সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের আদেশ বাতিলে বিক্ষোভে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


DU Correspondent | Published: 2024-06-09 10:06:15 BdST | Updated: 2024-06-23 08:49:23 BdST

সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের ইস্যুতে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তারা বলেছেন, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করতে হবে, অন্যথায় দেশের প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

রোববার (৯ জুন) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। যা পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন, শ্যাডো, টিএসসি হয়ে রাজু ভাস্কর্যে বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয়।

এদিন মিছিলে শিক্ষার্থীদের ‘চাকরিতে কোটা, মানি না মানবো না’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়/ স্বাধীনতার বাংলায়, কোটার ঠাই নাই’, ‘হাইকোর্টের রায়, মানি না মানবো না’, ‘সংবিধানের মূলকথা সুযোগের সমতা, মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা সুযোগের সমতা’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘সারা বাংলা খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘একাত্তরের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত ছিল ক্যাম্পাস।

শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা সংবিধানের বাইরে যেতে পারি না। সংবিধান চাকরিতে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করেছে। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা প্রকৃত মেধাবীদের হাতে দেশকে তুলে দিন, তারাই দেশের উন্নতির পথ খুঁজে নেবে। ২০১৮ তে আমাদের ছাত্র ভাইয়েরা বুকের রক্ত দিয়ে কোটা প্রথা নামক অভিশাপ থেকে মুক্ত করেছিল। সুযোগের সমতা নিশ্চিত না করলে ছাত্ররা রাজপথের মাটিকে আঁকড়ে ধরবে।

ঢাবি শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার বলেন, আমি নারী হয়ে বলছি- আমি নারী কোটা চাই না। আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই। মেধাবীরা যোগ্যতার বলে চাকরি পাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উপেক্ষা করে যে রায় দিয়েছে, তা আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলাম।

বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের শিক্ষার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রিহাম বলেন, আমরা হাইকোর্টের রায়কে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন কোটা প্রথা বিদ্যমান রাখার জন্য। কিন্তু আমরা বলতে চাই উনি কি সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষামন্ত্রী নাকি ২ শতাংশ শিক্ষার্থীর মন্ত্রী?

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত রশিদ বলেন, আমাদের সংবিধানে সরকারি চাকরিতে সমতা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আজকে কোটার মাধ্যমে মেধাবীদের অবহেলা করা হচ্ছে। এই ছাত্রসমাজ কোনো দাবি আদায়ে যতবারই রাস্তায় নেমেছে সেই দাবি আদায় করে রাজপথ ছেড়েছে। আজকেও আমরা কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছি। যদি এই বৈষম্যমূলক কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিল না করা হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা এই রাজপথ ছাড়বে না। প্রয়োজনে রক্ত ঝরবে, রাজপথে লাশ পড়বে, তবুও আমরা এই দাবি আদায় করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।

এদিন বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীদের একটি দল হাইকোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে একটি লিখিত স্মারকলিপি দিতে যান।

প্রসঙ্গত, সরকারি নিয়োগের দুই শ্রেণিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল, সেটি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত। ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। তবে ওইবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক কোটা বিরোধী আন্দোলন হলে নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত চাকরির ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা পুরোপুরি বাতিল করে দেয় সরকার।

তার আগে এসব পদে চালু থাকা কোটার ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তাদের নাতি-নাতনিদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর বাইরে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ আসন থাকতো। কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট করা রায়ের প্রেক্ষিতে ক্ষোভে ফুঁসছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।