকে চাহিদামতো পিডিএফ বইটি দিয়ে দেবো। আর পিডিএফ বইগুলো দেবো একেবারে বিনামূল্যে।

কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠবো। গ্রীষ্ম হোক কিংবা শীত, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠার পর গোসল করবো। তা ও বাথরুমে না; পুকুরে। একদম ভোরে পুকুরে গোসল করার মধ্যে এক ভৌতিক ভয় কাজ করবে। ভয় ভয় পদক্ষেপে এগুতে থাকবো পুকুরের দিকে। শীত সকালে পুকুরের পানি দেখে ঠান্ডায় গা শিউরে উঠবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে হঠাৎ চোখ বন্ধ করে পুকুরে ঝাঁপ দেবো, ঝুম......

সকালের নাস্তা খেয়ে চলে যাবো আমার বইয়ের দোকানে।যদিও সকালবেলা কেউ বই কিনতে আসবেনা, কিন্ত আমি দোকানে গিয়ে পছন্দমতো একটা বই বের করে পড়া শুরু করবো। আস্তে আস্তে দোকানে যখন পাঠকেরা ভিড় জমাতে শুরু করবে ততক্ষণে বইটির অর্ধেক পড়া শেষ হয়ে যাবে। আমার লাইব্রেরীর সহযোগীও ততক্ষণে চলে আসবে। আমার লাইব্রেরীতে ৩ জন সহযোগী থাকবে। প্রত্যেককেই শিক্ষার্থী হতে হবে।কেউ কলেজে কেউবা স্কুলে পড়বে। অবসর সময়ে একেকবেলা একেকজন এসে লাইব্রেরীতে আমাকে সহযোগীতা করবে।
লাইব্রেরীতে কথা বলা ‘একদম নিষিদ্ধ’! যারা বই কিনতে আসবে তারা একটা চিরকুটে লিখে দিবে, কি বই সে কিনতে চায়। আমার সহযোগী তখন বইটা খুঁজে দেবে।

লাইব্রেরীর একপাশে একটা রিডিং টেবিল থাকবে। সেটাতে মাত্র ৪ টি চেয়ার থাকবে আর একটা টেবিল। সেখানে বসে যে কেউ বই পড়তে পারে, এতে আলাদা কোন ফিস দিতে হবে না। তবে প্রতিদিন সেখানে বসে বই পড়তে হলে আগে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন নিয়ে তখন ঝামেলা পোহাতে হবে, সবাই চাইবে প্রতিদিন বসে ফ্রিতে বই পড়তে। তাই রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতিটা অনলাইনে করবো, যাতে কেউ স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করতে না পারে।
দুপুরে যখন প্রচন্ড ক্ষুধা লাগবে তখন আমার সহধর্মিনী আমার জন্য টিফিন ক্যারিয়ারে রান্না করে আনবে। গরম ভাত, সরষে দিয়ে আলু ভর্তা, আলু ভর্তার উপর কয়েকটা শুকনো মরিচ, এক বাটি ডাল আর দুই পিস রুই মাছ।
মাঝে মাঝে নিজ হাতে খাবো, কখনোবা বই পড়ার ব্যস্ততার দরুন নিজ হাতে খেতে পারবোনা। তখন ও নিজ হাতে আমাকে খাওয়াবে। আমাকে খাওয়ানোর পর টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে ও বাসায় যাবে, লাইব্রেরী থেকে বের হয়ে পরিচিত একটা রিক্সা দেখে তাকে রিক্সায় তুলে দেবো।

বিকেলের দিকে আধ ঘন্টার জন্য লাইব্রেরী থেকে বের হয়ে বাজার করতে বের হবো। মা’কে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করবো, “আজকে কি বাজার করতে হবে?” মোবাইলের নোট প্যাডে বাজারের লিস্ট লিখে রেখে কাঁচাবাজারে ঢুকবো। মরা মাছের উদ্ভট গন্ধে নাড়ি ভূড়ি বের হয়ে আসার উপক্রম হবে। আস্তে আস্তে বাজার করতে যেতে যখন অভ্যস্ত হবো তখন মরা মাছের এই উদ্ভট গন্ধ না শুঁকলে পরে এমন হবে রাতে ঘুম আসবেনা। তখন এই কাঁচাবাজারের গন্ধ শুঁকে বলবো, “আহা,কী অমৃত!”।
আধঘন্টা বাজার করার পর যখন লাইব্রেরী খুলতে যাবো তখন দেখবো লাইব্রেরীর সামনে লম্বা লাইন। সবাই আমাকে দেখে ক্ষেপে গিয়ে বলবে, “কী আরিফ! এসব কি মগের মুল্লুক পাইছো? দু ঘন্টা ধরে লাইব্রেরীর সামনে দাঁড়িয়ে আছি, তোমার কোনো খোঁজ নাই? একটা লাইব্রেরী তুমি ২ ঘন্টা কেমনে বন্ধ রাখতে পারো?”
আমি হাতজোর করে মাফ চেয়ে বলবো, “ভাই আর কখনো লাইব্রেরী বন্ধ করবো না,সামনের মাস থেকে লাইব্রেরী ২৪ ঘন্টা খোলা রাখবো।”
আমার আশ্বাস পেয়ে তারা আমাকে এবারের মতো ছেড়ে দেবে।

রাতে মা আর বউ অনবরত ফোন দিতে থাকবে বাসায় যাবার জন্য। কাস্টমারদের সামাল দিয়ে বাসার দিকে রওয়ানা হবো, কিছু কিছু কাস্টমারদের বলবো, “ভাই কাল আসেন,আজকে বাসায় যেতে হবে।” মন খারাপ করে তারা বাসায় চলে যাবেন, আর আমিও...।

বাসায় ঢুকার পর আমার মেয়ে দৌড়ে এসে আমার কোলে উঠবে। বলবে, “সারাদিন আমাকে ফোন দাও নাই ক্যান?” মেয়ের কথার উত্তর না দিয়ে বলবো, “এই নাও মা। তোমার জন্য এই গল্পের বই আনছি দেখো...”
মেয়ের হাতে গল্পের বই দিয়ে পরিবারের সবাই মিলে রাতে খেতে বসবো।
মা এসে বলবেন, “সারাদিন কি খাইছিস তুই কে জানে! এই নে হা কর।”
এই বলে মা মুখে তুলে খাওয়াবেন। ঐদিকে অন্য মা-মেয়ে আমার মা আমাকে মুখে তুলে খাওয়াচ্ছেন দেখে মুচকি হাসবে!
(ধারাবাহিক কাহিনীমূলক গল্পের প্রথম পর্ব)

লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষার্থী 

এমএসএল