বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে প্রশ্নবিদ্ধ প্রশ্ন ফাঁস


মোহাম্মদ মজিবুর রহমান | Published: 2017-10-23 05:02:33 BdST | Updated: 2024-05-14 05:54:37 BdST

সে অনেক কাল আগেকার কথা; তখন লেখাপড়া জানা 'শিক্ষিতরা' কোন কথা বললে গ্রামের সহজসরল মানুষ 'বেদবাক্যে'র ন্যায় তা বিশ্বাস করতো। কিছুকাল পর এই সহজসরল মানুষগুলো উপলব্ধি করলো নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে এই 'শিক্ষিত' শ্রেণি মিথ্যা বলছে। ফলে তাদের নিরঙ্কুশ বিশ্বাসে ফাটল ধরল।

ছাপার অক্ষরের আবিষ্কার হলো। মানুষজন যেকোনো ছাপার অক্ষরে লেখা বিশ্বাস করতে শুরু করলো। এ বিশ্বাস ভাংতেও খুব বেশি সময় লাগেনি।

প্রথমে প্রিন্ট এনং পরবর্তীকালে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার আবির্ভাব ঘটলো। এতেও কিছুদিন মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বিদ্যমান ছিলো। মিডিয়ার প্রতি নিরঙ্কুশ মোহ ঘুচতেও খুব একটা বেশি সময় লাগেনি।

মানুষ অবাক হয়ে দেখলো, কোন কোন মিডিয়া গণ মানুষের স্বার্থ উপেক্ষা করে বিশেষ কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, জাতি, রাষ্ট্র, ধর্ম, মতবাদ ও ব্যবসায়িক এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিয়োজিত।

বেশ কয়েকটি মিডিয়া বেশ জোরালো ভাবেই দাবী করছে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ঘ' ইউনিট এর প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। দাবীর সপক্ষে যুক্তি দিচ্ছে পরীক্ষার আগের রাতেই তাদের হাতে প্রশ্ন এসেছে এবং তা অনুষ্ঠিত প্রশ্নের সাথে মিলেছে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগছে, তারা কি তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পূর্বেই অবহিত করেছেন? কিংবা থানায় কোনরূপ জিডি করেছিলেন? যদি তা হতো এবং তাদের প্রাপ্ত প্রশ্নের সাথে অনুষ্ঠিত প্রশ্ন মিলে যেতো তাহলে তা হতো অকাট্য প্রমাণ। পরীক্ষা শেষে প্রশ্ন ফাঁসের দাবি দুর্বল দাবি। এখন কেউ হয়তো বলবেন, এটা মিডিয়ার কাজ নয়। শুধু সুযোগসন্ধানী সংবাদ পরিবেশনই মিডিয়ার কাজ নয়। মিডিয়ার 'সামাজিক দায়বদ্ধতা' আধুনিক মিডিয়া নৈতিকতারই অবিচ্ছেদ্য অংশ। একটা অপরাধ হচ্ছে জেনেও চুপচাপ থাকা পক্ষান্তরে অপরাধটি সংগঠনে সহায়তার নামান্তর।

যেহেতু এবার প্রশ্ন ফাঁসের দাবীটি বেশ কয়েকটি মিডিয়ায় জোরালো ভাবেই উচ্চারিত হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথারীতি কিংবা তড়িঘড়ি করে ফল প্রকাশ না করে বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে [প্রয়োজনে কিছুটা বিলম্বে] সিদ্ধান্তগ্রহণ করে ফলাফল প্রকাশ করলে সেই ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধতা হতে মুক্তি পেতো এবং একইসাথে বৃদ্ধি পেতো আস্থা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।

লেখকঃ সহযোগী অধ্যাপক

ইন্সটিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

লেখাটি তার ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া

এমএসএল