সাতক্ষীরা জেলা সদর থেকে ১০ মাইল দূরে ফিংড়ী ইউনিয়নের জোড়দিয়া শেখপাড়া গ্রাম। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যন্ত হয়ে পড়ে গ্রামটি। তবুও করোনা টিকা নিতে অনীহা গ্রামবাসীর। এই পরিস্থিতিকে পাল্টে দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শেখ শাকিল হোসেন, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শেখ আরাফাত হোসেনসহ অনান্য তরুণরা। গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক বাসিন্দাকে এনেছেন ভ্যাকসিনের আওতায়।
শেখ শাকিল হোসেন জানান, করোনার ভ্যাকসিন সহজলভ্য হলেও ভ্যাকসিনভীতি ও নিবন্ধন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে গ্রামের মানুষদের মধ্যে প্রথমে টিকা নিতে অনীহা ছিল। তরুণদের সঙ্গে নিয়ে গ্রামবাসীকে ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তা ও করোনার ভয়াবহতা বোঝালেও ভ্যাকসিন নিতে কেউই আগ্রহ দেখাননি। এরপর ধর্মীয় প্রতিনিধিদের শরণাপন্ন হয়েছি।
শেখ আরাফাত হোসেন বলেন, মসজিদের ইমাম নামাজের পর মানুষদের টিকা নিতে উৎসাহিত করেন। তখনই বেশ সাড়া পেয়েছি। গ্রামের মানুষ সাধারণত ঈমাম ও ধর্মীয় প্রতিনিধিদের কথা শোনেন। গত তিন সপ্তাহের চেষ্টায় পুরো গ্রামের চিত্র পাল্টে গেছে। গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক মানুষ ভ্যাকসিনের জন্য আবেদন করেছেন। অধিকাংশই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজের আওতায় এসেছেন। বাকিরা এসএমএসের অপেক্ষায় আছেন। এসব মানুষরা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে টিকা নিয়েছেন।
গ্রামের তরুণ শিক্ষার্থী শেখ হাসানুর রহমান, শেখ মোহায়মিনুল ইমন, শেখ মিয়ারাজ হোসেন, শেখ সাকিবুর রহমান, শেখ মাহবুবুল হক, শেখ আজগার আলী, শেখ তৌফিকুজ্জামান, শেখ রোহেল উদ্দীন, জোড়দিয়া গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শেখ মোনায়েম হোসেন, জোড়দিয়া বায়তুল আতিক জামে মসজিদের ঈমাম মাওলানা ফরিদ আহম্মাদ আরারীসহ অনেকেই এ কাজে সহযোগিতা করেছেন।
জোড়দিয়া গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শেখ মোনায়েম হোসেন বলেন, তরুণরা প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। টিকার নিবন্ধন করতে গ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ নিবন্ধন বুথ স্থাপন করেছে। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে প্রচারও করেছে। এ ছাড়া মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবন্ধন করানো, টিকা নিতে উৎসাহিত করাসহ বিভিন্ন কাজ করেছে।
জোড়দিয়া বায়তুল আতিক জামে মসজিদের ঈমাম মাওলানা ফরিদ আহম্মাদ আরারী জানান, প্রথমদিকে মানুষ টিকা নিতে চাইনি। তবে মসজিদে নামাজের আগে খুতবার সময় কোরআন হাদিসের আলোকে আলোচনা করে বোঝানো হয়েছে, সচেতনতামূলক কথা বলা হয়েছে, এতে মুসল্লিরা টিকা নিতে আগ্রহী হয়।
ফিংড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান বলেন, গ্রামের মানুষ প্রথম দিকে টিকা নিতে অনাগ্রহী ছিল। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও স্বীকার করেনি। তবে জোড়দিয়া শেখপাড়ার তরুণদের উদ্যোগে পরিস্থিতি বদলে গেছে। ওই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়েছেন। আবার অনেকেই নেওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন সাফায়াত বলেন, এখনো গ্রামের অধিকাংশ মানুষ করোনার টিকা নিতে অনাগ্রহী। তবে আগের থেকে এখন অনেকটাই আগ্রহ বেড়েছে। কাউকে টিকা নিতে গেলে প্রথমে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এরপর এসএমএসের মাধ্যমে টিকা গ্রহণের সময় ও স্থান জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গ্রামের সচেতন মানুষদের অন্যদের টিকা গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।