রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রতি সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে হল প্রাধ্যক্ষের স্বাক্ষর নিতে হয়। তবে এই স্বাক্ষরের আগে শিক্ষার্থী প্রতি গুণতে হয় ৫০ টাকা। ব্যাংকে টাকা জমার রশিদ না দেখালে মেলে না স্বাক্ষর।
এই টাকা কেন নেওয়া হয়, তার সুনির্দিষ্ট কারণ জানেন না শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক জয়ন্তি রাণী বসাকের দাবি, হলের উন্নয়ন ফি হিসেবে এই টাকা নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৮ আগস্ট প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আলোচনা সভায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের সব বর্ষের ফরম পূরণ ও মান উন্নয়ন পরীক্ষার জন্য ৫০ টাকা ফি আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুুক আমীর আলী হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, এই ফির টাকা আগে নেওয়া হতো না। তবে এখন হলের অফিস থেকে বলা হচ্ছে, ৫০ টাকা ফি জমা দিয়ে রশিদ নিয়ে আসেন। নয়তো প্রাধ্যক্ষ স্বাক্ষর করবেন না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তো প্রতি বছর হলের জন্য বাজেট দেয়। তবে কেন নতুন করে কথিত এই উন্নয়ন ফি নেওয়া হচ্ছে? আগে তো যা বাজেট দিত তাতেই হলের সব কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে হয়ে যেত।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী সজিব আহমেদ বলেন, ‘দেশ এখন ডিজিটাল হয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম পূরণে এখনো প্রাচীন আমলের প্রক্রিয়া চলমান। একটা স্বাক্ষরের জন্য আমাদের বিভাগ, হল ও ব্যাংকে ছোটাছুটি করতে হয়। এছাড়া হলে গেলে বেশিরভাগ সময়ই স্বাক্ষরের জন্য শিক্ষক পাওয়া যায় না। তখন ফরম রেখে যাওয়ার জন্য বলা হয়। পরের দিন এসে সেই ফরম সংগ্রহ করে আবার ব্যাংকে গিয়ে ফরম পূরণের টাকা জমা দিতে হয়।’ এ ধরনের ভোগান্তি কমাতে অনলাইনে সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
রাবি শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি শাকিল আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেন এই টাকা নেওয়া হচ্ছে, তা স্পষ্ট না করেই প্রভোস্ট কাউন্সিল এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হল-প্রশাসন শিক্ষার্থীদের যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা তা দেয় না। বরং তাদের ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন ফি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক ও রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জয়ন্তি রাণী বসাক বলেন, ‘স্বাক্ষরের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয় না। এই স্বাক্ষর ছাড়াও প্রভোস্টকে একজন শিক্ষার্থীর জন্য অনেক স্বাক্ষর করতে হয়। যদি স্বাক্ষরের জন্য টাকা নেওয়া হতো তাহলে প্রতিটি স্বাক্ষরেই ৫০ টাকা নেওয়া হতো।’
এই টাকা নেওয়ার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে হলের ডাইনিংসহ বেশ কিছু খাতে ভর্তুকি দেওয়া হতো। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সেসব খাতে ভর্তুকি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এ জন্যে হলের উন্নয়নকল্পে ২০২২ সালে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের এক মিটিংয়ে এই ফির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই ফি হলের বিবিধ ফান্ডে জমা থাকে এবং তা হলের শিক্ষার্থীদের যাবতীয় উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়।’