প্রথম আলোর সম্পাদকীয়

তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2017-11-08 17:36:52 BdST | Updated: 2024-05-13 11:55:57 BdST

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের সহিংসতাই ছিল একসময় দুশ্চিন্তার বিষয়। এর সমাধানে আমরা ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা উচিত কি উচিত নয়, তা নিয়ে একটা দীর্ঘ সময় বিতর্ক করেছি। আমরা কখনো ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা নয়, দলের লেজুড়বৃত্তিমুক্ত সুস্থ রাজনীতিসচেতন ছাত্র আন্দোলনের উত্থান আশা করেছি। কোনো দলের ‘অঙ্গ’ পরিচয় না দিয়ে ছাত্র সংসদের নিয়মিত নির্বাচন চেয়েছি। কিন্তু সরকারগুলো ধারাবাহিকভাবে আমাদের তথা আমজনতার আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করেছে। উপরন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র পদ্ধতিগতভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে স্তব্ধ করে দিয়ে শিক্ষকদের একটি বড় অংশকে ধীরে ধীরে দলদূষণের অসহায় শিকারে পরিণত করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রাজনৈতিক অধিকার অনুশীলন সারা বিশ্বে স্বীকৃত। এর একটি অবয়ব বিশ্বজুড়ে অধ্যাপকদের চিন্তাচেতনার মধ্য দিয়ে পরিষ্কারভাবে মূর্ত। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের কোনো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দলাদলি এখন হিংসাশ্রয়ী রূপ নিয়েছে এবং অতীতের ক্যাম্পাস সহিংসতাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। কিছু ঘটনায় মনে হয়, নিয়োগবাণিজ্য, স্বজনপ্রীতির মতো বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক সমাজের একটি অংশ দলের লেজুড়বৃত্তিতে এখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছাত্রদের টেক্কা দিচ্ছে।

খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মুহূর্তে সরকার-সমর্থক দুই দলের হাতাহাতি ও কথিতমতে প্রক্টরকে শারীরিকভাবে আক্রমণের প্রতিবাদে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন চলেছে। কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগবাণিজ্য ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তার আশু তদন্তের উদ্যোগহীনতার মধ্যে একদল ছাত্র দুঃখজনকভাবে তাঁর ওপর হামলা চালিয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার সভা ভেস্তে গেছে। তাঁর পূর্বসূরি যিনি উপাচার্য ছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল, কিন্তু তারও কোনো সুষ্ঠু তদন্তের নজির নেই। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। সে কারণেই তিনি এখন তাঁর দপ্তরে যেতে পারছেন না। এর ফল হলো প্রথম বর্ষের একটি ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

উল্লেখিত তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগ অভিন্ন। আমরা স্মরণ করতে পারি, আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্ররা যখন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মারামারি করেছেন, সেই দিনগুলোতেও কেউ শিক্ষক নিয়োগ ও ভর্তির মতো বিষয়ে ব্যাপকভিত্তিক দুর্নীতি কল্পনাও করেননি।
আমরা মনে করি, দুর্নীতি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষক সংগঠনগুলোর লেজুড়বৃত্তিকে অসদাচরণ গণ্য করার মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় দলীয় নেতা-কর্মী ও তথাকথিত দলসমর্থক শিক্ষকদের ব্যবধান ঘুচে যাবে, যা শিক্ষাঙ্গনের বিপর্যয় এনে দিতে পারে।

প্রথম আলোর সম্পাদকীয়

এমএসএল/০৮ নভেম্বর ২০১৭