পুলিশ আইন লঙ্ঘন করে ছাত্রদের গুলি করেছে: রাবি ছাত্র উপদেষ্টা


RU Correspondent | Published: 2023-03-12 15:56:50 BdST | Updated: 2024-04-25 13:19:22 BdST

পুলিশ আইন লঙ্ঘন করে ছাত্রদের ওপর গুলি বর্ষণ করেছে বলে দাবি করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক তারেক নূর।

তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের ওপর কোনোভাবে গুলি চালাত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। পুলিশ কোনো ধরনের অনুমতি না নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছুড়েছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রবিধান লঙ্ঘন করেছে। এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।

রাবি ছাত্র উপদেষ্টা বলেন, আমাদের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত। আমরা এখানকার (রামেক) চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, এখানেই তাদের চিকিৎসা হবে। যদি উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হয় আমরা তাদের ঢাকায় নিয়ে যেতে প্রস্তুত আছি। এখন ছাত্রদের চিকিৎসা দেওয়াটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।

তবে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, ছাত্রদের ওপর কোনো ধরনের গুলি ছোড়া হয়নি। উভয়পক্ষকে শান্ত করতে কেবল টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। তাই কোনো মামলা রেকর্ড হয়নি।

এর আগে শনিবার (১১ মার্চ) রাতে রাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ থামাতে দফায় দফায় রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও কাঁদানেগ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের মধ্যে গুরুতর এক শিক্ষার্থীকে রামেকের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্যমতে, সংঘর্ষে রাবির অন্তত ৫০ শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এছাড়া পুলিশ ও অন্যরা মিলে মোট ৮৪ জন ভর্তি আছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রামেক হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-২০১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান মিহাদ (২৩)। তার পুরো শরীরজুড়েই বুলেটের চিহ্ন।

মিহাদ বলেন, আমি রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিনোদপুর গেট এলাকায় অবস্থান করছিলাম। এসময় ক্যাম্পাসের ভেতরে হঠাৎ করে গুলি করে পুলিশ। গুলি লেগে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে বন্ধুরা উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে পুরো শরীরজুড়েই বুলেটের চিহ্ন আছে। ডাক্তার ওষুধ ও স্যালাইন দিয়েছে। কিছুটা ভালো লাগছে।

মিহাদের পাশের বেডেই চিকিৎসা নিচ্ছেন আশিক মাহমুদ।। তিনি বলেন, হঠাৎ পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকে গুলি চালায়। আমার শরীরে অন্তত ৩০টি বুলেটের চিহ্ন আছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চক্ষু ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন আইন বিভাগের তিন শিক্ষার্থী। তাদের সবার চোখে রাবার বুলেট প্রবেশ করেছে। সবার চোখে ব্যান্ডেজ দিয়ে রাখা হয়েছে। তবে পরিবারের উৎকণ্ঠার কথা কথা ভেবে নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি তারা।

তাদের একজন বলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলি করে পুলিশ। এতে করে আমাদের চোখে গুলি লেগেছে। এখন চোখ খুব ব্যথা করছে। কথাও ঠিকমতো বলতে পারছি না। ডাক্তার বলেছে, সকালে আমাদের পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা নেবে।

এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, রাবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ৮৪ জন ভর্তি আছেন। তাদের অধিকাংশ রাবি শিক্ষার্থী। এর পাশাপাশি পুলিশ ও অন্য সাধারণ জনগণও আছে। তাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে।

তিনি বলেন, রাবির সাত শিক্ষার্থীর অবস্থা কিছুটা গুরুতর। তাদের শরীরে বুলেটের চিহ্ন আছে। বিশেষ করে তিন শিক্ষার্থীর চোখে বুলেট লেগেছে। এক শিক্ষার্থীর মাথায় বুলেট লেগেছে তাকে আইসিইউতে ভর্তি রাখা হয়েছে। অন্যদের স্বাভাবিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে সকালে চিকিৎসক এসে কারও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন কী না সেটি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

শনিবার বগুড়া থেকে ‘মোহাম্মদ’ নামের একটি বাসে রাজশাহী যাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী। বাসের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে চালক শরিফুল ও তার সহযোগী রিপনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় ওই শিক্ষার্থীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিনোদপুর বাজারে বাস থেকে নামার সময় তাদের আবারও কথা কাটাকাটি হয়। এসময় বিনোদপুর বাজারের একজন ব্যবসায়ী বাসচালকের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। তখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাতাহাতি হয় তার।

খবর পেয়ে সেখানে যান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। এসময় ব্যবসায়ীরা তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। ধাওয়া দিয়ে তাকে ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতেই বড় হয়ে যায় ঘটনাটি। পরে দফায় দফায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও রাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে।