'বেঁচে থাকো বন্ধু, টিকে থাকাই সফলতা, সচল থাকাই স্বার্থকতা'


বেল্লাল হোসাইন: | Published: 2018-12-19 21:56:54 BdST | Updated: 2024-06-17 21:10:20 BdST

বেল্লাল হোসাইন: ভয় একটি মানসিক অবস্থা,আত্মবিশ্বাসও তাই। আপনি যখন ভয় পেয়ে নিজের প্রতি আস্থাহীন হয়ে পরেন তখনই আপনি বাস্তবিক অর্থে ব্যর্থ হয়ে যান না। আবার যখন খুব আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন, তখন ততক্ষনাৎ আপনি বিজয়ীর তকমা পান না। এতদ্বসত্ত্বেও, আপনার মানসিক অবস্থাই আপনার ভবিষ্যত সম্পর্কে রাফ করে হলেও একটা ম্যাপ তৈরি করে, যা আপনাকে বেশিরভাগ সময় ড্রাইভ করে!

অনেক সময় নানা ইস্যুতে আমরা নার্ভাস ফিল করি,ভৌতিক সিনেমা বা সেনসেশনাল কিছু দেখে দমবন্ধ উত্তেজনা অনুভব করি,যদিও আমরা সচেতন মনে জানি যে এসব সত্যি নয়। কিন্তু সাময়িককালে আমরা অবচেতনে নিজেকে ভয়ে লুকিয়ে ফেলি স্রেফ মানসিক অবস্থার কারনে। তাই মনকে ইতিবাচক,কর্মমুখী রাখতে বিলিফ সিস্টেমের উপর কাজ করতে হয়।

ব্যর্থতার ভয় ব্যর্থতার দিকেই ধাবিত করে। আত্মবিশ্বাস অর্জনের পথে ধাবিত করে। সকল আত্মবিশ্বাসী লোকেরাই যে সফল এমন নয়। আসলে সব ক্ষেত্রে সব সময় সফল হওয়ারটা বাস্তোবোচিত নয়। সব সময় বিজয়ী না হলেও আত্মবিশ্বাসী লোকেদের চেষ্টার সময়টা ফলপ্রসূ ও আনন্দদায়ক হয়।

সফল ব্যক্তিত্ত্বেরা লোকেদের উদ্দীপ্ত করতে সব সময় তাই আত্মবিশ্বাসের প্রতি জোর দিয়েছেন। কিন্তু চাইলেই কি আত্মবিশ্বাসী হওয়া যায়? তাহলে শুধু একটু মনের চাওয়াটা আমরা কেনো চাই না? বাস্তবতা হলো আত্মবিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসী হতে হয়। এটা এমনি এমনি হয় না।আবার অযৌক্তিক, অবাস্তব আত্মবিশ্বাস সামনে নয় বরং পিছনে টানে।

তাহলে কীভাবে আত্মবিশ্বাসী হওয়া যায়? কিছু উপাদান আছে যা আপনি নিজের মধ্যে লালন করলে নিজের প্রতি আস্থা বাড়বে।

* টার্গেট অর্জনের ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা।
( চল্লিশ কেজি ওজনের রোগা শরীর নিয়ে ১২০ কেজির ভারোত্তোলন করতে গেলে হার ভেঙে যাবে।)
* ন্যূনতম মেধা
* নিয়মিত শ্রম দান।
* ইতিবাচক মানসিকতা
* ভাগ্যকে মেনে নেয়ার ক্ষমতা ( ঈশ্বরের ইশারাকে বিনা দ্বিধায় মেনে নেয়া)
* বিকল্প পরিকল্পনা
* নিজের ছোট ছোট অর্জনগুলোকে রোমন্থন করা।
* নো কমপায়ার,নো কমপ্লেইন
* অন্যের অর্জনকে স্বীকৃতি দিতে শেখা ইত্যাদি।
বাস্তবে দেখবেন সব মেধাবী, ভালো মানুষেরাই সবাই সফল হয় না। আবার সব পঁচা লোকেরা ব্যর্থ হয় না।
সফলতা ব্যর্থতার সাপলুডু খেলায় ভাগ্য একটা পাকা খেলোয়াড়। সে নিজে কোনো দলকে রিপ্রেজেন্ট না করলেও প্রায়শই কারো পক্ষে ঝুলে পরে! আর তখন সবাইকে অবাক করে পিছিয়ে থাকা কেউ সামনে চলে যায়।
একবার এক বুজুর্গকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে ভাগ্য কী?
বুজুর্গ তাকে বললেন যে," এক পায়ে দাড়াও। সে দাড়ালো। এবার অন্য পা টাকেও উচু করে দাড়াতে বললেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি বললেন, অসম্ভব। এটা আমার সাধ্যের বাহিরে। তখন বুজুর্গ বললেন, এটাই ভাগ্য। যেখানে তোমার কিছুই করার নেই।"
ঐতিহাসিক সত্য, ভাগ্যবানেরা ভাগ্যকে অস্বীকার করে, আর অভাগারা ভাগ্যকে দোষারোপ করে।
কিন্তু এই মার্জিনটা থেকেই যায়!
শ্রম, মেধা আর ভাগ্যের সুষম সমন্বয় না হলে কেউ সফল হয় না।
তাই কেবল সফল হওয়ার জন্য মরিয়া হলে ব্যর্থতাকে মানতে কষ্ট হয়। সত্য হলো, আমরা বেশিরভাগ মানুষই নিজের চাওয়াকে চূড়ান্ত ভাবে স্পর্শ করতে ব্যর্থ হই। কারণ আমাদের চাওয়াগুলো অনেকটাই কমন!
মেধা, শ্রমের উপর ভর করে ভাগ্যকে কাছে ডাকতে হয়। ভাগ্য সাড়া দিতেও পারে,নাও পারে।
কিন্তু তাই বলে থেমে যাওয়া উচিৎ না। ইদানীং চাকুরী না পাওয়া, প্রেমে ব্যর্থতা, সামান্য অপমান সইতে না পারা ইত্যাদি ঠুনকো কারণে নিজের অমূল্য জীবনকে অকাতরে খরচের খাতায় লিখে দিচ্ছে বন্ধু,সহপাঠী,কলিগরা! সাধ্যমতো পরিশ্রম করে ভাগ্যকে মেনে নিলে হতাশার মাত্রা অনেক কমে যাবে। যেকোন পরিস্থিতিই মনোবলের সাথে মোকাবিলা করার সাহস অর্জন করতে হবে। শুধু একটি চাকুরী বা পছন্দের মানুষের সাথে সংসার পাতানোই সুখের পরম উৎস নয়। চাকুরীতে সফল,প্রেম করে বিয়ে করা চেনা লোকটির দিকে তাকালে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে।
নিজের উপর অর্পিত দায়টুকু আদায় করে নিলে দিন শেষে নিজের কাছে ক্লিয়ার থাকা যায়।
খুশি মনে যেকোন ফলাফল মেনে নেয়ার মানসিকতা শুধু ব্যক্তিজীবনে নয়, জাতীয় জীবনে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে।
অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ক্লাসের ব্যাকবেঞ্চাররা পরবর্তীতে আর্থিকভাবে বেশি সফল হয়েছেন। যার ফলে তারা সমাজেও নেতৃস্থানীয় হয়েছেন।
নোবেল পুরস্কার জয়ী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন, " সফলতাই সব নয়,ব্যর্থতাই শেষ নয়। সব পরিস্থিতিতে নিজেকে সচল রাখার সামর্থ্যটাই দিন শেষে তোমাকে মূল্যায়ন করবে।"
তাই ভয় নাই, জীবন নিয়ে সামনে আগান।

লেখকঃ শিক্ষানবিস আইনজীবী ও সমাজকর্মী।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ইমেইলঃ [email protected]