বিসিএস নাকি উদ্যোক্তা, কোনটা মেধার কাজ?


হিলারিয়াস হিমেল | Published: 2017-10-22 07:01:12 BdST | Updated: 2024-05-14 16:41:01 BdST

যারা বিসিএস নামক চাকরিটা পাওয়ার ধারে কাছে চলে গেছেন তাদের অভিনন্দন।যারা প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়েছেন তাদেরকে ডাবল অভিনন্দন।কারন,গতানুগতিক কিছু পলিসি ইমপ্লিম্যান্ট না করে হয়তো আপনার নিজস্ব পলিসি ইমপ্লিম্যান্ট করার গ্রেট কোন অপশন আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।তাই বলছি ,সাহস হারাবেন না। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা উদ্যোক্তা সবুর খান বিসিএস অফিসার নন।কিন্তু তার নাম উচ্ছ্বারণ করতে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় সহ অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গর্ববোধ করে।কারন,আজ তিনি অসংখ্য তরুনের পথের দিশা দিতে পেরেছেন।

বার্ড এর প্রতিষ্ঠাতা আবদুল হামিদ খান তৎকালীন আইসিএস অফিসার ছিলেন।যাকে আমরা বর্তমানে বিসিএস ক্যাডার বলি।তাকে কিন্তু আইসিএস অফিসার হিসেবে মানুষ খুব একটা জানেনা।কিন্তু তার যতটুকু খ্যাতি তার সবটুকু্ই মানবতার কল্যানে তার যে উদ্যোগ “বার্ড” এর প্রতিষ্ঠাত হিসেবে।তাকে নিয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হয়।তাকে এখন অসংখ্য মানুষ আইডল হিসেবে অনুস্বরণ করে।

ড.ইউনুসকে আপনি যত গালাগালি করেন,যত বেশি সূদখোর বলে লাঞ্চিত করেন ড.ইউনুস কিন্ত বাংলাদেশের আইকন হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত।তার নামের সাথে বাংলাদেশ শব্দটা জড়িয়ে আছে।ভাবুন তো একবার,ড.ইউনুস কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বা চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে এই সম্মানের জায়গায় গিয়েছেন ?না,একদম না।কত ছাত্র শিক্ষকই তো রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।কই তারা তো পায়না।তাহলে কি সে কর্ম যার জন্য ড.ইউনুস নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন?

স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা রেখে অজোপাঁড়া জুবলী গ্রামের নারীদেরকে নিয়ে তিনি যে বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন তা হয়তো আমাদের মাথা মুন্ডুতেও ঢুকবেনা।ড.ইউনুস ছোট্র গ্রামে একটা বিশ্বের রুপ রেখা আঁকতে পেরেছিলেন বলে আজকে তিনি সাধারন কোন ইউনুস নন।তিনি এখন সারা বিশ্বের কাছে স্যোসাল বিজনেস এর পিতা হিসেবে পরিচিত। সবাই অনিশ্চিত অথচ অনেক বড় নিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে পারেনা বলে বিশ্বে উদ্যোক্তা হওয়ার সংখ্যা খুবই কম।

ফজলে হোসেন আবেদ স্যার খুব দারিদ্র্যপীড়িত একটি দেশের ক্রান্তিকাল মুহুর্তে নিশ্চিত চাকরির সুযোগ থাকলেও ব্রাক এর কর্মযাত্রা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছিলেন।যুদ্ধে বিপরযস্ত একটি দেশকে এগিয়ে নিতে তিনি ও তার কর্মী বাহিনি গ্রামে গ্রামে চষে বেড়িয়েছেন।সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।স্বপ্ন হারাকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। ব্রাক এর স্বাস্থ সেবার সেই মায়া আপার কথা আমরা কে না জানি।মায়া আপাকে নিয়ে কত তিরস্কার করা হতো।কিন্তু সেই মায়া আপা এখন স্বাস্থ্য সেবার সিম্বল। সেই ব্রাক এখন বিশ্বের এক নাম্বার এনজিও হিসেবে বাংলাদেশের মাথা উচু করে রেখেছে।ভাবতে পারেন এতগুলো ধনী রাষ্ট্র থাকতে ছোট্র এই দেশের একটি প্রতিষ্ঠান বিশ্বে এক নাম্বার ?

হুমায়ুন আহমেদ স্যারকে আপনারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে বেশি চিনেন নাকি সাহিত্যিক হিসেবে বেশি চিনেন ?কত সাবলীল ভাবে তিনি তার স্বপ্নকে চিনতে পেরেছেন বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছেন।
কি দু:সাহস থাকলে পৃথীবির বিখ্যাত লোকগুলো হার্ভার্ড,অক্সফোর্ড,আমাদের ঢাবি ,বুয়েট সহ বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফার পায়ে ঠেলে নিজের একটা স্বপ্ন সাজাতে একদম রিক্ত হাতে স্বপ্ন রাজ্যে ঝাপিয়ে পড়েছেন ?এক মনীষী বলেছেন ”যদি তোমার একটা স্বপ্ন না থাকে তবে তোমাকে অন্য কেউ ভাড়া করে নিয়ে যাবে তার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য “।আসলেই কি তাই হচ্ছেনা ?আমাদের দেশের বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা পড়েন ও পড়ান তারা শিক্ষা বলতে বুঝেন খুব উচ্চ মানের একটা সিজিপিএ ধারী সার্টিফিকেট।যাদের সিজিপিএ ভাল তারা ভাল ছাত্র,বাকি সব গর্দভ।আবার যারা ভাল রেজাল্ট করেন তারা অন্যের অধীনে মোটা অংকের বেতনের একটা চাকরি করাটাই জীবনের সফলতা ভাবেন।হোক সেটা বিসিএস,ব্যাংক বা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানী।কিন্তু এরাই আবার বড় বড় মনীষীদের স্বপ্ন নিয়ে বলা কথাগুলোকে বিভিন্ন সভা সেমিনারে উচ্চারন করেন অন্যকে অনুপ্রানিত করার জন্য।এক্ষেত্রে অনেকে বলেন “সবােই যদি উদ্যোক্তা হয় তবে কাজ করবে কে ?।তার মানে এরা যত বড় শিক্ষিতই হোকনা কেন মানসিক দাসত্ব থেকে এরা বেরিয়ে আসতে পারেনি।
তাই কোন একজনের ভাল একটা চাকরি পাওয়া দেখে হতাশ হবেন না।অন্যের গায়ের রং দেখে নিজেকে ঘৃণা করবেননা।বরং অন্যকে দেখে ঈর্ষান্বিত হওয়ার আগে একবার নিজের ভিতরের স্বপ্নটার কথা ভাবুন।খুব ভাল করে ভাবুন আপনার মন কি চায় ?আপনার সক্ষমতার জায়গা কোথায় ?একবার নিজের যোগ্যতার খবরটা সিভিতে লিখার আগে নিজে নিজে ফাইন্ড আউট করে নিন।তারপর সেই যোগ্যতা আর স্বপ্নকে শানিত করুন।লেগে থাকুন।ধৈর্যয় হারাবেন না।দেখবেন সফলতা আপনা র হাতের মুঠোয় এসে ধরা দিবে।কেউ চাকরির পরিক্ষায় ভাল করেছে ,তা দেখে আপনি কাকের মত তার পিছনে ছুটবেননা প্লিজ।একবার আপনার সক্ষমতার দিকটা আবিস্কার করুন এবং তাকে সম্বল করে কাজে বেরিয়ে যান।দেখবেন,একদিন আপনিই হবেন এই দেশের শত তরুনের স্বপ্নের কান্ডারী।

এই প্রজম্মকে সৃজণশীল প্রশ্নপত্র ধরিয়ে দিয়ে যে হারে প্রশ্ন ফাঁস করছি আমরা তার চেয়ে আগের গাইড নোট ভিত্তিক পড়াশুনাটাই তো ঢের ভাল ছিলো।যেহেতু জিপিএ বা সিজিপিএ মেধার একমাত্র স্বাক্ষী তাই শিক্ষার্থীদেরকে অযথা সময় নষ্ট না করে যে কোন উপায়ে তার মেধার প্রমাণ করাতে আমি কোন অন্যায় দেখছিনা।বরং অন্যায় করছে তারা যারা এই প্রজম্মকে সৃজনশীল পাঠ্য পুস্তক হাতে দিয়ে আবার জোর করে মুখস্ত বিদ্যা নির্ভর সব পরিক্ষার মুখোমুখি করছে ,অন্যায় করছে তারা যারা স্বাধীনতার এত বছর পরও জাতিকে একটা সুন্দর ও সাবলীল মান সম্মত শিক্ষা নীতি দিতে পারেনি।অন্যায় করছে তারা যারা একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কতজন বিসিএস ক্যাডার হলো তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানদন্ড ঠিক করছেন।সৃজনশীল বই ছাপানোর আগে এই প্রজম্মটাকে একবার সৃজনশীল ভাবে ভাবতে দিন।কাজ করতে দিন।দেখবেন সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ শত শত বছর এগিয়ে যাবে।তরুন প্রজম্মও হতাশা আর বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে

লেখক:
হিলারিয়াস হিমেল
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

এমএসএল/ ২২ অক্টোবর ২০১৭